ব্যাট হাতে নামতে দেখা গেল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভ লিটন দাস আর নাঈমকে। দু’বার বুক ডন দিয়ে আর দেহটাকে ধনুকের মত বেকিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে নিজেদের উইকেটে যেয়ে শ্বাস নিতে। আড়ামোড়া ভেঙ্গে সর্তীথ নাঈমও প্রস্তুত। সামনে রানের হিমালয়। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড মাত্র ৪ উইকেট খুইয়ে কুড়ি ওভারে রান তুলেছে ২১০। তা টপকে জিততে হলে করতে হবে ২১১ রান।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের বসে থাকলে মানায় না! আর খেলার আগে দলনায়কতো বলেই দিয়েছেন ওডিআইয়ের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা টি-টয়েন্টি সিরিজটি রাঙিয়ে তুলবেন! সেই কথামত শার্দুলরা ব্যাট হাতে বিক্রম দেখাতে ফিল্ডে নেমে গেলেন। এরপর শুরু হলো লড়াই। সাদারা এবার বল করবে তাই তারা তাদের নিজেদের মত জাল ফেলে বাঘ শিকারের ছক আঁকে। ছকে সহজেই ধরা দেন কথিত টাইগার ওপেনার লিটন দাস। ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন এবারের সফরটি নাকি ভালো যায়নি লিটনের। তাই এই ম্যাচে তিনি ভাল করতে নিজের শতভাগ ঢেলে দিতে মরিয়া! ঢেলে দিলেন একহালি রান করেই প্যাভিলিয়ন মুখী হলেন।
ভাবখানা এমন আমি দেখলাম, হে আমার প্রিয় সহকর্মীরা এবার তোমরা দেখ?
স্বার্থ পরের মত একা খেলব তাতো হয়না- আর ক্রিকেট দলের খেলা। তাই তোমাদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে আমি বিশ্রামে গেলাম। কি চমৎকার দেশরে ভাই এবারে একটু ঘুরে ফিরে দেখতে চাই। আবার এই দেশে আসা হবে কিনা জানি না। তবে বিশ্বাস বিসিবির বর্তমান নেতৃত্ব অটুট থাকলে সে সুযোগ আসবেই। ভাই অত কথায় কাজ নেই এবার সরকার তোমার পালা। তুমি বুক চেতিয়ে লড়াই করতে জলদি নামো। নামলেন সৌম্য। সরকারের দম ফুরালো ৫ রানে। পাওয়ার প্লের দুই ওভার শেষ হতে না হতেই ২ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে ফিরলেন। নাঈম তখন কাকে পাচ্ছেন বুঝতে না বুঝতে দৃশ্যপটে হাজির মো. মিঠুন। তৃতীয় ওডিআইতে তিনিবেশ ভালোই ব্যাট চালিয়েছিলেন।
কিন্তু কথায় আছে মর্নিং শো’স দ্য ডে। তিনিও বেশিক্ষণ দাড়ালেন না। নেই নেই করতে করতে নিজের উইকেট খুইয়ে হাজির হলেন ড্রেসিং রুমে। এবারে নামলের দলনেতা রিয়াদ। বাংলাদেশের আশা ভরসার প্রতিক হয়ে তিনি ভক্তদের স্বপ্ন দেখাবেন এমন প্রত্যাশা। এরই মধ্যে ফিরলেন নাঈম। দেখতে দেখতে ৪ ইউকেট নেই। এবার দৃশ্য পটে এলেন আফিফ ধ্রুব। আর তখনই বাজে শটে পথ হারালেন দলনেতা রিয়াদ।
একই সঙ্গে খাদে পড়ে গেল বাংলাদেশ। এরপর ধ্রুব নিজের কাধে দায়িত্ব তুলে নিলেন। শেখ মেহেদি এসে ফিট হতে না হতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন। ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে ! বাংলাদেশ। টুকটাক নয় এবারে রুখে দাড়ানোর চেষ্টা করলেন ধ্রুব। তাকে সঙ্গ দিতে এলেন সাইফ উদ্দিন।সাইফ সঙ্গ দিয়ে চললেন ধ্রুবর। ম্যাচ তার আগেই ফসকে গেছে আশ্রয় নিয়েছে নিউজিল্যান্ড শিবিরে। তারপরেও ধারাভাষ্যকারদের কথা সম্মানজনক হার!। আর কতকাল এই কথাটি তাদের বলতে হবে সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রইলো। আড়াই যুগ পেরিয়ে এসে এখনও আমাদের বলতে হচ্ছে, হার হোক তবে তা হোক সম্মানজনক! ধ্রুব আর কতক্ষন ধ্রুবতারা হয়ে জ¦লবেন? নিউজিল্যান্ডের আকাশে তখন সুর্য উকি দিচ্ছে পুব আকাশে। তাই তাকে আলোহীন হতে হল।
