আমাদের বর্তমান যে উন্নয়নের অর্জন আছে সেগুলোতে অবশ্যই বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রভাব আছে এবং সেই বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের এই সময়ে যে উন্নতি গুলো হচ্ছে সে জায়গা থেকে আমাদের মনোজাগতিকভাবেও আরও উন্নত হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন বলেই সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নতি করছে। কোনো অপশক্তি, কোনো ধর্মীয় মতবাদের লোকেরাই এই উন্নয়নকে কোনোভাবেই ম্লান করতে পারবে না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২৯৩তম পর্বে সোমবার (২৯ মার্চ) আলোচক হিসাবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন-যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জাব্বার খান (পিনু), ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বা হচ্ছে এই কথা গুলো কিন্তু শুধু আমরা বলছি না, এই কথা গুলো কিন্তু আওয়ামী লীগের, যুবলীগের নেতারা, কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকারাই শুধু বলছে না; এই কথা গুলো কিন্তু আজ বিশ্বের সবচে শক্তিশালী রাষ্ট্র থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ নেতারা এই কথা গুলো বলছে। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। মার্চ ১৯৭১ প্রথম প্রহরে মহান নেতা ও বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনেন। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। বাঙালি জাতির এই বীরত্ব ও দেশাত্মবোধ বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে পৃথিবীর মানচিত্রে সৃষ্টি হতো না বাংলাদেশের। যুগ যুগ ধরে বঙ্গবন্ধুর মনের লালিত স্বপ্নের কারণেই এই বাংলাদেশের সৃষ্টি। আজ এই বাংলাদেশে লক্ষ করা যাচ্ছে এক বিশেষ গোষ্ঠী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সব ধরণের অপকর্ম নিমজ্জিত আছে। তাদের কাছে দেশ, জনগণ এসব কিছুই না। এই শ্রেণির লোকের সার্বক্ষণিক চিন্তা ও উদ্দেশ্য হলো কোনো না কোনোভাবে দেশে সব সময় একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাখা। এদের মধ্যে কিছু লোক আবার বিদেশে থাকে, আর তাদের কাজ হলো সারাক্ষণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা। তারা দেশে অশান্তি সৃষ্টির জন্য যেমন সারাক্ষণ গুজব ছড়ায় তেমনই দেশে কোনো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই আনন্দ পায়। দেশে কিছু উছৃঙ্খল লোক জ্বালাওপোড়াও, ভাঙচুর করলে তারা খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কয়েক দিন ধরে দেশে মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠী যে জ্বালাও-পোড়াও চালাচ্ছে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। কোনো অপশক্তি, কোনো ধর্মীয় মতবাদের লোকেরাই এই উন্নয়নকে কোনোভাবেই ম্লান করতে পারবে না।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি রাজনৈতিক মুক্তি যেটা থমকে গিয়েছিল '৭৫ এর ১৫ই আগস্টে। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টে বাংলাদেশকে শুধু চেতনার জায়গা থেকে বা মানসিক জায়গা থেকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা হয়নি, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে হত্যা করার চেষ্টাও হয়েছিল। এটার উত্তরণ আবার হয়েছিল যখন জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরে এটার হাল ধরেছিলেন। এটি এমন একটি বিস্তৃতি বিষয় যে, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই বর্তমান সরকার যে উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে এই নিয়ে দিনের পর দিন বিস্তর আলোচনা করা যেতে পারে। তাই আমি একটু সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে একটু অন্যভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী: বঙ্গবন্ধু থেকে জননেত্রী, এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমি বলতে চাই এখন পর্যন্ত আমরা অনেক জায়গা থেকে মুক্তি হতে পেরেছি কিন্তু আদৌ কি আমরা চেতনার জায়গা থেকে মুক্তি হতে পেরেছি। আমাদের মানসিক চেতনাগত মুক্তি হতে পারেনি সেটা কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহ দেখলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণটাও আমরা জানি, ৭৫ এর পর থেকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছি তা কিন্তু নয়। আমাদের ভুল ইতিহাস শিখানো হয়েছ, আমাদের ভুলটা চর্চা করা হয়েছে। এই যে জিনিষগুলো হচ্ছে সেই জায়গাটাই আমাদের নজর দিতে হবে। গত ডিসেম্বরে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকিও দিয়েছিল, কিছুদিন আগে মামুনুল হকের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলায় বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে একটি গ্রাম। সেখানে প্রশাসন এগিয়ে আসলো, ৪০-৫০ জনকে গ্রেফতার করা হলো। আমরা