নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌর এলাকায় মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সিএনজি চালক ও যুবলীগ কর্মী আলাউদ্দিনের পরিবারের মামলা নিচ্ছেনা পুলিশ বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
এদিকে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলকে আটক করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এদিকে গত বৃহস্পতিবার দিনগত সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মিজানুর রহমান বাদলকে আটক করা হয়েছে বলে পোস্ট দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। তবে, কোন মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে তা জানাননি তিনি।
গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত আলাউদ্দিনের মা মরিয়মের নেছা ও ছোট ভাই এমদাদ হোসেন, এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জাকে দায়ী করে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও নিহতের পরিবারের হত্যা মামলা পুলিশ রুজু না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যদিও একই ঘটনায় জড়িত অপরপক্ষ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বা তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
মিজানুর রহমান বাদলের ছোট ভাই রহিম উল্যাহ বিদ্যুত বলেন, ‘ভাইয়া নিজেই নোয়াখালী ডিবি পুলিশের হাতে ধরা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন কাদের মির্জাকে গ্রেফতার করছে না। তাই তিনি নিজে ধরা দিয়েছেন।’
গতকাল বুধবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় তিন নম্বর আসামি করা হয় মিজানুর রহমান বাদলকে।
নিহতের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মামলা নিয়ে আমি থানায় যাই। পরে আমি মামলার স্লিপটি ওসি সাহেবকে দিছি। ওসি সাহেবকে দেওয়ার পর, প্রথম আসামি তারা মির্জার নামটা দেখার পর ওসি সাহেব বলে মির্জার নামটি কেটে দিলে তারা মামলা নিবে। কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। এখন থানায় মামলা রুজু না করায় নিহতের পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করবে বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য জেলা পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও ওসি তদন্তকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউই ফোন ধরেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) দিপক জ্যোতি খীসা বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
তবে বৃহস্পতিবার রাতে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেছিলেন, ‘মামলা রেকর্ড হয়নি। এজাহারে সমস্যা আছে। ওনাকে বলা হয়েছে। পরে উনি ঠিক করে আনবেন বলেছেন।’
অপরদিকে, বসুরহাট ও চাপরাশিরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির ও সিএনজিচালক আলাউদ্দিন নিহত হওয়ার পর গোটা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বসুরহাট পৌরসভার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে না পেরে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন।
এজন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বসুরহাট পৌর এলাকায় সাধারণ মানুষের জানমাল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত ৩০০ পুলিশ ও র্যাবের দুটি টিম নিয়মিত টহল দিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব ও পাশের রেডক্রিসেন্ট আঙ্গিনা ঝাড়ুদার আবু তাহের বলেন,
‘আনুমানিক পৌনে ৪টার দিকে মিজানুর রহমান বাদল রেডক্রিসেন্ট অফিস সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসে চা খাওয়া অবস্থায় একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে থামে। গাড়ি থেকে চার-পাঁচজন নেমে তাকে (বাদল) কথা আছে বলে গাড়িতে উঠিয়ে পশ্চিম দিকে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়িতে থাকা লোকজনের গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল না; তবে একজনের হাতে ছোট একটি অস্ত্রের মতো ছিল।’
গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দলের দু’গ্রুপের অনুসারীরা বসুরহাট বাজারের বিভিন্নস্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আহত হন ওসি মীর জাহিদুল হক রনিসহ চার পুলিশ। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ সিএনজি চালক ও স্থানীয় যুবলীগ কর্মী মো. আলাউদ্দিন মারা যান।