#বাংলাদেশে ধর্মের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করাই তাদের কাজ: হাফিজুর রহমান আলম। #সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা: অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। #এদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে: অঞ্জন রায়।
আজকের যে সমস্যা এটা কিন্তু কোনো নতুন সমস্যা নয়, এটা অনেক পুরাতন সমস্যা। বাংলাদেশ সৃষ্টির শুরু থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ধর্মের নামে যে রাজনীতি তারা করছে সেটা অবৈধ যা আমাদের কোনো ধর্মেই নেই, কিন্তু তারা এটা ধর্মের নামে চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের সবখানে অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারা তা করতে পেরেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যারা জাতির পিতার ভাস্কর্যে আঘাত করে তারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বিশ্বাস করে না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২৯৭তম পর্বে শুক্রবার (২ এপ্রিল) আলোচক হিসাবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা হাফিজুর রহমান আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, গণমাধ্যম কর্মী অঞ্জন রায়। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস।
হাফিজুর রহমান আলম বলেন, আজকের যে সমস্যা এটা কিন্তু কোনো নতুন সমস্যা নয়, এটা অনেক পুরাতন সমস্যা। বাংলাদেশ সৃষ্টির শুরু থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ধর্মের নামে যে রাজনীতি তারা করছে সেটা অবৈধ যা আমাদের কোনো ধর্মেই নেই, কিন্তু তারা এটা ধর্মের নামে চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্ম একটা আবেগের ব্যাপার। এই আবেগটাকে কেন্দ্র করে এই হেফাজত সংগঠন শুরু থেকেই তাদের তাণ্ডব খেলা খেলে যাচ্ছে। ওরা ধর্মের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করছে এবং এটাই তাদের কাজ। একসময় তারা বলতো যে, পাকিস্তানের সৃষ্টিই হয়েছে ইসলামের জন্য। ইসলামের রক্ষার জন্য। পাকিস্তানের বিরোধিতা করা মানেই ধর্মের বিরোধিতা করা, পাকিস্তান সারা মুসলমানের কাবাঘর! এই কথা গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ইসলামের কোথাও কিন্তু এর কোন উল্লেখ নেই। স্বাধীনতার সময় মানুষ এই সম্বন্ধে জানে না বলে তাদের এই কথা সহজে বিশ্বাস করছে। তাদের মনগড়া ফতুয়া দিয়েই এইসব করেছে এখনও করে যাচ্ছে। তথাকথিত কিছু ইসলামি দল এবং তাদের সহযোগী অন্যরা ইসলামকে এমনভাবে কালিমাযুক্ত করেছে, যেন এটা এক অসভ্য অশালীন, বর্বর ও চরমপন্থি, বিদ্রোহী ও বিদ্বেষপরায়ণ, মারমুখী এক ধর্ম। বাঙালি জাতি তাদের জাতির পিতা ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করার পরপরই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, ঠিক এমনই মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিএনপি-জামায়াত মদদপুষ্ট হেফাজতে ইসলাম আবারও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়েছে। তারা সরকারি স্থাপনা ও গণপরিবহণ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতিতে ভাংচুর করেছে, সাধারণ মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, জ্বালাও পোড়াও করে সাধারণ জনমনে আতংক সৃষ্টি করেছে। দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের মৌলবাদী তাণ্ডব, নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগ, রাষ্ট্ৰীয় সম্পদের ক্ষতি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিরোধিতা ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা-অসম্মান দেখিয়েছে যেসব ষড়যন্ত্রকারীরা সেসব ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং তার পর থেকেই একদল ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের স্বাধীন বাঙলার উন্নয়ন রথ যেটা আমাদের জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল তা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই জন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের উপর। এরপর ২১টি বছর বাংলাদেশ ছিল অন্ধকার যুগে। এরপর এর থেকে বাঙালিকে পরিত্রাণ দেয় জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। আজকে তিনি নেই কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মাঝে আছেন। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে আজ আমরা দেশের বিরুদ্ধে রটে যাওয়া সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি এবং হচ্ছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বর্ণযুগ পালন করে আসছে যা ইতি মধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকগুলো যেভাবে ঊর্ধ্বগতিতে আছে তার আলোচনা করে সহজে শেষ করা যাবে না। এই উন্নয়নের বাংলাদেশে ফের সেই কুচক্রীরা ষড়যন্ত্র শুরু করছে। কিছুদিন যাবৎ কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে। যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বাড়িঘর, প্রেসক্লাবসহ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে যাচ্ছে তারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যারা জাতির পিতার ভাস্কর্যে আঘাত করে তারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বিশ্বাস করেনা। আমি স্বাধীনতা বিরোধী এ প্রতিক্রিয়াশীল জনগোষ্ঠীর এসকল কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। সরকারের নিকট অবিলম্বে ষড়যন্ত্রকারীদের এবং তাদের মদদ দাতাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
অঞ্জন রায় বলেন, হেফাজতের প্রথম দিক থেকেই আমি বিশ্লেষণ করতে চাচ্ছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় তারা এর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রথম মাঠে নামে এবং সেদিন তারা বলেছিল তারা একটি অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম যা তারা আজও বলছে। অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম বললেও আমরা ৫ই মে শাপলা চত্বরের তাণ্ডব চালিয়েছিল। আমরা সেদিন কি দেখলাম, রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাণ্ডব চালায়। সেদিনও ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেদের মাঠে নামিয়ে তাদের সেই পৈশাচিক রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার সদস্যরা কয়েকশ দোকান, গাড়ি ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন বইয়ের দোকানে লুটপাট করে। পরের কয়েকদিন বিভিন্ন জেলাতেও এই সংঘর্ষ হয়। তখন ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু কিন্তু এখন ইস্যুটা হলো বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেছেন, এটি প্রতিবাদ করার কিছুই নেই। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এসেছেন, বিজেপির প্রতিনিধি না। সে জায়গা থেকে কিন্তু রাজাপাকসে আমন্ত্রণ নিয়ে তাদের কোন কর্মকাণ্ড দেখেনি। এটা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক হতো ডান পন্থিদের রাস্তায় দেখতাম, কিন্তু এবার উগ্র বাম পন্থিদের আমরা রাস্তায় দেখেছি। আমরা কিন্তু গো ব্যাক মোদি, গো ব্যাক ইন্ডিয়া শ্লোগান শুনেছি; তার মানে নরেন্দ্র মোদি কিন্তু সমস্যা না, সমস্যা হলো ভারত, যে ভারত যুদ্ধের সময় ১ কোটি বাঙালি শরণার্থীদেরকে জায়গা দিয়েছিল, যে ভারত বাংলাদেশের পাশে থেকে মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিল। সেই ভারতকে নিয়ে তাদের জ্বালাতো থাকবেই! আপনারা খেয়াল করবেন ২৫ তারিখের পর কিন্তু অনেক দলেরই স্বাধীনতার ৫০ বছর নিয়ে আলোচনা সভা করে ছিল, কিন্তু তারা কি কোনো আলোচনা সভা করেছিল? প্রশ্ন করেন তাদেরকে, কোন সদুত্তর দিতে পারবে না তারা। তাদের যে লক্ষ ছিল তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের সবখানে অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারা তা করতে পেরেছে। চোর চুরি করবেই, এবং এখনি সময় এসেছে আমাদের আরও শক্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সিদ্ধান্ত নিবে যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকেরা এবং যারা নিজের মধ্যে বাংলাদেশকে ধারণ করে। এবং এই সিদ্ধান্ত নিতে যদি আমরা ভুল করি তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের আরও পস্তাতে হবে।