মনে করলাম তারা হয়তো পিছপা হয়েছে কিন্তু না, দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এই জঙ্গিবাদের চর্চা হচ্ছে এখনো চলছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে আরও অনেকের মতো আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র আবারও মাঠে নামে উগ্র ধর্মান্ধরা। আমাদের এই সময়ে যে উন্নতি গুলো হচ্ছে সে জায়গা থেকে আমাদের মনোজাগতিকভাবেও আরও উন্নত হতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জাব্বার খান (পিনু) বলেন, আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমরা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা দাঁড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাত বরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ ইজ্জতহারা মা-বোনদের। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। আমার কাছে মনে হয়, এই যে স্বাধীনতার একটা আত্মতৃপ্তি এটাই অনেক বড় পাওয়া। মানুষ বাজারে গিয়ে যে ১০ টাকা দিয়ে টমেটো কিনে আর কৃষক যে টমেটো ক্ষেতে ফলায় সেটা কিন্তু খরচ আরও বেশি। কিন্তু এটার যে আত্মতৃপ্তি সেটা কিন্তু বাজারের হাজার মন টমেটোর থেকেও বেশী। ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের, জন্ম হয় লাল-সবুজ পতাকার। আমি অনেক গর্ববোধ করি যে এই যুদ্ধে আমি সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পেরেছি এবং বিজয়ের পতাকা উড়াতে পেরেছি। মাতৃভাষার দাবিতে সেই ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদান সংগ্রাম-আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে জাতির রায়, ’৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিসনদ ঘোষণা, ’৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ’৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায় এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং স্বপ্নের স্বাধীনতা। এতো ঐতিহ্যপূর্ণ আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস তা ভাবলেই গা শিহরন দিয়ে উঠে। আমাদের বর্তমান যে উন্নয়নের অর্জন আছে সেগুলোতে অবশ্যই বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রভাব আছে এবং সেই বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের জাতির যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে সেটা আমারা হার মানবো না, হার মানতে চায়ও না। এই বিশ্বাসেই আমরা সামনে আরও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবো।
উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের প্রাপ্তি কিন্তু বেশি না। আমাদের জন্মের সিদ্ধান্ত কিন্তু আমরা নিতে পারিনি। কিন্তু আমি বাঙালি হিসেবে অনেক সীমাবদ্ধতার ভিতরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত যে এই দেশে আমার জন্ম হয়েছে। হয়তো এই দেশে অর্থনৈতিক বিলাসিতা নেই, সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালনের উকি ঝুঁকি আছে, হয়ত জলবায়ুগত কিছু সমস্যা আছে কিন্তু তারপরেও ১৯৭১ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই এই দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই দেশের একজন নাগরিক হওয়ার পরে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। সুতরাং সেই দিক থেকে এই সুবর্ণজয়ন্তীর আনন্দ আমার জন্য অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে যাদের স্বাধীনতা দিবস আছে কিন্তু তাদের কোন বিজয় দিবস নেই। আমাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সামাজিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু তারপরেও আমার কাছে অনেক প্রশান্তির বিষয় যে আমার স্বাধীনতা রয়েছে, আমার বিজয় দিবস রয়েছে। বিজয় দিবস পালনের অধিকার রয়েছে আমাদের। এটিইতো আমাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। আজ এই স্বাধীন বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মের একশ’ বছর আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবার্ষিকী আর বাংলাদেশের জন্মের সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ আর ২০২১ সালের বাংলাদেশ। এ দুই বাংলাদেশের একটি তুলনামূলক চিত্রই বলে দিতে পারে বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। হ্যানরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে মশকরা করে ১৯৭১ সালে বলেছিলেন, “তলাবিহীন ঝুড়ি”। কিন্তু সেই “তলাবিহীন ঝুড়ি” এখন ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ভরপুর। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন বলেই সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নতি করছে। বাঙালি হিসেবে আমাদের যে অর্জন রয়েছে তা কিন্তু অনেক উন্নত দেশের মানুষের মধ্যে এই আত্মতৃপ্তি নেই। তাই বলি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা।