সালাতুত তাসবিহ অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। সালাতুত তাসবিহ, তাসবিহের নামাজ নামেও পরিচিত। এই নামাজে তিনশতবার তাসবিহ পড়তে হয়। প্রত্যেক রাকাআতে ৭৫ বার তাসবিহ আদায়ের মাধ্যমে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হয়। আর তাসবিহ বলতে ‘সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার’ এ শব্দগুলো বোঝানো হয়েছে। যে নামাজে এসব তাসবিহ পড়ানো হয় তাই সালাতুত তাসবিহ।
হাদিস শরীফে ‘সালাতুত তাসবিহ’র অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। এই নামাজ পড়লে পূর্বের গুনাহ বা পাপ মোচন হয় এবং অসীম সওয়াব পাওয়া যাবে। সালাতুত তাসবিহ বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো নয়। আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) তার অনুসারীদেরকে এ নামাজ পালনে উৎসাহিত করছেন। জীবনে একবার হলেও মুসলমানরা যেন এ নামাজ পড়ে সে বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হজরত আব্বাসকে বললেন, ‘হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সঙ্গে ১০টি সৎকাজ করব না? (অর্থাৎ ১০টি উত্তম তাসবিহ শিক্ষা দেব না) যখন আপনি তা (আমল) করবেন-
>> তখন আল্লাহ আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, সবধরনের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> সগিরা ও কবিরা গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহ মাফ করে দেবেন।
(হে চাচা!) আপনি ৪ রাকাআত নামাজ পড়বেন এবং প্রত্যেক রাকাআতে সুরা ফাতেহা পাঠ করবেন এবং যে কোনো একটি সুরা মেলাবেন। (অর্থাৎ প্রত্যেক রাকাআতে এ তাসবিহটি ৭৫ বার করে আদায় করতে হবে।)
এই নামাজ সম্ভব হলে দৈনিক একবার, তা না হলে সপ্তাহে একবার, তা না হলে মাসে একবার, যদি তাও না হয় বছরে একবার পড়া উচিত। যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে জীবনে একবার হলেও নামাজটা পড়ে নেবেন। বিখ্যাত ওলামায়ে কেরামদের মতে, বিপদ-আপদ এবং চিন্তার অবসানের জন্য সালাতুত তাসবিহের চেয়ে কার্যকর নামাজ আর নেই। সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম
সালাতুত তাসবিহ নামাজ চার রাকাত। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, যে কোনো সুরা পড়তে পারেন। তবে এই নামাজের বিশেষত্ব এই যে, প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে, চার রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হবে।
তাসবিহ: (اَكْبرُ سُبْحاَنَ الله وَالْحَمدُ للهِ وَلآَ اِلَهَ اِلاَّاللهُ وَاللهُ) উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
১ম রাকাত এ সানা পড়ার পরে তাসবিহটি ১৫ বার পড়তে হবে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা অথবা অন্তত তিন আয়াত পড়ার পরে তাসবিহটি ১০ বার পড়তে হবে ।
এরপর রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পরার পরে তাসবিহটি ১০ বার পড়তে হবে।
এরপর রুকু হতে দাড়িয়ে গিয়ে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ পড়ার পরে তাসবিহটি ১০ বার পড়তে হবে।
এরপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পরে তাসবিহটি ১০ বার পড়তে হবে ।
প্রথম সিজদা থেকে বসে তাসবিহটি ১০ বার পড়তে হবে ।
এরপর আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পরে তাসবিহটি ১০ বার পড়তে হবে ।
তারপর একই ভাবে ২য় রাকাত পড়তে হবে, ( সুরা ফাতিহা পড়ার আগে তাসবিহ টি ১৫ বার পড়তে হবে ।)
অতঃপর ২য় রাকাত এর ২য় সিজদার পর ‘আত্তাহিয়্যাতু…’ পড়ার পরে সালাম না ফিরিয়ে , ২য় রাকাত এর মতো ৩য় এবং ৪র্থ রাকাত একই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে (তাসবিহটি ১৫ বার পড়ে স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা পড়তে হবে)।
কোনো এক স্থানে উক্ত তাসবিহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে তথাকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিবে। আর এই নামাযে কোন কারণে সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সাজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত তাসবিহ পাঠ করতে হবে না। তাসবিহের সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলের কর গণনা করা যাবে না, তবে আঙ্গুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
ভোরের পাতা/এএম