শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মেরাজ
শাহ্ মোহাম্মাদ শামছুদ্দিন
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১২.০৩.২০২১ ২:১৭ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

বিজ্ঞানের যত বেশি আবিস্কার সংঘটিত হচ্ছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের কিছু কিছু জিনিসের মর্মার্থ বোঝা ততো সহজ হচ্ছে। কারণ বিজ্ঞান কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু নয়। বরং বিজ্ঞান পবিত্র কোরআনেরই একটি অংশ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, বিজ্ঞানময় কোরআনের শপথ (সুরা ইয়াছিন, আয়াত: ০২)। প্রত্যেক নবী-রাসূলের জীবনেই কিছু না কিছু মুজিজা বা অলৌকিক ঘটনা থাকে। মহানবী (সা.) এর মুজিজাসমূহের মধ্যে মেরাজ অন্যতম। এটি এমনই একটি ঘটনা, যার সাথে রয়েছে ঈমানের গভীরতম সম্পর্ক। কাজেই মেরাজের বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজতে যাওয়া একটি অবান্তর চিন্তা।

বলা বাহুল্য, যুক্তি কোনো দিনই ঈমানের ভিত্তি নয়, ঈমানই হচ্ছে যুক্তির ভিত্তি। বরং যুক্তির মতা যেখানে শেষ ঈমানের যাত্রা সেখান থেকেই শুরু। তার পরও কোনো কোনো মহৎ ব্যক্তির এ ব্যাপারে যুক্তির অবতারণা সেটা শুধু ঈমানের স্বাদ অনুভব করার জন্যই। বিজ্ঞানের এ চরম উৎকর্ষের যুগে আমরাও তাই মেরাজকে বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ করে দেখতে চাই। তাই তিনি তার রাসুল (সা.) কে মিরাজের মতো একটি বিস্ময়কর মু’জিযা প্রদান করেছেন, যা চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহ বিজয়ী বিজ্ঞানীদেরকে হতভম্ব করে দিবে। আজ উম্মতে মুহাম্মদীরা মহাকাশ নিয়ে এমন গবেষণা করছে যা অন্য কোন নবীর উম্মত করে নাই। যদি মিরাজের ঘটনা না ঘটতো তাহলে মহাকাশ বিজয়ের সাফল্যর একক দাবীদার হতো আজকের বিজ্ঞানীরা। আর কতিপয় ধর্মবিমুখ বিজ্ঞানী এ বিষয়ে ধর্মের উপর অপারগতা, অসম্পূর্ণতার কাছে ধর্ম অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়ার সম্ভাবনাই দেখা দিতো। তাই আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবকে শুধু মহাকাশ নয় বরং সাত আসমান পার করিয়ে সিদ্রাতুল মুনতাহার পর্যন্ত সফর করিয়েছেন। যা বিজ্ঞানীদের নিকট শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।

কিভাবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবীকে আকাশের লক্ষ কোটি গ্যালাক্সি, ছায়াপথ, নিহারিকাপুঞ্জ, ধুমকেতু, ব্ল্যাক হোল ইত্যাদি পার করিয়ে উর্ধ্ব আকাশে সর্বশেষ স্থানে উপনিত করেছেন। বিজ্ঞানের জয় যাত্রার গোড়ার দিকে কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক মেরাজের সত্যতা নিয়ে কতিপয় প্রশ্ন তুলে ধরেছেন।

তারা বলেছেন,

১. Gravitational force বা মধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে কোনো ব্যক্তির পক্ষে উপরে উঠা সম্ভব নয়।

২. জড় জগতের নিয়ম শৃঙ্খলায় আবদ্ধ স্থূলদেহী মানুষের পক্ষে আকাশের বায়ু শুন্যস্তর ভ্রমন করা অসম্ভব কেনো না মধ্যাকর্ষণ শক্তি স্থুলদেহ সম্পূর্ণ বস্তুকে নিচের দিকে আকর্ষণ করে থাকে।

