প্রকাশ: শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৭.০৩.২০২১ ২:৪১ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বিসিবির অব্যবস্থাপনার বিষয়ে মুখ খুলে সাকিব এখন সংস্থাটির রোষাণলে পড়েছেন। যদিও তিনি কোন মিথ্যাচার করেননি। বরং দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির দায়িত্বহীনতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর তাতেই ক্ষেপেছে বিসিবি। এখন তারা সাকিবের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার হিসেব কষতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শোনা যাচ্ছে আইপিএলে দেওয়া ছাড়পত্রও নাকি প্রত্যাহার করে নেওয়া র বিষয়ে বিসিবির সুবিধাভোগীরা বেশ তৎপর। কিন্তু সাকিব যা বলেছেন যে অব্যবাস্থপনার জন্য দেশের ক্রিকেট বন্ধ্যা হওয়ার উপক্রম সে বিষয়ে কোন বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাও নেই বিসিবির। তারা এখন নিজেদের আখের গোছাতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে দেশের ক্রিকেটকে নির্বাসনে পাঠাতেও তাদের আপত্তি নেই।
বর্তমানে দেশের জাতীয় দল নিউজিল্যান্ডে নাকানি চুবানি খাচ্ছে। সিরিজ খুইয়ে গতকাল হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। যদিও এই লজ্জা দেওয়া হচ্ছে ক্রিকেটারদের। কিন্তুর যারা এই দলকে নিয়ন্ত্রন করেন, যারা অফিসের নামে মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা সম্মানি নিচ্ছেন, তাদের দায় নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠছে না। এইসব ক্রীড়া সংগঠক মহারথীরা নিজেদের স্বার্থে ক্রিকেটকে নির্বাসনে পাঠানোর সকল প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেছেন। নতুন ক্রিকেটার তৈরির কোন উদ্যোগ নেই। পাইপ লাইনে এখন বিরাট শুন্যতা। ক্রিকেটার উৎপাদনে তারা পথ চেয়ে আছেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সেখান থেকে দু’একজন ক্রিকেটার মাঝে মাঝে উঠে আসছেন। সম্ভবনাও দেখাচ্ছেন। কিন্তু উপযুক্ত নাসিংয়ের অভাবে তারা হারিয়ে যাচ্ছেন। অথচ দেশের আনাচে কানাচে এমন অনেক ক্ষুদে প্রতিভাবান রয়েছেন যাদের দিয়ে ক্রিকেটের এই ক্রান্তিকাল সহজেই দুর করা সম্ভব। সেদিকে কোন নজর নেই আমাদের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির। তারা মাসে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা সম্মানি নিয়ে ক্রিকেটকে ডুবাতে বেেসছেন। সেই সঙ্গে দলের বহরে নিজেরা বিদেশ সফরের সুযোগ নিচ্ছেন। কাড়ি কাড়ি বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশে যেয়ে শপিং করছেন। নিউজিল্যান্ড বহরে তেমনটিই দেখা গেল। বিসিবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জালাল ইউনুস যিনি বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডে গেছেন। সেখানে তার কাজটি কী আর কেনই বা তাকে পাঠানো হলো সেবিষয়ে যুতসই কোন ব্যাখ্যা নেই।
কেবলই বলা হয়েছে, তিনি এসময় ক্রিকেটারদের দেখভাল করবেন? কিন্তু প্রশ্ন জালাল ইউনুসকেই যদি দলকে দেখভাল করতে হয় তাহলে কোচিংস্টাফের কাজটি কী? খেলোয়াড় বাদেও যাদের কোচিংস্টাফ হিসাবে দলের সঙ্গে পাঠানো হয় তাদের দায়িত্বটি কী? মুখরক্ষার এই নিদেন হলেও আদতে জালাল ইউনুসদের পাঠানো মানে বিদেশি মুদ্রার শ্রাদ্ধ করা। এর বাইরে আর কোন লাভ বাংলাদেশের জন্য আছে বলে মনে হয় না। এই সব অব্যবাস্থপনার খেসারত দিচ্ছে এদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। যখন দল পরাজিত হয়, সিরিজ খোয়ায় এবং হোয়াইটওয়াশ হয়, তখন জাতি হিসাবে লজ্জায় পড়ে ভক্তরা। কিন্তু দাঁত বের করে হাসে বিসিবি এবং দায়িত্ববানেরা! দল যে নির্মমভাবে হেরে গেছে!
এখানে মাশরাফি বিন মুর্তজার কথাটি তুলে ধরা যেতে পারে। তিনিও বিসিবির অব্যবাস্থাপনা বিষয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যেখানে তিনি ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। মাঠের ও মাঠের বাইরের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এবার সেই আগুনে ঘি ঢাললেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার দাবি বিসিবি প্রেসিডেন্ট বক্সে ক্রিকেটারদের উলঙ্গ করা হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নানা বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার এক অনলাইন নিউজ পোর্টালে মাশরাফি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বক্সে আসলে একজন ক্রিকেটারকে উলঙ্গ করা হয়। পুরো উলঙ্গ করা হয়। এটা উনারাও জানেন। উনারা অস্বীকার করতে পারবেন না। ওখানে আমাদের মানুষরাও থাকেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ভালো সম্পর্কের মানুষও থাকেন। আমরা শুনি।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বক্সে যখন বলা হয়, ‘ওই প্লেয়ার চলে না’, তখন ওই প্লেয়ার আর চলেই না। যেখানেই ভালো খেলুক আর চলে না।’
মাশরাফি আরও বলেন, ‘ক্রিকেটারদের কানে না আসলে আমরা জানলাম কোথাথেকে? অন্য কেউ কথা বলছে না এখন। আমার মতো কেউ ছেড়ে আসুক, তখন সেও বলা শুরু করবে। কারণ, সে জানে কোড অফ কন্ডাক্ট আর নাই। মিলিয়ে দেখবেন তখন।’
আজকের এই ক্ষোভ একদিন বিরাট হয়ে বিষ্ফোরণ ঘটবে যা অত্যান্ত স্বাভাবিক। তার আগে বিসিবিকে সতর্ক হতে হবে। নাহলে তাদের জন্য হোয়াইটওয়াশ অপেক্ষা করছে।