শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
শিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকার: প্রয়োজন আলাদা মন্ত্রণালয়!
মোশারফ হোসাইন
প্রকাশ: রোববার, ২১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২১.০৩.২০২১ ৫:০৫ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

১৯ মার্চ শুক্রবার বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রবেশ করার পরই এক শিশু এসে শার্ট ধরে টানছে আর বলছে ভাই কিছু দেন...। ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বই মেলায় এসে মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা নেওয়া তার কাজ। রাত ৮টা পর্যন্ত অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘুরে দেখা মিলে প্রায় অর্ধশত শিশুর, কেউ ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত কেউবা পণ্য বিক্রির করছে মেলায়। ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত এক শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় স্কুলে যাওয়া হয়না তার। বই পড়তে পারেনা, তবে বই পড়ার ইচ্ছে আছে। পণ্য বিক্রি করা এক শিশু জানায়, আয়ের টাকা দিয়েই তার পরিবার চলে, পড়াশোনা করার সুযোগ নেই।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর টিএসসি এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় ফুল বিক্রেতা শিশু জিনিয়া। ঢাবির শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ থেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জিনিয়াকে উদ্ধার করে, গ্রেফতার করা হয় অপহরণকারীকে। গত ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করা ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ, গ্রেফতার করা হয় একজনকে। শাহবাগ এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি ও শ্রমের সঙ্গে জড়িত প্রায় শতাধিক শিশু। পুরো শহরে এর সংখ্যা হয়তো কয়েক হাজারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। পথ শিশুরা কতটা নিরাপদ এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন কি না জানার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (শিশু ও সমন্বয় উইং) মো. মুহিবুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। বেশ কয়েকবার ফোন কল ও ক্ষুদে বার্তা দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার শিশুশ্রম নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম ও ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের পরিকল্পনা সরকারের থাকলেও বাস্তবতা একদম ভিন্ন, দেশের জাতীয় শ্রম আইন-২০১৬ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনো প্রকার কাজে নিযুক্ত করা যাবে না, যদি কেউ শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে, তাকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরদের হালকা কাজ করার কথা উল্লেখ থাকলেও দেশের চিত্র ও বাস্তবতা ভয়াবহ। রাজধানীর সবকটি মহাসড়কে লেগুনা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের হেলপার অপ্রাপ্তবয়স্ক। গ্যারেজ, ওয়ার্কশপের দোকান, মিল কারখানা, সিগারেট বিক্রি, ফুল বিক্রি, ফুটপাতে পানি বিক্রি, বাদাম বিক্রি ও হোটেল রেস্টুরেন্টের কর্মচারী এবং মহাসড়কজুড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে অনেক শিশু। এমনকি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের।

রাজধানীতে শিশুরা শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়াচ্ছে। মাদক বহনের মতো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা করেছে, যার মধ্যে গণপরিবহন অন্যতম। এবছর দেশের ৬টি শিল্প খাতকে ‘শিশুশ্রম মুক্ত’ ঘোষণা করেছে সরকার। খাতগুলো হলো রেশম, ট্যানারি, সিরামিক, গ্লাস, জাহাজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, রফতানিমুখী চামড়াজাত দ্রব্য ও পাদুকা শিল্প। শিশুশ্রম নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, শিশুদের ৬ খাতের শ্রম থেকে মুক্ত করলেও শিশুরা শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে ভিন্নখাতে। যার প্রধান কারণ দারিদ্র্যতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দরিদ্র পরিবারের অনেক শিশুরা শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এবং ছিন্নমূল শিশুরা যারা স্কুলে যেতো তাদের যাওয়া বন্ধ হয়েছে। ফলে বড় ধরনের শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে এই করোনাকলে। শিশুদের শ্রম নিরসনে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত শ্রমের সঙ্গে কোন শ্রেণির পরিবারের শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে সরকারের সেটা শনাক্ত করতে হবে। তারা চরাঞ্চল, নদী ভাঙন এলাকার শিশু নাকি শহরের ছিন্নমূল সেটা শনাক্তের পর সে অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক জীবনমান উন্নয়ন ও আশ্রয়ণ কর্মসূচিতে যুক্ত করতে পারে। এরপর স্কুল গড়ে শিক্ষার আওতায় আনতে পারে। সরকার প্রয়োজনে তাদের আলাদাভাবে শিক্ষার আওতায় আনার কর্মসূচি নিতে পারে। এছাড়া অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। এতে শিশুরা তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার পাবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দুটি এক হওয়াতে নারীরাও পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না আবার শিশুরাও পাচ্ছে না। আলাদাভাবে শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় হলে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে শিশুদের যাবতীয় অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]