প্রকাশ: রোববার, ২১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
অপঘাতে মৃত্যুকে পোসমার্টেম করে হত্যার ক্লু নির্ধারনের প্রচলিত একটি নিয়ম রয়েছে। কিন্তু গতকাল বাংলাদেশ টিমের খেলার পোসমার্টেম করা কেবল দুরুহ নয় একটি শক্তএবং কঠিন কাজ। এদিন বোলারদের কৃর্তিত্ব থেকে কোনঅংশেই কম ছিল না ব্যাটারদের উদারতা! একেবারেই আনাড়ির মত ব্যাট চালিয়ে নিজেরাই নিজেদের মৃত্যু ডেকে এনেছেন।
সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশের কোচ-অধিনায়কের কণ্ঠে বারবার একই কথা, দলের পেস আক্রমণ নিয়ে তারা রোমাঞ্চিত। কিন্তু বোলারদের জন্য কিছু পুঁজি তো দিতে হবে ব্যাটসম্যানদের! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে দলের হার একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় বোলাররা বল হাতে নেওয়ার আগেই। এতটাই বাজে ছিল ব্যাটিং।দুর্দান্ত স্কিল আর ক্রিকেটীয় বুদ্ধির খেলায় তামিম ইকবালকে হারিয়ে শিকার ধরেন ট্র্রেন্ট বোল্ট। মোহাম্মদ মিঠুন দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হন বোলারের হাত ছুঁয়ে বল নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে লাগায়। ব্যাটসম্যানদের বাকি সবার বিদায় নিজেদের খামখেয়ালিপনায়।ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল বরাবরই রান প্রসবা। সাম্প্রতিক সময়েও ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখানে রান উঠেছে দেদার। সেখানেই কিনা বাংলাদেশ অলআউট ১৩১ রানে!তিন সংস্করণ মিলিয়েই এই মাঠে আগে ব্যাট করে সবচেয়ে কম রানের দলীয় ইনিংস এটি।উইকেটে এ দিন কিছুটা বাড়তি বাউন্স ছিল, নিউজিল্যান্ডের সব উইকেটেই যা কম-বেশি থাকে। রোদের দেখা তেমন মেলেনি বলে আর্দ্রতাও শুরুতে কিছুটা থাকার কথা। কিন্তু একটু সময় কাটালেই এটা দারুণ ব্যাটিং উইকেট। যারা উইকেটে কিছুটা সময় কাটাতে পেরেছেন, তারা সেটির প্রমাণও পেয়েছেন।বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। ইনিংসের তৃতীয় বলেই দারুণ এক শটে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন তামিম ইকবাল। পরের ওভারে তার ব্যাট থেকেই বাউন্ডারি আসে ম্যাট হেনরির বলে ফ্লিক শটে।তার ও দলের স্নায়ু তাতে থিতু হয়ে যাওয়ার কথা। এরপর ছিল স্রেফ নিজেদের সময় দেওয়ার ব্যাপার।
হয়েছে উল্টো।তামিমকে যেভাবে আউট করেছেন বোল্ট, ক্রিকেটের পরিভাষায় যেটিকে বলে ‘সেট আপ।’ দারুণ কয়েকটি আউট সুইঙ্গারে বাংলাদেশ অধিনায়ককে অস্বস্তিতে ফেলেন এই বাঁহাতি পেসার। আউট হওয়া ডেলিভারিও সুইং করবে ভেবে তামিম চেষ্টা করেছিলেন পা একটু বেশি বাড়িয়ে বলের লাইন কাভার করতে। কিন্তু ওই বল সুইং না করে সোজা ছোবল দেয় প্যাডে। আম্পায়ারের আঙুল উঠতে সময় লাগেনি।কৃতিত্ব এখানে বোলারের, তবে দায় এগাতে পারেন না তামিম। । এভাবে পা আড়াআড়ি বাড়িয়ে তিনি কম তো আউট হলেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে! আর বোধদোয় হবে কবে?
