ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৭.০৩.২০২১ ২:০১ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা পঞ্চাশ বছরে পা রেখেছে। গতকাল জাতি পরম উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিবসটি উৎযাপন করেছে। এদিন জাতি পরম শ্রদ্ধায় একই সঙ্গে হৃদয়ের অর্ঘ্য নিবেদন করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর সেনানীদের প্রতি। শ্রদ্ধা জানায় স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। যার দিক নির্দেশনায় জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে রুখে দাঁড়ায়। এজন্য জাতিকে চরম মূল্য দিতে হলেও তারা তা থেকে পিছ পা হননি। বিজয়কে তরান্বিত করতে শত্রুর মোকাবিলা করেছে। যার ফলশ্রুতি আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়। তাদের এই আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। যার রজতজয়ন্তী জাতি গতকাল পালন করেছে। এদিন জাতি নতুন করে শপথ নিয়েছে। স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ।
বিশ্বের নতুন বিস্ময় সৃষ্টি করে তার আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে। তারপরেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা। তাদের সেই ভয়াল ষড়যন্ত্রের কালো থাবা গতকালই জাতি দেখতে পেয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বিপদের বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমণকে লক্ষ্য করে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। ধর্ম ভিত্তিক হাতে গোনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশের শান্তি বিঘ্নিত করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা করে সরকারি সম্পদের ক্ষতি সাধন করেছে। এসময় তারা বিভিন্ন কূটকৌশলে তাদের প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। যা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ। এজন্য তারা বেছে নিয়েছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের শান্ত পরিবেশ। সেই শান্ত পরিবেশে তারা অশান্তি করে আমাদের অতিথিকে অপমানের হীন কৌশল নিয়েছে। তবে আশার কথা জনসম্পৃক্ততা না থাকায় তারা রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের দেশপ্রেমিক প্রশাসন তাদের এই অপকর্ম রুখে দিতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রেখে গেছে তারা সংঘবদ্ধ এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে তাদের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এদিনের পরিকল্পনা তাদের একটি মহড়া বলেই আমরা মনে করি।
বাংলাদেশে সব ধর্ম এবং বর্ণের লোকের বসবাস। আমাদের মহান নেতা জাতির জনক নিজেই বলেছেন, এদেশ ধর্মের নামে, বর্ণের নামে কোনো বিভাজন করা যাবে না। সকলেই রাষ্ট্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েই নিরাপদে বসবাস করবে। রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের প্রচারের বাহন হবে না। জাতির জনকের মতাদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতা, যা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় এসে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনাকে কবর দেওয়া হয়। জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা তখন পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চলে। জাতির পতাকা খামচে ধরে ৭১’র পরাজিত শকুনরা। তাদের উলঙ্গ নৃত্যে জাতি আবার ভুতের মতো পেছনে হাটতে থাকে। তাদের আশির্বাদে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো। তাইতো অবৈধ সামরিক শাসক জিয়ার তত্ত্বাবধানে ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতির উত্থান ঘটে। এভাবে কেটে যায় ২১ বছর।
কথায় আছে কিছু লোককে তুমি কিছু সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখতে পার কিন্তু সারা জীবন কাউকে বোকা বানিয়ে রাখা যায় না। তারই প্রকাশ ঘটে ১৯৯৬ সালে। জাতি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবার জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠায়। এরপর তিনি জাতির প্রকৃত ইতিহাস ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগ পছন্দ হয়নি ৭১’র ঘাতকদের। তাই তারা আবারও ষড়যন্ত্র আটতে থাকে। আমাদের মহান স্বাধীনতার বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলায় জিয়ার বিএনপি। তারা জামায়াতের সঙ্গে আতাঁত করে আবার দেশকে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ২০০১ সালে এই ষড়যন্ত্রকারীদের নীল নকশার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারতে বাধ্য হয়। পরে আবার আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়। এরপর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার মূল ইতিহাসের দিকে জাতিকে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম শুরু করে। ৭১’র মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকৃত সত্যের দিকে জাতিকে টানতে সক্ষম হয়। যার কারণে গতকালের ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তবে আমরা মনে করি এখনও স্বাধীনতার শত্রুরা থেমে নেই। সময় এবং সুযোগ পেলেই তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার হিম্মত রাখে। সেক্ষেত্রে এই ষড়যন্ত্রকারীদের ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। এখনই সময় তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়ার। স্বাধীনতার পক্ষের সকলকে এই যুদ্ধে শরীক হতে হবে। একথা অনীস্বিকার্য এদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতা, দেশের শান্তি কোনভাবেই সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়। আমাদের বিশ্বাস সময় থাকতে সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখবেন।