যে মানুষ কখনো ভালোবাসে না, সে বেঁচে থাকার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। হৃদয়বান মানুষ বানায় পাখিরাজ্য আর ভালোবাসাহীনরা বানায় খাঁচা। অপ্রেমের বীজে চাষ করে ঘৃণার ফসল। মানুষ ভালোবাসে, মানুষ বিদ্রোহ করে। কখনো মানুষ ভালোবাসা না শেখা রাষ্ট্রের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করে; কখনো ভালোবাসাহীন সমাজকে ভালোবাসার আহ্বান।
এটাই একজন কবির সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামে নাম লিখিয়েছেন নবীন মুখ ‘সজিব তুষার’। তুষারকে যারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন তারা সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন চেহারায় পেয়েছেন তার এই প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পাখির রাজ্যে খাঁচা ব্যবসায়ী’ পড়ে। পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো। কিন্তু সেই রাত খাঁচায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা; তাও রাষ্ট্রের নাকের ডগায়। পাখি কখনো তার কলকাকলি বন্ধ করে না। গতবছর এমনই এক বুনো পাখিকে হত্যা করেছিল খাঁচা ব্যবসায়ীরা। নাম হেলেন বুলাক। পাখিটির বাসা ছিল তুর্কি পাহাড়ের চূড়ায়। হত্যা করলেও তার ডানা ঝাপটানোর শব্দ বন্ধ করতে পারেনি এরদোয়ানের এয়ারগান।
এখনো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ডানা উঁচিয়ে গেয়ে যাচ্ছে অন্যান্য তরুণ তুর্কিরা। কবিরা ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী। সেটা বারংবার ভুলে যায় রাষ্ট্র। আর সেটা মনে করিয়ে দিতে, গাছেদের শোক কাটিয়ে বারংবার জেগে ওঠে এই বিপ্লবীরা। এখনো গেয়ে চলছে কুর্দিস্তান, গেয়ে চলছে গ্রুপ ইয়োরাম। হেলেন বুলাকের মতো বিশ্বের অনেক পাখি এখনো সহ্য করে যাচ্ছেন সায়ানাইডের টর্চার শেল, মোরাল পুলিশিং। তবুও, পাখিরা গেয়ে যাবে। কারণ, পাখিরা জানে ‘একদিন বৃষ্টি হবে’ আকাশ কাঁপিয়ে। সেই বৃষ্টিতে ভিজবে ‘লেডি জাস্টিসিয়াও’! সবকিছু মনে রাখা হবে ততদিন পর্যন্ত।
জমা থাকবে পান্ডুলিপিতে। ততদিন খুনিকে ভালোবাসবে লাশ। ততদিন বিপ্লব থাকবে নিষিদ্ধ। নতুন কবি হিসেবে এবং প্রথম কাব্যগ্রন্থ হিসেবে এই বইটি একেবারে ভিন্নমাত্রার এমনটাই বলছেন পাঠক। পড়ে মনে হয় নি- কাঁচা হাতের লেখা। তবুও চিন্তা আরেকটু গুছালো হলে ভালো হতো বলে মনে করছেন একশ্রেণির পাঠক। প্রথম কাব্যগ্রন্থ একেবারে রাজনৈতিক প্রেম কেন? এটা নিয়ে কৌতুহলী অনেক পাঠক।
এ প্রসঙ্গে সজিব তুষার জানান, ‘একজন কবি হিসেবে সমাজের প্রতি দায় আমি এড়াতে পারিনা। সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের উপর হামলা আমাকে যতটুকু পোড়ায়, আফগানের শিশুদের আহাজারীতেও একইভাবে বুক কেঁপে ওঠে। রাজনীতির নামে- ধর্মের নামে- বর্ণের নামে এই হত্যাকাণ্ডগুলোর দায় একজন কবি হিসেবে মেনে নিতে পারিনা। শুধু একজন কবি নয় যেকোনো স্বাভাবিক রক্ত মাংসের মানুষই এই খুনের বিরোধিতা করবে। যা আমি করছি।’
তিনি আরও বলেন, এই বিরোধীতার কারণে আমাকে রথি-মহারথী নয়; একজন স্বাভাবিক মানুষই ভাবুন। যেদিন থেকে নিজেকে এই পৃথিবীর সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি; আমার কোন কাঁটাতার নেই। আমাকে ধর্ম দিয়ে বিচার করবেন না। গায়ের রঙ ফর্সা বলে আমাকে সাদাদের দলে ফেলবেন না। আমাকে রাজনৈতিক দলে বন্দি করবেন না। আমি যেহেতু মানুষের জন্য লিখি; আমাকে আপনাদের দলেই নিন। একজন কবির কলম নির্দিষ্ট ইস্যুতে- নির্দিষ্ট গণ্ডীতে যদি কেঁপে উঠে সে আসলে কতটা কবি হয়ে উঠলো আমি জানিনা। তবে মহাকালে তিনি ইতিহাস হন্তারক। এই যাপিত হত্যাগুলোর দায় তাকে নিতেই হবে।’
‘পাখির রাজ্যে খাঁচার ব্যবসায়ী’ বইটি চলতি বছরের ২৩ মার্চ অমর একুশে বইমেলার ১৯১ নং আনন্দম প্রকাশনীর স্টল থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সেদিনই অনাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে পাঠকের মাঝে উন্মুক্ত ছিলেন। সেখানে কবি কালপুরুষ, কবি সৈকত আমীন, আনন্দম প্রকাশনীর প্রকাশক মুক্তা মজুমদার শ্রাবণী, নারীবাদী এক্টিভিস্ট মারজিয়া হাসান প্রভাসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক ও গুণীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
বইটিতে তরুণ এ কবির ত্রিশটি কবিতা আছে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে কবির বাবা, মা ও এক্টিভিস্ট মারজিয়া হাসান প্রভার নামে। বইটি পাওয়া যাবে বই মেলার ১৯১ নং আনন্দম প্রকাশনীর স্টলে।
ভোরের পাতা/কে