প্রকাশ: শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৩.০৩.২০২১ ৩:৪৬ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় ১০বছর ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তিনি এক টাকাও বেতন নেন না। তার না আছে গাড়ি, না আছে স্থাবর সম্পত্তি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই প্রকাশ্যে এসেছে এসব তথ্য।
কলকাতার ভবানীপুর আসন ছেড়ে এবার নন্দীগ্রাম থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী মমতা। এ লক্ষ্যে গত বৃুধবার রাজ্যের হলদিয়ার নির্বাচন দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় হলফনামার মাধ্যমে প্রার্থীকে নিজের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা জানাতে হয়। সেই নিয়ম মেনেই স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন মমতা।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই শীর্ষ নেত্রীর হলফনামায় বলেছেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে তার আয় ছিল ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭০ টাকা। ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে বার্ষিক আয় ছিল ২০ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা। তারও আগের তিনটি আর্থিক বছরের আয়ের বিবরণও রয়েছে ওই হলফনামায়।
বিবরণ বলছে, মমতার সর্বোচ্চ আয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই। মনোনয়ন পেশের সময় পর্যন্ত মমতার হাতে নগদ রয়েছে ৬৯ হাজার ২৫৫ টাকা। প্রকাশ্যে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণও। কয়েকটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেট মিলিয়ে মমতার মোট অস্থাবর সম্পত্তি ১৬ লাখ ৭২ হাজার ৩৫২ টাকা ৭১ পয়সা। যা গত বিধানসভা নির্বাচনে পেশ করা সম্পদের প্রায় অর্ধেক। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজের সম্পদের পরিমাণ ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বলে জানিয়েছিলেন মমতা। অর্থাৎ তৃণমূলের এই শীর্ষ নেত্রীর সম্পদ কমেছে প্রায় ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ।এবার পেশ করা হলফনামা অনুসারে মমতার হাতে নগদ রয়েছে ৬৯ হাজার ২৫৫ টাকা। ব্যাংকে রয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে ১৮ হাজার ৪৯০ টাকা। অলঙ্কার রয়েছে ৪৩ হাজার ৮৩৭ টাকার। গতবারের তুলনায় এবার লক্ষ্যণীয় ভাবে কমেছে তার ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ।
গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতার ব্যাংকব্যালান্স ছিল ২৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা। কমেছে অন্যান্য বিনিয়োগের পরিমাণও। এছাড়া ৯ গ্রামের কিছু বেশি পরিমাণ অলঙ্কারও রয়েছে তার।হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মমতার কোনো গাড়ি নেই। নেই কৃষিকাজের জমিও। এছাড়া বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত হয় এমন জমিও নেই তার। এমনকি পৈতৃক সূত্রে কোনো সম্পত্তির মালিকও নন মমতা। ব্যাংকে তার নামে কোনো খেলাপি ঋণও নেই। প্রায় ১০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা দায়িত্বপালন করলেও রাজ্য সরকরের কাছ থেকে তিনি এক টাকাও বেতন নেন না। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার বেতন হল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। তবে সেই বেতন তিনি তা গ্রহণ করেন না। গত বছরের মার্চের ৩১ তারিখ একটি টুইট করেছিলেন মমতা।
সেখানে তিনি লিখেছিলেন, বিধায়ক ও মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলেও আজ পর্যন্ত তিনি তার বেতন হাতে নেননি। নিজের সব টাকা সমাজকল্যাণে ব্যবহার করেছেন।
টুইটে তিনি আরও লিখেছিলেন, বেশ কয়েকবার সাংসদ হয়েছিলেন। সে কারণে আজও তিনি পেনশন পান। সংসদ থেকেও পেনশন তোলেননি। তিনি জানিয়েছিলেন, আমি খুব ছোট জায়গা থেকে এসেছি।
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে হলফনামায় মমতা জানিয়েছেন, ১৯৮২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ থেকে আইনে স্নাতক হন তিনি। তার আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য একটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও রয়েছে তার।ভারতের সব থেকে কম সম্পদশালী মুখ্যমন্ত্রীদের একজন পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দোপধ্যায়। এবার আরও কমল তার সম্পদের পরিমাণ। যা গোটা ভারতে নজির বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।