বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ থেকে মৌলবাদীদের চিরতরে নির্মূল করতে হবে: ড. শাহিনূর রহমান
প্রকাশ: রোববার, ২৮ মার্চ, ২০২১, ১০:২৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
শেখ মুজিবের সোনার বাঙলাকে নিয়ে ফের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সেই পাকিস্তানের রয়ে যাওয়া কিছু প্রেতাত্মারা যারা আজ হেফাজত, জামায়াত-শিবির নামে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজকে সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সেই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীরা আবারো ফণা তুলছে। কিন্তু তারা বাঙালির আসল চেহারা এখনো দেখেনি। বাঙালি যদি ফণা তুলে দাঁড়ায় তাহলে তারা এবার আর রক্ষা পাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের ঐক্য অবস্থানই পারে এই ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২৯২তম পর্বে রোববার আলোচক হিসাবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- ইসলমী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনূর রহমান, অস্ট্রিয়া প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আহমেদ ফিরোজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস।
অধ্যাপক ড. শাহিনূর রহমান বলেন, আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমরা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা দাঁড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাতবরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ ইজ্জতহারা মা-বোনদের। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি আমরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রামকে তার কালজয়ী নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মার্চে চূড়ান্ত পরিণতিতে নিয়ে আসেন। তিনি পূর্ব বাংলায় সাড়ে সাত কোটি মানুষকে এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ করে পাকিস্তানি মৌলবাদী গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল এবং তাদের কাছ থেকে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হন তিনি। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখ প্রাণের তাজা রক্ত। পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার সেই গৌরব ও অহংকারের দিন ২৬ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের, জন্ম হয় লাল-সবুজ পতাকার। সেই ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদান সংগ্রাম-আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে জাতির রায়, ’৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিসনদ ঘোষণা, ’৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ’৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায়ই এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং স্বপ্নের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের তথা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে। এই সময়ে বাংলাদেশ ৯০ ডলারের মাথাপিছু আয় থেকে ২০৬২ ডলারের মাথাপিছু আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। প্রবৃদ্ধিও ঠিক একইভাবে ৬-৭% ঘরে উন্নীত হওয়ার ধারা বজায় রাখতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের অনুভূতি ও অন্তরাত্মায় মিশে আছেন। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। আজকের এই সোনার বাঙলাকে নিয়ে ফের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সেই পাকিস্তানের রয়ে যাওয়া কিছু প্রেতাত্মারা যারা আজ হেফাজত, জামায়াত-শিবির নামে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখনি সময় হয়ে এদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এদের মূল উৎপাটন করা। আমাদের অন্যতম শক্তি হলো একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমি বিশ্বাস করি এই চেতনায় আমরা সবাই বিশ্বাসী হলে বাংলাদেশে এসব মৌলবাদ ঠাঁই পাবে না।