বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
স্বাধীনতাযুদ্ধে পীর মাশায়েখ
সাবেক কমান্ডার মজিবুর রহমান
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৯.০৩.২০২১ ৩:২১ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

সবুজ-শ্যামলে ঘেরা পূর্বে বাংলাদেশের আয়তন ছিল ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কি.মি তবে সম্প্রতি ভারতের কাছ থেকে পাওয়া ২৮,৪৬৭ বর্গ কি.মি এবং মায়ানমার এর কাছ থেকে পাওয়া ৭০,০০০ বর্গ কি.মি সমুদ্র সীমাসহ বর্তমানে বাংলাদেশের আয়তন ২,৪৬,০৩৭ বর্গ কি.মি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে একাত্তরের ছাব্বিশ মার্চ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

স্বাধীনতা প্রতিটি জাতির গৌরব ও অহঙ্কারের বিষয়। ছাব্বিশ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় একটি দিবস। স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে উনিশ’ একাত্তরের ছাব্বিশ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। দেশের মজলুম জনগণের স্বার্থে স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের অনেক ওলামায়ে কেরাম তাদের জান-মালসহ সর্বশক্তি দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম সমাজের কোনো অবদান নেই। এমনটি মনে করার কোনো অবকাশ নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেমদের অবদান অনস্বীকার্য। অপরদিকে অনেক আলেমও এমন ধারণার শিকার। তাই যে কোনো দাবিতে আমাদের যেমন ঐতিহাসিক জোর নেই, তাদেরও তেমন দাবি পূরণের ইচ্ছা নেই। ফলে আলেম সমাজ স্বদেশে, স্বজাতির মধ্যে থেকেও এক ধরনের বিদেশি ও ভিন্ন জাতির মতো বসবাস করছেন। অথচ বাস্তবতা এমন নয়।

আজাদী আন্দোলন, সিপাহী বিপ্লব, ইংরেজ খেদাও আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ দেশ ও জনগণের স্বার্থে সকল কার সংগ্রামে আলেম সমাজ ছিলেন অগ্রগামী। সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে, লাশ পড়েছে আলেমদের। অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সমাজের ওলামায়ে কেরামই। বক্ষমান নিবন্ধে সে ইতিহাস খানিকটা জাতির সামনে উপস্থাপন করার প্রয়াস।একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ‘জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের’।

পাকিস্তানিরা ছিল জালিম, এদেশের নিরীহ মানুষ ছিল মজলুম। বিবেকসম্পন্ন কোনো মানুষ কখনও জালিমের পক্ষাবলম্বন করতে পারে না। মজলুমকে সাহায্য করা, তাদের পক্ষে কথা বলা এটাই মনুষত্বের পরিচয় এবং ঈমানী দায়িত্ব। আর সে ঈমানী দায়িত্ব পালনার্থেই আলেম সমাজ এদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষকে পাকিস্তানি জালিম শাসকদের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজপথে যুদ্ধ করেছেন। কাজ করেছেন দেশপ্রেমিক হয়ে। অসংখ্য উলামায়ে কেরাম তাদের জান-মাল, সর্বশক্তি দিয়ে এ দেশের মজলুম জনগণের স্বার্থে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে উলামায়ে কেরামদের অবদান অনস্বীকার্য।
স্বাধীনতাযুদ্ধে উলামায়ে কেরাম ছিলেন মুক্তিকামী মানুষের সিপাহসালার।

বাংলাদেশের বিখ্যাত আলেম ও বুজর্গ ছারছীনার মেঝপীর হাদিয়ে মিল্লাত আল্লামা শাহ মোহাম্মাদ সিদ্দিক রহ. সে সময় স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, এ যুদ্ধ ইসলাম আর কুফরের যুদ্ধ নয়, এটা হলো জালেম আর মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা জালেম, এদেশের বাঙালিরা মজলুম। তাই সামর্থ্যের আলোকে সকলকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং এটাকে প্রধান কর্তব্য বলে মনে করতে হবে এই বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মুক্তি কামী মজলুম মানুষকে নির্দেশ দেন।

তখন হুজুর (রাহ.) কে প্রশ্ন করলাম; হুজুর এ যুদ্ধে আমাদের ভূমিকা বা কর্তব্য কি? তখন হুজুর আমাকে বললেন পাকিস্তানি জালিম হানাদার বাহিনীর জুলুম থেকে এ দেশের মানুষকে রক্ষা করা অবশ্যই তোমার আমার সকলের কর্তব্য। তাই বসে থাকার আর সময় নেই, জালিমদের কবল থেকে মজলুমদের বাঁচানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কর। এ দেশের নিরীহ জনগণকে সহযোগিতা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।  সে সময় হুজুর বলেছিলেন, ‘হুব্বুল ওয়াতান মিনাল’ ঈমান অর্থাৎ ‘দেশপ্রেম ঈমানেরে অঙ্গ। তার এ কথার উত্তর শুনে আমি বেশ অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও মুক্তিযুদ্ধে শরিক হয়ে গেলাম। মেঝপীর সাহেব হুজুরের নির্দেশে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নুর মোহাম্মদ হাওলাদার , সাবেক মেয়র মরহুম দেলোয়ার হোসেন, আবদুস সালাম পিন্টু, নুরুজ্জামান, মজিবুর রহমান , কাজী সাখাওয়াত হোসেন ও হাফেজ মাহবুব সহ আরো অনেকে।

তিনি সমর্থ্য অনুযায়ী  সর্বদাই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন , তিনি ৯ নম্বর সেক্টর  কমান্ডার মেজর এম.এ জালিল কে নগদ বেশ কিছু অর্থ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। স্থানীয় হিন্দু, নিরীহ সাধারণমানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মেঝ পীর সাহেব হুজুরের কাছে স্বর্ণ-রোপ্য, টাকা-পয়সা সহ মূল্যবান মালামাল গচ্ছিত রেখেছিলেন যাতে প্রায় একটি রুম পূর্ণ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল যুদ্ধ পরবর্তীতে অনেককেই পাওয়া না যাওয়ায় হুজুর নৌকায় করে তাদের বাড়িতে গিয়ে সে সম্পদগুলো তাদের উত্তরাধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দিয়েছেন।

আড়াইহাজার থানার কমান্ডার মরহুম শামসুল হকের অধীনে আল্লামা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী (রাহ.) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যখন আমি লালবাগ মাদরাসার ছাত্র তখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। যুদ্ধ শুরু  হলে আমার মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়।

হযরত মাওলানা মুফতি মাহমুদ (রাহ.) ও বাঙালি মুসলমানদের পক্ষে ছিল। তার বক্তব্য ছিল বাঙালিদের পক্ষে। মাওলানা আব্দুস সালাম তিনি বলেন, ৭১ সালে আমি করাচি ইউসুফ বিন নুরী মাদরাসার ছাত্র। একদিন মুফতি মাহমুদ সাহেব মাদরাসায় এলে তাকে এক নেতা শেখ মুজিব সম্পর্কে বলেছিল শেখ মুজিব গাদ্দারকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। তাকে এখনই হত্যা করা হবে তখন মুফতি সাহেব হুজর রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেন শেখ মুজিব গাদ্দার নন; তিনি একজন দেশপ্রেমিক মুসলমান।

মুফতি মাহমুদ (রা.) ১৩ মার্চ এক বক্তব্যে পরিষ্কার ভাষায় পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানের নীতিকে ভুল আখ্যা দিয়ে  শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরর আহ্বান জানান। ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগঠক হিসেবে এবং এদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহ ও সহযোগিতায় আলেম সমাজেরও ভূমিকা আছে। কারণ সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন অসংখ্য উলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখগণ। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন, ছারছীনার মেঝপীর আল্লামা শাহ মোহাম্মাদ সিদ্দিক রহ. আল্লামা আসআাদ মাদানী রাহ. আল্লামা লুৎফুর রহমান বরুণী র. চরমোনাইর পীর ইসহাক র. আল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ, আল্লামা মুফতি নুরুল্ল্যাহ র. আল্লামা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী র. আল্লামা শামসুদ্দিন কাসেমী র. প্রমুখ।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অবিসাংবাদিত মুসলিম নেতা বিশ্বের প্রখ্যাত আলেম আওলাদে রাসুল সাইয়্যেদ আসয়াদ আল মাদানী র.-এর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। যখন পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর বর্বোরোচিত হামলা চালালো তাৎক্ষণিক তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেন এবং নিরীহ বাঙালিদের পক্ষে  জোরালো বক্তব্য রাখলেন। উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হলো মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তারা মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের সিপাহসালার হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]