প্রকাশ: রোববার, ২১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে উপযুক্ত সময়েই ক্রেমলিনের সঙ্গে বৈঠক হবে।তখনই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারিন জেন পিয়েরে সাংবাদিকদের এই তথ্য দিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট পিছু হটছেন না; বরং দু’দেশের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বরাবরই স্পষ্টতার পক্ষে। যখন উপযুক্ত সময় আসবে, তখনই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আমাদের প্রেসিডেন্ট।’গত ১৭ মার্চ বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজে একটি সাক্ষাৎকার দেন জো বাইডেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয় বিরোধীদের ওপর রাশিয়ান সরকারের নির্মম আচরণের প্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি ‘খুনি’ বলে মনে করেন কি না?সেই প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ (আমি তাকে খুনি বলে) মনে করি।’ পাশাপাশি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিন হস্তক্ষেপ করেছিলেন অভিযোগ করে সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, এজন্য রাশিয়াকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
বাইডেনের এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পরদিন গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেন ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সবাইকে নিজেদের মতো মনে করেন বলে ওই সাক্ষাৎকারে জানান পুতিন।সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানাতে চাই। আমার বিশ্বাস, খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা অনেক ব্যাপারে অস্পষ্টতা দূর করবে। তবে শর্ত হচ্ছে, এই আলোচনা হতে হবে লাইভ এবং অনলাইনে। অবিলম্বে এটা শুরু করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
পাশাপাশি বাইডেনকে খোঁচা দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। বাল্যকালে যখন আমরা খেলার মাঠে বা উঠোনে বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করতাম, তখন বলতাম যে এটা বলেছে, সে তা করেছে। এখন আমার মনে হয়, ওই কথাটি স্রেফ বাচ্চাদের কথা নয়, মানুষের মানসিক গঠন বিষয়ে গভীর ইঙ্গিত রয়েছে কথাটিতে।’‘আমরা সবসময় অন্যদেরকে নিজেদের বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিচার করি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে, প্রকৃতপক্ষে আমরা যেমন, অন্যরাও তেমনই। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে মূল্যায়ন বা মতামত দাঁড় করাই।’‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি। স্থানীয় আদিবাসীদের হত্যা করে সেখানে বসতি স্থাপন করা, কালো মানুষদের ধরে এনে দাস হিসেবে ব্যবহার করা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলা, এরকম আরো বহু ইতিহাস আছে তাদের।তারা মনে করে আমরাও তাদের মতোই। কিন্তু সেটি সঠিক নয়, আমরা ভিন্ন। আমাদের জেনেটিক কোড থেকে শুরু করে সংস্কৃতি, আদর্শগত মূল্যবোধ সবই তাদের থেকে আলাদা।’সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দীর্ঘায়ুও কামনা করেছেন পুতিন।
এসময় দেশটির সঙ্গে যুগপৎভাবে কাজ করার আগ্রহ জানিয়ে পুতিন বলেন, ‘রাশিয়ার জন্য লাভজনক কিংবা রাশিয়ার মঙ্গলের জন্য উপযোগী সব ক্ষেত্রে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তারা যতই আমাদের উন্নয়ন থামিয়ে দিতে চাক, কিংবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক বা অপমান করুক, রাশিয়া তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না।’এদিকে পুতিনের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকির সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। তারা জেন সাকিকে বাইডেনের আগ্রহের বিষয়ে অবহিত করলে তিনি বলেছিলেন, এই মূহুর্তে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আলাপচারিতা সম্ভব নয়, কারণ রাষ্ট্রীয় কাজে তিনি এখন ‘অতিমাত্রায় ব্যস্ত’।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি তখন বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনের একদফা কথা হয়েছে, এখনো বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গেই যা হয়নি। আর তাছাড়া, প্রেসিডেন্ট এখন অত্যন্ত ব্যস্তআছেন। আগামীকালই(গতকাল শনিবার) বিশেষ কাজে জর্জিয়া যাচ্ছেন তিনি।’তবে শনিবার দৃশ্যত আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে হোয়াইট হাউস। রাশিয়ার সঙ্গে যুগপৎভাবে কাজ করতেও বাইডেন প্রশাসন আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ক্যারিন জেন পিয়েরে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কথার প্রতিধ্বনিই করেছেন হোয়াইট হাউস মুখপাত্র।ক্যারিন বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন নীতি অবলম্বন করে এটা সত্য; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িয়ে আছে এমন ইস্যুগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে যুগপৎভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো আপত্তি নেই।