মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি শিশু দারিদ্র বিমোচনের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তা পর্যালোচনা করেছেন নিউইয়র্ক টাইমসের বিখ্যাত কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টফ। তিনি বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
দুই দুইবার পুলিৎজার পুরস্কার জেতা এই সাংবাদিক বুধবার টাইমসের মতামত কলামে লিখেছেন, ‘৫০ বছর আগে গণহত্যা আর অনাহারের ভেতর বাংলাদেশের জন্ম। হেনরি কিসিঞ্জার দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।’
‘১৯৯১ সালে একটি সাইক্লোনের সংবাদ কাভার করেছিলাম, তাতে বাংলাদেশের ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তখন টাইমসে বাংলাদেশকে নিয়ে আমি হতাশার প্রতিবেদন করি। বাংলাদেশ যত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, তাতে মনে হচ্ছে আমি ঠিক ছিলাম। কিন্তু আমার হতাশাবাদ ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কারণ তিন দশক ধরে দেশটি অবিশ্বাস্য উন্নতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’
‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই মহামারীর চার বছর আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশ বেড়েছে। এটা চীনের থেকেও বেশি।’
নিকোলাস ক্রিস্টফ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশিদের আয়ু ৭২ বছর, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ এক সময় হতাশাগ্রস্ত থাকলেও এখন বিশ্বকে যথেষ্ট শেখানোর আছে- কীভাবে উন্নতি করতে হয়।’
বাংলাদেশের এই সাফল্যের জন্য নিকোলাস ক্রিস্টফ শিক্ষা এবং নারী উন্নতিকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। তখন মেয়েরা খুব একটা শিক্ষার ছোঁয়া পায়নি।’
‘কিন্তু সেই সময় সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা মেয়েদের যোগ করে শিক্ষার প্রসারে নজর দেয়। এখন বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা পাচ্ছে। লিঙ্গ বৈষম্যের একটা দেশে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল উচ্চমাধ্যমিকে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি।’
‘বাংলাদেশ তাদের মেয়েদের শিক্ষিত করায় এখন তারাই অর্থনীতির পিলার।’
‘সংশয়বাদী পাঠক মাথা নেড়ে এভাবে বিড়বিড় করতে পারেন: অতিরিক্ত জনসংখ্যা উন্নতিকে পিছিয়ে দেবে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি নারীদের গড়ে এখন মাত্র দুটি সন্তান (সাত থেকে নেমেছে)।’
‘সংক্ষেপে, বাংলাদেশ তার অপরিশোধিত সম্পদে বিনিয়োগ করেছে-তার গরিব এবং প্রান্তিক মানুষের ওপর। কারণ এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি সুফল আসত। এই একই বিষয় যুক্তরাষ্ট্রেও সত্য হতে পারে।’
‘আমরা বিলিয়নিয়ারদের বাইরে খুব বেশি উৎপাদনশীলতা দেখছি না। প্রতি সাত আমেরিকান শিশুর একজন, যারা হাইস্কুল পর্যন্তও যায়নি আমরা যদি তাদের সাহায্য করতে পারি তাহলে একটা দেশ হিসেবে বিশাল সুবিধা পাব।’
‘শিশু দারিদ্র্য ঠেকাতে বাইডেনের পদক্ষেপ এটা সম্ভব করতে পারে। ফেরতযোগ্য শিশুকরের ব্যবস্থা স্থায়ী করতে হবে।’
‘বাংলাদেশ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-প্রান্তিক শিশুর ওপর বিনিয়োগ কোনো করুণা নয়,’ মন্তব্য করে নিকোলাস ক্রিস্টফ তার কলামের শেষ প্যারায় লিখেছেন, ‘এটি একটি জাতির উড্ডয়নের সহায়ক।’
ভোরের পাতা-এনই