ফিরলেন গতকালের ম্যাচের টপ স্কোরার। সাতের পর আট । তখন দলের রান শতকের ঘর পেরিয়েছে। প্রথম যে ভাবে বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল সেখানে শতকের ঘর পার করাই ছিল একধরনের দুঃসাহস কিন্তু শত্রুর মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে বাংলাদেশ যখন তাদের কোটা শেষ করে তখন তাদের রান ১৪৪। আইনের ভাষায় বড়ই বিপজ্জনক। সেখানে থেমে গেল বাংলাদেশ।
এভাবেই মাঠে তারা দ্যুতি ছড়ান! শেষ পর্যন্ত হার মাত্র ৬৬ রানে। হার থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ প্রথম টি-টয়েন্টিতে এভাবেই প্রথম ম্যাচের ইতি টানে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এভাবে আর কতদিন আমাদের এইসব জগদ্দলদের বয়ে বেড়াতে হবে? বিসিবির মত একটি শেতহস্তিকে আর কতদিন আমাদের পুষতে হবে? যাদের কাজ কেবলই নিজেদের মোটা অঙ্কের আয়ের পথকে নিষ্কণ্ঠক করা? ‘ সেদিন যারা জাতিকে লজ্জায় ডুবিয়েছে তারাই আবার টি-টয়েন্টিতে আমাদের ডুবালো। তাই বলতে হচ্ছে এ পান পাত্র নিদারুন বীষে ভরা/ দুর করে দাও দুর করে দাও ত্বরা।আমাদের দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হচ্ছে বিসিবি। তারা স্বজনপ্রীতি এবং নিজেদের স্বার্থ দেখতে যেয়ে দেশের ক্রিকেটকে ডুবাচ্ছেন।
ক্রিকেটের নাসিং না করে নিজেদের আখের গোছাতে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন ক্রিকেটার তৈরিতে তাদের কোন উদ্যোগ নেই। পুরাতন ব্যর্থ কিছু চেনা মুখ দিয়েই তারা টিম গঠন করছেন। টিম গঠনের প্রাক্কালে চেনামুখগুলোই বারে বারে দেখা যাচ্ছে। তামিম, মুশফিক, সাকিব,রিয়াদ, মুস্তাফিজ এদের আসন পাকা থাকছে। কিন্তু তারা দেশের ক্রিকেটের জন্য কি দিচ্ছেন? নিজেদের আসন এতটাই নিশ্চিত যেয়ে তাদেরকে পারফর্ম করে দলে জায়গা করে নিতে হচ্ছে না। একজন ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা নিজে পারফর্ম করা। সে বিষয়ে কোন পরীক্ষা তাদের দিতে হচ্ছে না। আর হবেই বা কেন যদি এমনটি করা হয় তাহলে বিসিবিতে যারা আছেন তাদের আসন যে টলমল হয়ে পড়বে।
ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে যতই রক্তক্ষরন হোক না কেন তাতে কী?
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বাঁচাতে হলে বিসিবির বর্তমান কমিটিকে অপসারন করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পারফর্ম করেই দলে যায়গা করে নেওয়ার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। ওডিআই দলনায়ক তামিম শুধু মাত্র ব্যাটসম্যান। সে জায়গাতে তিনি বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন। তারপরেও তাকে দলে রাখা মানে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের দলে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া। একই ভাবে মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজ এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। নামের প্রয়োজন নেই, দরকার খেলার টেকনিক আর দলকে পরাজয়ের গ্লানি থেকে বের করে আনা।
বিসিবিকে বলতে হচ্ছে, অনেক হলো আগুন নিয়ে খেলা/ এবার এলো তোমার ফেরার পালা/ আগুণ তোমায় কি দিয়েছে বল/ আজিকে তোমার আসন টলমল। সত্যি কথা হচ্ছে অপদার্থ বিসিবি আর ব্যর্থ খেলোয়াড়দের সরিয়ে দেওয়া এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।