সৌম্য সরকার: তার মত ঘরানার ব্যাটসম্যানদের জন্য এই উইকেট হওয়ার কথা আদর্শ। তিনি নিজে সেটা বুঝতে চাইলে তো! স্রেফ দুটি বল দেখলেন। তৃতীয় বলে লাফানো ডেলিভারিতে অযথাই আপার কাট করতে চাইলেন। ফলাফল, শূন্য হাতে বিদায়।
লিটন দাস : শুরুতে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর লিটন খেলছিলেন বেশ সাবধানতায়। প্রথম ১০ ওভারে তার ব্যাট থেকে বাউন্ডারি আসেনি, ভাবা যায়! আগের সফরে নিউজিল্যান্ডে তিন ওয়ানডেতে তার স্কোর ১, ১, ও ১। এবার সেই বিভীষিকা কাটাতে পারলেও ভালো কিছু করতে পারলেন না। মূল বোলারদের সামলে কাটা পড়লেন জিমি নিশামের মিডিয়াম পেসে। শর্ট অব লেংথ বলে তিনি ব্যাটের মুখ ঘুরিয়ে দিলেন একটু আগেই, অনেকটাই আয়েশি ভঙ্গিতে। নিজের শটে নিজে হতাশা প্রকাশ করলেন বটে। কিন্তু শোধরানোর সুযোগ তো আর বারবার আসে না!
মুশফিকুর রহিম :তার জন্য কিউই পেসারদের কৌশল ছিল শর্ট বল। তাতে বারবার অস্বস্তিতে পড়লেও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোটামুটি সামলে নিলেন। থিতু হলেন। বড় কিছুর আশা জাগালেন। এবং আশার সমাধিও রচনা করলেন। লিটনের মতোই নিশামকে দিলেন উপহার। স্টাস্প সোজা বলে কাট খেলার জায়গাই ছিল না। দেশের অভিজ্ঞতম ওয়ানডে ক্রিকেটার জোর করে কাট খেলে ধরা পড়লেন গালিতে। তার আর শিখতে কতদিন লাগবে?
মিরাজ : মেহেদী হাসান মিরাজ যখন উইকেটে গেলেন, ইনিংসের অর্ধেকের বেশি ওভার তখন বাকি। এমনিতে খুব বেশি ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয় না তার, এরকম ম্যাচই তো সুযোগ নিজের অলরাউন্ড সত্ত্বা মেলে ধরার!পেসারদের হাতে তখন পুরনো বল, এক পাশে তখন আক্রমণে স্পিন। সবই মিরাজের পক্ষে। কিন্তু তিনি নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন বিপক্ষে। মিচেল স্যান্টনারের লেগ স্টাম্পের বল শাফল করে লেগ স্টাম্পেই বোল্ড। অথচ জায়গায় থাকলে আউট হওয়ার উপায়ই নেই ওই বলে।
অভিষেকে মেহেদি : তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উপায় নেই। ৯৪ মিটার লম্বা ছক্কায় ওয়ানডে ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছে। হুক শটে গ্লাভসে লেগে পাওয়া বাউন্ডারিটি সৌভাগ্যের হলেও সাহসের ছোঁয়া সেখানে আছে। উড়িয়ে মারতে গিয়ে তার আউট হওয়াও অস্বাভাবিক নয়, সহজাত আগ্রাসী ক্রিকেটার। তবে বল নির্বাচন তিনি যত দ্রুত শিখবেন, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
রিয়াদ : দলের সর্বোচ্চ রান মাহমুদউল্লাহর, তবে সেটি কেবল ২৭ রান। ক্যারিয়ারের অনেকবার যেমন করেছেন, সেভাবেই লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন। সতীর্থদের হারিয়ে রান বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ হয়েছে। বোল্টের বলে পুল শটে বাউন্ডারি, কাউল জেমিসনকে বেরিয়ে এসে ছক্কা।যে তিনি শটে আউট হলেন, সেটিতে টাইমিংও ছিল ভালো। কিন্তু আরেকটু ওপরে কিংবা একদম নিচে রাখতে পারেননি। মিচেল স্যান্টনারের ক্যাচটিও ছিল দারুণ। মাহমুদউল্লাহকে হয়তো ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দেওয়া যায়।তবে দলের সামগ্রিক ব্যাটিং নিয়ে কেবল ‘ডাউট’ বা সংশয়ই থেকে যায়।