#নতুন প্রজন্মরাই এই উগ্রবাদি পরাশক্তিকে প্রতিহত করবে: মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার। #অনন্য চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন শেখ হাসিনা: ড. তুরিন আফরোজ। #বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা আমি এখনও দেখেনি: আফছার খান সাদেক।
বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী একটি নাম হয়ে গেছে আজ এবং এই দুটি নামকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য যে শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন অসাধারণ নেতা পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব অঙ্গনে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২৯৪তম পর্বে সোমবার আলোচক হিসাবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, বহির্বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠাতা আফছার খান সাদেক। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, আজকে ভোরের পাতা সংলাপে যে বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী :বঙ্গবন্ধু থেকে জননেত্রী; এটি অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয়। আজ বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী একটি নাম হয়ে গিয়েছে এবং এই দুটি নামকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে এবং আজ এটি বিশ্বের অঙ্গনে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উৎসবমুখর পরিবেশ রিরাজ করছে বাংলাদেশ। এই উৎসব আনন্দে চলতি মাসের ১৭ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর উদযাপন উপলক্ষে যে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এতে দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুপ্রতিম পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। কোভিড-১৯ এর কারণে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত হতে না পারলেও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকা, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের তথা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে; এর ভূয়সী প্রশংসা করেছে তারা। শেখ হাসিনা শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয়, অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারগুলোর সঙ্গে যে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন এবং সেটি তাদের সরকার প্রধানের প্রেরিত বার্তায়ও প্রতিফলিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর যে নাম এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে এটা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি জীবন শুরু সেই ছাত্র জীবন থেকেই। তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কখনো কোনও জায়গায় বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে বিন্দুমাত্র আপোস প্রকাশ করেননি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত রয়েছে নানা অধ্যায় ও ঘটনা। এর পরতে পরতে রয়েছে সংগ্রামের ইতিহাস। এই ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, বাংলাদেশকে স্বাধীন করাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনীতির মূল লক্ষ্য। আজ বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্যও বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের এই সক্ষমতা সাম্প্রতিক বছরগুলোর অর্জন হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। সারা বিশ্বের রাষ্ট্র নায়করা যখন বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসরণীয় নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র আমাদের অর্জিত গৌরবকে ধূলিসাৎ করার নীল নকশা বাস্তবায়নে তৎপর। নতুন প্রজন্মের লোকেরা এই পরাশক্তিদের অপতপরতার অভিসন্ধি ঠিকই ধরতে পেরেছে এবং এই অপশক্তি যেভাবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত হয়েছিল ঠিক একইভাবে তারা এবারও পরাজিত হবে।
ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া। এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। এই মাহেন্দ্রক্ষণটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বার বার কিন্তু আসবে না। আমাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর অন্যতম অবদান হচ্ছে ৬ দফা আন্দোলন। এই ৬ দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি বাঙালিদেরকে স্বাধিকারের স্বপ্ন দেখায়। ৬ দফা দেওয়ার পর শেখ মুজিব বলেছিলেন ওপারে (স্বাধীনতা) যাওয়ার জন্য সাঁকো দিলাম মাত্র। বাংলাদেশের নামকরণ, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা সবকিছু তিনিই নির্ধারণ করে দেন। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন অসাধারণ নেতা পেয়েছিল। পাকিস্তানের ২৩ বছরে বহুবার তিনি জেলে গেছেন। আজকের দিনের রাজনীতিকদের মতো তিনি পালিয়ে বেড়ানোর রাজনীতি করতেন না। সত্যিকার অর্থেই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শেখ মুজিব। বাংলার মানুষ ভালোবেসে তাকে উপাধি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। হেমিলনের বাশিওয়ালার মতো কাজটি সেটা শুধু বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব। এবং তিনি এটা সঠিকভাবে করে গিয়েছিলেন। আমরা অনেক বড় নেতা হয়তো ভবিষ্যতে দেখবো, অনেক বড় নেতার সান্নিধ্যে আসবো, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো এমন একটি বড় ফিগারকে কখনো ভুলে যেতে পারবো না। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি রাষ্ট্র দিয়েছিল এবং মাঝে আমরা সেই রাষ্ট্রটিকে হারিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে সেই রাষ্ট্রটি আবার ফিরিয়ে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সেই টুকরো টুকরো অংশটুকুকে একত্রে সাজাতে একটি ফ্রেমে বন্দি করতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও বঙ্গবন্ধু আমাদের যে রঙটি এনে দিয়েছিলেন সেটাকে জননেত্রী এখন সত্যে প্রমাণিত করছেন।
আফছার খান সাদেক বলেন, মাও সেতুং না হলে যেমন চীনের জন্ম হতো না, মাহতামা গান্ধীর জন্ম না হলে যেমন ভারতের জন্ম হতো না, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। চাঁদ যেমন সত্য, সূর্য যেমন সত্য, এই কথাটিও তেমন সত্য। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নেতৃত্ব প্রদানের জন্য আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকি- নবাব সিরাজউদ্দৌলা, শহীদ তিতুমীর, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরও অনেক মহান নেতাকে। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমি বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো আরও একটি নেতা এই বিশ্বে কোথাও দেখেনি। বঙ্গবন্ধুর সাথে প্যারালাল করার মতো নেতা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে জন্মায় নেই এবং বহিঃবিশ্বে জন্মায়নি। এই করোনাকালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ঈর্ষণীয়। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে বাহাত্তর বছরে। মাথাপিছু আয় হয়েছে দুই হাজার ডলারের ওপরে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। শিশু মৃত্যুর হার কমে হয়েছে প্রতি হাজারে পঁচিশ জন। শতকরা ৯৮ জন ভালো মানুষ পেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা। স্বাধীনতার অসাধারণ প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে বিস্ময়ের উচ্চতায়। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একাত্তরের বন্ধুদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতীকী সফরকে কেন্দ্র করে যেভাবে দেশের সম্পদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে দেশকে আবার পাকিস্তানি পথে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র মেলে ধরেছে। সাম্প্রদায়িক এই অপশক্তি পাকিস্তানি কায়দায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে অতিথি অপমানের যে রুচিহীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছে, তা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হেয় করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।