৩. বায়ুস্তর পার হওয়ার পর অক্সিজেন থাকে না আর অক্সিজেন ব্যতীত মানুষের পক্ষে বেচেঁ থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং কোনো মানুষের দ্বারা মিরাজ সংঘটিত হওয়া অসম্ভব।

বিজ্ঞানের আশ্চর্য সব তথ্যে ও আলোকে মিরাজের ঘটনা প্রমাণ করা যায় অনায়াসেই। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, মধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে উপরে উঠা সম্ভব নয় প্রাচীন বিজ্ঞানীদের এ ধারণা সঠিক নয়, কেননা গতি বিজ্ঞান ফুহধসরপং এর তত্ত্বানুসারে- a bullet fired from the earths surface with a speed of 6.90 miles a second or more will fly nito space.[The universe around US] অর্থাৎ পৃথিবী হতে একটি বুলেটকে যদি প্রতি সেকেন্ডে ৬.৯০ অথ্যাৎ প্রায় ৭ মাইল বেগে উর্ধ্ব পানে নিক্ষেপ করা হয় তবে তা মধ্যাকর্ষণ শক্তি ছিন্ন করতে সক্ষম হবে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে (Escap velocity) মুক্ত গতি বলে আর যদি এখানে বুলেটের গতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল হয় তাহলে এখানে (Gravitational force) মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রতিবন্ধকতা আলোচনা নিরর্থক। কেননা রাসুল (স.) এর মিরাজ যাত্রা হয়ে ছিল বুরাকে চড়ে। আর বুরাক শব্দটি আরবী (বারকুন) শব্দ থেকে নিঃসৃত। এর শাব্দিক অর্থ বিদ্যুৎ। আর বিদ্যুতের গতি হলো প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। আরবীতে বিদ্যুৎ গতির চাইতে দ্রুত গতি বোঝানোর জন্য অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার হয় নাই। তাই আরবীতে (বারকুন) শব্দের Suparlative dgree  হলো বুরাক আর বুরাক শব্দটি ব্যবহার করে বুঝানো হয়েছে যে, বিদ্যুৎ গতির চাইতেও দ্রুতগতি সম্পন্ন বাহনে করে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) উর্দ্ধালোকে গমন করেছিলেন।

সুতরাং মিরাজের সফরকে Gravitational force বা মধ্যাকর্ষণশক্তির যুক্তি দিয়ে অসম্ভব বলা অযৌক্তিক। জড় জগতের নিয়ম শৃঙ্খলায় আবদ্ধ স্থুলদেহী মানুষের পক্ষে আকাশের বায়ুশূন্য স্তর ভ্রমন করা অসম্ভব। অথচ বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে ভূপৃষ্ঠ হতে কোন স্থূল বস্তুকে যতই উর্ধ্বে প্রেরন করা যাবে, ততই তার ওজন (বিরমযঃ) হ্রাস পাবে, ফলে উর্ধ্বগমন ক্রমেই সহজ হয়ে যায়।

বৈজ্ঞানিক Arthure G. Clark তার (The exploration of Space)গ্রন্থে বলেন, ‘As the distance from the earth le ngthens into the thousands of miles. The reduction of gravity be comes substantial’ অর্থাৎ পৃথিবী হতে কোনো বস্তুর দৃরত্ব যতই বৃদ্ধি পাবে সে বস্তুর ওজন ততই হ্রাস পাবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা সৃর্যের দৃরত্ব প্রথিবী থেকে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দুরে। সুর্যের চেয়ে কোটি কোটি বিলিয়ন মাইল দুরে রয়েছে অসংখ্য নক্ষত্র, যার  আলো এখনো পৃথিবীতে এসে পৌঁছেনি যদিও বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর বয়স ১৫০০ কোটি বৎসর। অথচ রাসুল (সা.) এর মিরাজ হয়েছে, এ গ্রহ নক্ষত্র বিশিষ্ট আকাশম-লীর আরো অনেক পরে। সুতরাং এখানে স্থূল দেহের প্রতিবন্ধকতার প্রশ্ন তোলা নিরর্থক। বিজ্ঞানীদের মতে অক্সিজেন ব্যতীত মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। অথচ যে আল্লাহ সৃষ্টি জীবকে অক্সিজেনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখেন, সে আল্লাহ তায়ালা অক্সিজেন ছাড়াও বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।

