শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বঙ্গবন্ধুর অবমাননা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৯.০৩.২০২১ ২:২৩ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লোকের ঘাপটি মেরে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ফলে ব্যাংকগুলোতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লোকের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র সংকলিত না করে বরং বইটিতে তদানীন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন করায় প্রশ্নের জন্ম হওয়াই স্বাভাবিক। এটি সচেতন ভাবে হয়েছে না কি অসচেতনতায়, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসান ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলে আদালতে তখন রিট করেছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় বইটির লেখক ও প্রকাশকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি করে তারা যে অপরাধ করেছিল, পরে ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক ও আপ্রাণ প্রচেষ্টার কারণে তা ম্লান হয়ে গেছে। বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতের রায়কে আমাদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো বই প্রকাশ করলে এবং তা যদি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস সংক্রান্ত, তাহলে সেখানে ইতিহাস বিকৃতির মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। ইতিহাস বিকৃতির মতো কোনো ঘটনা ঘটলে নিশ্চই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে জাতির পিতার ছবি না থাকাটা মেনে নেওয়া যায় না। যদিও পরবর্তীতে এ ভুলের সংশোধন করা হয়। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, দেশে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের ডালাপালা ক্রমশ ভিন্ন উপায়ে প্রতিশোধ নিতে সরকারি নানান প্রতিষ্ঠানে ছদ্মবেশে ঢুকে পড়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলতে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লোকজন কর্মরত আছে কি না, সূক্ষ্ম একটি তদন্ত চালালেই তা বের হয়ে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। রাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তা এমন ভুল কী করে করলেন, তা এক রহস্যঘন ব্যাপার।

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়। তখন থেকেই মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। বইটি নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পান্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি পান্ডুলিপি চূড়ান্তের পর বইটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশনার পর পরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এর বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং রিভিউয়ের জন্য ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন।  

উল্লেখ্য, এর মধ্যে দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি, এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বইটিতে তদানীন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং যা সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বইটির সম্পাদককে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

পরিশেষে বলতে হচ্ছে, প্রকৃত ইতিহাস থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। ফিরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। তবে নিদারুণ দুঃখের কথা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঘাতকদের বুলেটে নিহত হওয়ার পর বর্বর পাকিস্তানি ভাবাদর্শের লোকজন বাংলাদেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর হেন কোনো চেষ্টা নেই যা করেনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরদিন এদের ক্ষমতা ও লিপ্সা বাড়বাড়ন্ত হয়ে ওঠে। আশ্চর্য হয়ে ভাবতে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ের যিনি সম্পাদনা করেছেন, তিনি বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম বেমালুম ভুলে গেলেন। আইয়ুব খান এবং মোনায়েম খানের নাম তিনি ভোলেননি। কি আশ্চর্য ঘটনা! এও বলতে হচ্ছে, সম্পাদকের বুকের পাটায় কত সাহস, বঙ্গবন্ধুর কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস দেখালেন। এসব ঘটনা যথেষ্ট আলোচনা ও পর্যালোচনার দাবি রাখে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপারে সরকারের স্বচ্ছ ধারণা থাকাটা আবশ্যক।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  বঙ্গবন্ধু   অবমাননা   হৃদয়   রক্তক্ষরণ   বাংলাদেশ ব্যাংক  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]