ফের রাজধানী দখলে নিচ্ছে মশা। দুই ডানাবিশিষ্ট এই পতঙ্গদের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না রাজধানীবাসী। চলছে মানুষ ও মশার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কে মরবে আর কে মারবে তা আপাতত রেফারি হয়ে দেখছেন দুই নগরনেতা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও উত্তরের মেয়র আতিকÑ এমনটাই বলছে মশার কামড়ের শিকার রাজধানীবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে রাজধানীবাসীরা লেপ মুড়িয়ে শীতনিদ্রায় যায়, আর সে সুযোগেই হানা দেয় মশা। কিন্তু, শীতের এই পতঙ্গ চষে বেড়াচ্ছে এই গরমেও! গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বর্তমানে ঢাকায় মশার পরিমাণ বেড়েছে চারগুণ।
কেবল ঢাকাতেই নয়, দেশের অন্য মহানগরগুলোও উড়ে বেড়িয়েছে মশা। ল্যান্ড করছে নিরাপদে। মশা মারতে রাজধানীবাসী কয়েল জ্বালিয়ে, টেনিসের ব্যাট হাতে, নারকেলের ছোবলা পুড়িয়ে কামান দাগালেও কোনো লাভ হয় না। কারণ, কামান দাগানোর আগেই মশাদের থাকার ব্যবস্থা গড়ে রাখেন নগরবাসীরা। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে, ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর পাশাপাশি টবের নিচে পানি রেখে মশারই আবাস্থল গড়ে তুলছেন তারা। নগরবাসী এসব স্বীকার না করলেও এমনটাই বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ওষুধ-কয়েল জ্বালিয়েও রেহাই পাচ্ছে না রাজধানী ঢাকার কোটি মানুষ। এ যেন ছায়াবাজী। মশা নিয়ন্ত্রণ করার যেন কেউ নেই।
এদিকে, মশা নিয়ন্ত্রণে শত কোটি টাকা বরাদ্দেও সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। মশার বিরুদ্ধে ইলেক্ট্রিক টেনিস ব্যাট হাতে দীর্ঘদিন যাবত লড়ে যাওয়া ধোলাইপাড়ের হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মশারা তাদের লড়াইয়ের টেকনিক বদলেছে। ব্যাট দিয়ে কয়েকবার চার-ছয় মারার চেষ্টা করলেও আউট হয়ে যাচ্ছি জিরোতেই। কখনো ব্যাটের আগায়, কখনো কয়েলের আগায় বল নিয়ে বসে থাকে এই প্যান প্যান বাহিনী। ফলে, নিজেদেরই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে মশারীর জাল টানাতে হয়। জাল লাগিয়েও নিস্তার হয় না। জালের ফাঁক দিয়ে ঢুকে কানের কাছে গান করে মশক একাদশ। কয়েকবার ক্যাচ ধরার চেষ্টা করলে ভোরে দেখা যায়, মাত্র তিন চার উইকেট পড়ে মশার।’ মশারা কেন সিটি করপোরেশনে গিয়ে মশা মারার কেরাণীদের কামড়াচ্ছে না- এমন অভিযোগ তুলে যাত্রাবাড়ীর আরেক বাসিন্দা এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শালার মশা খালি আমাগোর রক্তের জুসই খায়। কিন্তু যারা তাগোরে মারার নামে আমাগোর টাকার শ্রাদ্ধ কইরা কামান লইয়া আহে- তাগোর রক্ত তো খাইবার পারে না! সন্ধ্যার সময় হেরা কীটনাশক মারে নাকি ধোঁয়া ছাড়ে কিছুই বুঝি না। দেখলেই খালি কান্না পায়।’
মশারা যেন ডানাওয়ালা পাখি তাই, মানুষের আইন কানুন সব তুচ্ছ করে ফ্লাই করছে যার তার শরীরে বিমানের মত। এদিকে, মশা দমনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট চলানোর দাবি করলেও মশাদের দুনিয়ায় মোবাইল বস্তুটি না থাকায় আইন অমান্য করে চলেছে দেদারছে। অন্যদিকে এখনো মশা কমার গ্যারান্টি দিয়ে চলেছেন দক্ষিণের মেয়র তাপস। কীটনাশক, ফগিং, জাদুটোনা কিছুতেই বশে আনতে পারছেন না দুই মেয়র। মশারা রক্ত খেতে খেতে ইতোমধ্যে খেয়ে ফেলেছে ঢাকার এক মেয়রের পদও। মশক দমনের অভিযান করে ডেংগুবীর উপাধি পেলেও।
এই মশারাই খেয়ে দেয় সাবেক বীর মেয়র খোকনের পদ। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট প্রাণী বলে মশাদের অবহেলা করা ঠিক নয়। না জানি রক্ত খেতে খেতে আর কি কি খেয়ে ফেলে এরা! এরই মধ্যে মেয়রদের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে অনেক রাজধানীবাসী নেমে পড়েছেন কবিরাজি-বিদ্যায়। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাকে প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে পেশা হিসেবেও নিয়েছেন। রাজধানীবাসী বলছেন, মেয়রদের আশায় আর বুক বাঁধতে রাজী নন তারা। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা ইতিহাসবিদরা বলছেন, রাজধানীর বুক থেকে ধীরে হাকিম-কবিরাজ হারিয়ে গেলেও মশাদের কবিতা ঠেকাতে ধীরে ধীরে ফিরে আসছে তারা।
কেউ বাটছেন পুদিনা পাতা, কেউ পুড়াছেন নারকেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও চলছে নানারকম মশা মারার কবিরাজী দাওয়াই আর টোটকা। ফেসবুকে নিত্যদিন আবিষ্কার হচ্ছে মশা বিষয়ক কাব্যপ্রতিভাও। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিগত বছরের জুন মাসে রমনা লেক, খিলগাঁয়ের বটতলা ঝিলসহ তিনটি জলাশয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাষ হওয়া মশা তাড়াতে তেলাপিয়া মাছ ও হাঁস ছাড়লেও লাভ হয়নি। উল্টো মশারাই হাঁস, তেলাপিয়া তাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।