ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
করোনা পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। মানুষ ফের চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছে। প্রতিদিন করোনার বিস্তার ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টা রেকর্ড ভেঙে একদিনে শনাক্ত ছাড়িয়েছে ৬ হাজার এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের। করোনা মোকাবিলা সরকারকে পুনরায় চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। দেশের মানুষের সুরক্ষায় ১৮ দফা পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সরকার প্রধান বার বার মানুষকে করোনার ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গত বুধবার থেকে পরিবহনগুলো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করেছে। অর্ধেক আসন খালি রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে চলছে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের বাস-মিনিবাস। বন্ধ রাখা হয়েছে আগামী ১১ এপ্রিলের পরের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রিও। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে লঞ্চ অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করেছে।
দেশে করোনার প্রবল প্রতাপের সময় পরিবহনগুলো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করে।
পরিবহনগুলোকে আবারও সেই অবস্থায় ফিরে আসা জানান দিচ্ছে, করোনার থাবা কতটা বিস্তার লাভ করেছে। কিন্তু এ অবস্থায় মানুষ এখনো স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠেনি। বহু যাত্রী মাস্ক ছাড়া বাসে যাতায়াত করছে। এভাবে যাত্রীরা যাতায়াত করলে করোনার বিস্তার ঠেকানো যাবে না। ফলে বহু আগে থেকেই বারংবার গণমাধ্যমগুলো সতর্ক করে দিয়ে আসছিল যে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া বুধবার থেকে রাজধানীসহ দেশব্যাপী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল শুরু করায় মহানগরগুলোতে যাত্রীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে আশা করা যায় দুর্ভোগ কেটে যাবে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সরকারকে নতুনভাবে সংকটে ফেলে দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। করোনা শুরুর পর থেকে এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। করোনা নিয়ে বহু মানুষ একদিকে যেমন নতুনভাবে আতঙ্কগ্রস্ত, পাশাপাশি এমন অনেক মানুষ আছেন যারা এটাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। এ জন্য মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করার কথা সরকারকে কার্যকর করতে হবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার যাবতীয় উদ্যোগ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না তার ওপর নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। ফের করোনা সংক্রমণের থাবা প্রসারিত হতে থাকলে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে মাস্ক পরার বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পুলিশ উদ্যোগী হয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকা জরুরি।
করোনা সংক্রমণ যখন নিস্তেজ হয়ে এসেছিল, তখন মানুষ হয়তো ভেবেছিল এর বিদায় অতি-আসন্ন। কিন্তু তা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে করোনা সংক্রমণ তেজীভাব নিয়ে মানুষকে আক্রান্ত করে চলছে। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিকেই দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে অভিহিত করছেন গবেষকরা। করোনা পরিস্থিতির প্রাথমিক ধাপে দেশ চরম একটি সংকটের মধ্যদিয়ে এসেছিল। বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা-বুদ্ধিমত্তা করোনা মোকাবিলায় ভীষণ সহায়ক হয়। বিশ্বের বহু দেশ করোনাকে যতটা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেনি, বাংলাদেশের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়েছে। করোনার ফলে দেশের অর্থনীতির চাকাকে শ্লথ করে তুলতে চেয়েছিল। সরকারের বুদ্ধিমত্তায় সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। তারপরেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করোনা ঝড় বইয়ে দিয়ে যায়। করোনার ঝাঁকুনি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহ্য করতে পারেনি। কর্মরতদের চাকরি থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়, অথবা অনেকের বেতন অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি সেখানেই যাবে কি না বলা মুশকিল। করোনার যে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা এটার যদি অবসান হয়, তাহলে সবার জন্যেই রক্ষা, আর এটা না হলে বিপর্যয় সাহসের সঙ্গে মোকাবিলার কোনো বিকল্প নেই। করোনা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে গণপরিবহনে যাত্রী অর্ধেক নেওয়াটা বাস্তবসম্মত। কিন্তু বিগত করোনার সময়ে যখন পরিবহন মালিক ও সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে যাত্রী অর্ধেক করে নিতে হবে; তখন এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লি¬ষ্টরা। রাজধানীর বাস স্ট্যান্ডে একটু ঘুরে আসলেও এই চিত্রের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে। দূরপাল্ল¬ার বাসে ভয়ানকভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। বুধবার থেকে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করায় খোদ রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মহানগরে যেভাবে যাত্রী দুর্ভোগ নেমে আসে তা এক কথায় অবর্ণনীয়। এর কারণ হলো অর্ধেক যাত্রী বহনের কারণে বাসের যাত্রী সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। করোনার প্রারম্ভে বা তার পরবর্তী সময় পর্যন্ত বহু মানুষ ঘরবন্দি থেকেছে। এইসব মানুষ রীতিমতো নানা কাজে ঘরের বাইরে প্রতিদিন বের হচ্ছে। এ ছাড়া ওই সময় সরকারি অফিস বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন সরকারি অফিস খোলা থাকায় যাত্রীর চাপ প্রবল।
পরিশেষে বলা জরুরি, সরকার কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করবে, এটাই সবাই আশা করে। গণপরিবহনে এটি আরও বেশি প্রয়োজন এবং শপিংমল, বাজার-ঘাটসহ সর্বত্রই মানুষ ফ্রি-স্টাইলে চলাফেরা ছেড়ে দেয়নি। এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। করোনার থাবাকে সংকুচিত করে আনতে ফ্রি-স্টাইলে মানুষের চলাচল বন্ধ করতে হবে। করোনাপূর্ব যুগের মতো চললে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা দুঃসাধ্য হবে তা বলাই বাহুল্য।