৬ বছরের শিশু সাগর, পরিবারের ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সে ছোট। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের নাদিরাবাদ গ্রামের বাবলু হোসেনের ছেলে। ৩ বছর বয়সে সাগরের পেটে ব্যথা শুরু, এ পেট ব্যথা থেকে ধীরে ধীরে সমস্ত শরীর ফুলে যায়। চিকিৎসা করতে ধরা পড়ে মরণব্যাধি ক্যান্সার।
এ রোগের খবর শুনতে পরিবারে মাঝে নেমে আসে অন্ধকারের ছাপ। ভ্যানে ফেরিওয়ালা করে বিভিন্ন এলাকায় ডাব, আনারস, কলা তরমুজ ইত্যাদি ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে সাগরের পিতা বাবুল হোসেন। পিতার পক্ষে এ রোগের চিকিৎসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশ-বিদেশের বিত্তবান ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন অসহায় পরিবারটি।
সাগরের পিতা বাবলু হোসেন জানান, ছেলের ৩ বছর বয়স থেকে এ রোগের লক্ষন শুরু হয়। পেট ব্যথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সমস্ত শরীর ফুলে যেতে থাকে। স্থানীয় ডাক্তারে কাছে চিকিৎসা করানো হয়। কোন সুফল না পেয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তাররা ছেলেকে দেখে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করতে দেয়। পরে টেস্টের রেজাল্ট দেখে তাকে ডাক্তাররা জানায় সাগর ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছে । সে সময় ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধপাতি খাওয়ানো হলেও ভাল হচ্ছিলনা সাগর। খরচ হচ্ছিল ব্যয়বহুল। ভাল না হওয়ায় একজনের পরামর্শে ছেলেকে রাজশাহী কোর্ট স্টেশনে একটি হোমিও প্যাথিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানকার ওষুধ খেয়ে কিছুটা সুস্থ্যতা বোধ করে।
তবে গত ৪ মাস থেকে ছেলের অসুখ বেড়ে যেতে থাকলে আবারও তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তাররা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছেলের অবস্থা দেখে ভাল না বলে। কিন্তু পিতা হয়ে থেমে থাকতে পারছিনা। সন্তানের আর্তনাদ শুনে দ্বারে-দ্বারে,পথে-পথে ঘুরছি ভাল চিকিৎসার করার জন্য । রোগে আক্রান্ত সাগর স্বাভাবিক ভাবে খেতে পারছেনা ।
৪ মাস আগে তার ডান পাশের চোখের মণি নষ্ট হয়ে গেছে। ১৫দিন পর আরেকটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ছেলের জন্য এনজিও থেকে ৯৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চিকিৎসা করেছি। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করে দিন আনি দিন খাই। ভ্যান গাড়িতে ডাব,কলা ও আনারস বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে পরিবারের সংসার ও ছেলের চিকিৎসা করায়। অভাব অনটনের সংসার নিয়ে ছেলের চিকিৎসার খরচ করতে হিমসিম খাচ্ছিলাম তখন চাচাতো ভাই ওবাইদুল্লাহ্ চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা দেয়। খরচ করতে আর পারছি না। ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান এর কাছে হাত পেতেও কোনো সাড়া পাইনি। প্রতিদিন ছেলের জন্য চারশত টাকা খরচ লাগছে। কি করে এই খরচ চালাবো? সেই দুশ্চিন্তায় আমার দিন পার হচ্ছে। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই তার ।
সাগরের মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, হামার ২টি ব্যাটা ও একটি বেটি। সাগর হামার শেষ ব্যাটা। হামি তাকে খুব আদর করে মানুষ করেছি। কি-গেই-নে-যে আল্লাহ হামাকে এতো বড় শাস্তি দিল। হামি কি আর করবো। হামি ব্যাটার সাথে ভালো করে ঘুমাতে পারিনা। তার যখন যেটা দরকার বলছে, তখন সেটা করতে হচ্ছে। মা চলো আমাকে হেঁটে নিয়ে বেড়াও, মা আমাকে খেতে দাও, ওটা সেটা খেতে দাও তখন সেটা হামাকে খেতে ও করে দিতে হচ্ছে। এমন কি হামি যখন রান্না করি তখনই তাকে কোলে নিয়ে রান্না করি। কষ্ট হামি আর কত সহ্য করব, আল্লাহ তুমি একটা কিছু করো। হামার বাচ্চাটার দিগে যদি প্রধানমন্ত্রী একটু দেখতো তা হলে হয়তোবা হামার ব্যাটাটার ভালো চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাইতো।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ এর সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্যান্সার নিরূপণের জন্য ছয় বছরের আক্রান্ত শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যদি কোন সহ্নদবান ব্যাক্তি সহযোগিতা হাত বাড়তে চান, তাহলে নিচে বিকাশ,নগদ, রকেট পার্সোনাল নম্বরঃ ০১৭৫০২৩৩৩৮৪। এছাড়া মোঃ বাবলু, হিসাব নং- ৪৭০৭৬০১০১০৮৬০, সোনালী ব্যাংক, রহনপুর শাখা,চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
ভোরের পাতা/এএম