যেমন ইউনূস (আ.) চল্লিশ দিন মাছের পেটে ছিলেন কে তাকে জীবিত রেখে ছিলেন অক্সিজেন ব্যতীত? এভাবে আমাদের সামনে অনেক ঘটনা রয়েছে, যেমন ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় খবর বের হলো একটা ছেলে ৮ ঘন্টা পানির মধ্যে ডুবেছিল কিন্তু সে মরেনি এসব ঘটনা যদি প্রাকৃতিক শৃঙ্খলায় আবদ্ধ জড় জগতে সম্ভব হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মিরাজুন্নবীতে অক্সিজেন ব্যতীত তার প্রিয় হাবীবকে বাঁচিয়ে রাখা কিভাবে অসম্ভব হতে পারে? কোনো কোনো বিজ্ঞানি বলেছেন মহাকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের অগ্নি গোলকসমূহকে পাড়ি দেয়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

সুতরাং মোহাম্মদ (সা.) এর মিরাজ কিভাবে সম্ভব? মানুষ একসময় মনে করতো পানিতে নামলে ভিজতে হবে এটাই স্বভাবিক, কিন্তু বিজ্ঞান ওয়াটার প্রুফ পোশাক আবিস্কার করে দেখিয়ে দিল যে ওয়াটার প্রুফ পোশাক পরিধান করে পানির মাধ্যে ডুব দিলেও ভিজতে হয় না। অনুরূপভাবে বিজ্ঞানের আর একটি আবিস্কার ফায়ার প্রুফ পোশাক, যা পরিধান করে আগুনের মাঝ দিয়ে চলা ফেরা করা যায়। আগুন কোনো ক্ষতি করতে পারে না। যদি দুনিয়ার সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে ফায়ার প্রুফ পোশাক পরিধান করে আগুনের মাঝ দিয়ে চলা ফেরা করা সম্ভব হয় তাহলে রাসুল (সা.) এর মত মহামানবের পক্ষে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মহাকাশ পাড়ি দেওয়া কি করে অসম্ভব হতে পারে?

পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে, পবিত্র মিরাজ অলৌকিক বটে, অযৌক্তিক নয় মুসলমানরা আজ গর্বের সাথে বলতে পারে বৈজ্ঞানিক যত উর্ধ্বে গমন করুক না কেন, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) তার চেয়ে আরো অনেক অনেক গুণে উর্ধ্বে ভ্রমন করেছেন। মিরাজ মুসলমানদেরকে আল্লাহ তায়ালার আশ্চর্য সব সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে শেখায়, গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করে। এ কারণেই বর্তমানে পবিত্র মিরাজকে নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মেরাজের ঘটনাবলি আমাদের চিন্তা ও কল্পনাকে ঊর্ধ্বমুখী করে। বিজ্ঞানের নভোচারিতায় অভূতপূর্ব সাফল্য তার বাস্তব প্রমাণ। বস্তুত যেদিক দিয়েই দেখি না কেন, মেরাজ সত্যিই এক অপূর্ব ঘটনা। এ সম্বন্ধে চিন্তা করলেও হৃদয় পবিত্র হয়, মনের দিকচক্রবাল সম্প্রসারিত হয়ে যায়। মূলত মেরাজ মানবজাতির জন্য সামাজিক, বৈজ্ঞানিক, আধ্যাত্মিক- এক কথায় ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গল সাধন করেছে।

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]