নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে জয়ের লক্ষ্যে এবার খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। সিরিজটি শুরুর আগে ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ থাকার কথা বলেছেন টাইগারদের কোচ, অধিনায়করা। কিন্তু মাঠের খেলায় দেখা গেল ঠিক বিপরীত চিত্র। হেসেখেলে টাইগারদের হারিয়েছে কিউইরা।
স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চরম ব্যাটিং ব্যার্থতার পর বোলিংয়েও খুব একটা আশা দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। সফরকারীদের দেওয়া ১৩১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২১.২ ওভারেই জয় তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের দেওয়া ১৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ওপেনার মার্টিন গাপটিল। মোস্তাফিজের করা প্রথম ওভারেই চার আর ছয়ের মারে তুলে নেন ১০ রান। দলীয় ৫০ রান পূরণ করতে নেন মাত্র পাঁচ ওভার। তবে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে তাসকিনে কাটা পড়েন গাপটিল। আউট হওয়ার আগে ৩ চার ও ৪ বিশাল ছয়ের মারে মাত্র ১৯ বলে করেন ৩৮ রান।
অভিষেকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ডেভন কনওয়ে হেনরি নিকলসের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ৬৫ রান। কিন্তু জয়ের জন্য মাত্র ১৩ রান বাকি থাকতে ২৭ রানে আউট হন কনওয়ে। এরপর নিকলসের সঙ্গে বাকি কাজটুকু শেষ করেন আরেক অভিষিক্ত উইল ইয়ং। ইনিংসের ২২তম ওভারের জোড়া চার মেরে ম্যাচ শেষ করেন উইল ইয়ং। নিকলস অপরাজিত থাকেন ৫৩ বলে ৪৯ রান করে। ইয়ং করেন ৬ বলে ১১ রান।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বল উড়িয়ে তামিম ইকবাল হয়তো বোঝাতে চেয়েছিলেন দিনের বাকি সময়টা বেশ ভালোই যাবে। ওই ছক্কা হাঁকিয়েই দলের ও নিজের রানের খাতা খুলেছিলেন তামিম। কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের বিধ্বংসী বোলিং আর ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে দিনের সূর্যটা মেঘে ঢাকা পড়েছে। ৪১.৫ ওভারে মাত্র ১৩১ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
ডানেডিনের উইকেট সিম মুভমেন্ট। তাই নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট সাউদিকে বিশ্রামে রেখে খেলিয়েছেন ম্যাট হেনরিকে। যার মূল দক্ষতা সিম মুভমেন্ট। এদিকে সুইংয়ের জন্য তো ট্রেন্ট বোল্ট আছেই। সেই বোল্টের কাছেই পরাস্ত হয়ে একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।
ইউনিভার্সিটি ওভালের ছোট মাঠে জন্মদিনে খুব একটা ঝলক দেখাতে পারলেন না তামিম। বোল্টের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই এলবির ফাঁদে পরে ১৫ বলে ১৩ রান করে ফিরেছেন তিনি। এরপরে টপ অর্ডারে ব্যাট করেতে এসে সৌম্য টিকলেন মাত্র তিন বল। বোল্টের করা বলেই ডেভন কনওয়ের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে শূন্য রানে ফিরলেন তিনিও। ১৯ রানে তখন দলের দুই উইকেট নেই।
তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ধীরগতিতে রান তুলতে থাকলেও বেশিক্ষণ আশা দেখাতে পারেননি এ জুটি। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৪২ রানের মাথায় জেমস নিশামের বলে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে আসেন লিটন। আর প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা মুশফিকুর রহিমও সম্মানজনক স্কোরে নিয়ে যেতে পারলেন না দলকে। দলীয় ৬৯ রানের মাথায় ৪৯ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলে স্লিপে থাকা মার্টিন গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর দলের স্কোরবোর্ডে মাত্র তিন রান যোগ হতেই রান আউট হয়ে ফিরতে হয় মোহাম্মদ মিঠুনকে। এরপর উইকেটে আসা মেহেদি হাসান মিরাজ উইকেটে টিকতে পারলেন না খুব বেশি সময়। মিচেল স্যান্টনারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মাত্র এক রান যোগ করতে পেরেছিলেন নামের সঙ্গে।
এরপর তাসকিনকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ সময়ের জুটি গড়ে রিয়াদ করেছেন ২৭ রান। দলের পক্ষে এটাই সর্বোচ্চ রানের স্কোর। আর তাসকিন করেছেন ৩২ বলে ১০ রান। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটিটাই টাইগারদের ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি।
কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট। ৮.৫ ওভার বল করে মাত্র ২৭ রানের বিনিময়ে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, হাসান মাহমুদ এবং তাসকিনের উইকেট নেন তিনি।
ভোরের পাতা/কে