দেশে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক গতিতে বেড়েই চলেছে। করােনার এই দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে নতুন করে সরকার জনসমাগম ও চলাফেরার ওপর কঠোর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চুড়ান্ত করেছে। শুরুতে লকডাউনের পথে না যাওয়ার কথা ভাবলেও সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায়, আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
মানুষের চলাফেরা সীমিত করা ও লোকসমাগমে বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি সংক্রমণের হার বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশের কিছু এলাকাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব এলাকায় লকডাউনের মতো কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই নতুন কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবারই দেশের কিছু এলাকায় বিভিন্ন টাইপের লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি- এসব পর্যটন এলাকায় যাওয়া-আসা বন্ধ করা, বিয়ে শাদী অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পিকনিক এগুলোও বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি স্বাস্হ্যবিধি না মেনে সেসব অনুষ্ঠানে জনসমাগম হচ্ছে, সেগুলো বন্ধেরও কঠোর নির্দেশনা দেয়া হতে পারে।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার কমে এলেও; কিন্তু মার্চের শুরু থেকে তা আবার দ্রুত বাড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তীতে হয়তো পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের লকডাউনের প্রস্তাব আছে। আমাদের পাঠানো প্রস্তাব পর্যালোচনা করে শিগগিরই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে , রোববার সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে দেশে নতুন করে আরও তিন হাজার ৯০৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। দেশে মোট পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এসময় মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৫ জনের । এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে আট হাজার ৯০৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় মহাপরিচালকের কাছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১২টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ রুখতে সম্ভব হলে পুরোপুরি লকডাউনে যাওয়া, পুরোপুরি লকডাউন সম্ভব না হলে ‘ইকোনমিক ব্যাল্যান্স’ রেখে যে কোনও জনসমাগম বন্ধ করার সুপারিশ আসে। পাশাপাশি কাঁচাবাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিং মল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পবিত্র রমজানের ইফতার পার্টি ইত্যাদি সংকুচিত বা সীমিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলো বন্ধ রাখা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত রাখারও সুপারিশ করা হয়। ওইসব প্রস্তাবনা ও সুপারিশ অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যম এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণের এই উধ্বগতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও। রোববারই তিনি মহামারীর নতুন ধাক্কা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভোরের পাতা -এনই