প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১২.০৩.২০২১ ২:৩৯ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীন সরকারের নেওয়া কথিত পদক্ষেপগুলো জাতিসংঘ গণহত্যা সনদের প্রতিটি ধারা লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক আইন, গণহত্যা ও চীন বিষয়ক অর্ধশতাধিক বিশেষজ্ঞের তৈরি করা একটি নিরপেক্ষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। খবর সিএনএনের।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নিউলাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি’ গত মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। উইঘুরদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালিয়ে জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ লঙ্ঘন করায় চীন সরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়দায়িত্ব নিতে হবে। জিনজিয়াংয়ে চীনের গণহত্যা সংঘটিত করার অভিযোগ নিয়ে স্বাধীনভাবে কোনো বেসরকারি সংগঠনের আইনি বিচার–বিশ্লেষণের ঘটনা এটিই প্রথম। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি সিএনএন দেখেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন আটকশিবিরে ২০ লাখের মতো উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষকে আটকে রেখেছে চীনের কর্তৃপক্ষ। এসব আটক শিবিরের সাবেক বন্দীরা অভিযোগ করেছেন, সেখানে কর্তৃপক্ষ নিজস্ব দীক্ষায় তাঁদের দীক্ষিত, যৌন নির্যাতন ও এমনকি জোরপূর্বক পুরুষত্বহীন করেছে। তবে চীন আটকশিবিরগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ প্রতিরোধে এসব কেন্দ্র জরুরি।
এ প্রসঙ্গে গত ৭ মার্চ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জিনজিয়াংয়ে গণহত্যার অভিযোগ আরও হাস্যকর করে তোলা ঠিক হবে না। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ঘোষণা করে, চীন সরকার জিনজিয়াংয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে। এক মাস পর নেদারল্যান্ডস ও কানাডার আইনসভার সদস্যরা একই রকমের পদক্ষেপ নেন।
নিউলাইনসের স্পেশাল ইনিশিয়েটিভসের পরিচালক ও প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনের সহরচয়িতা আজিম ইব্রাহিম বলেন, জিনজিয়াংয়ে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পক্ষে অত্যন্ত জোরাল প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চীন বিশ্বের প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর একটি। অথচ গণহত্যা সংঘটিত করার নেপথ্যে রয়েছেন দেশটির নেতারা।’
চার পৃষ্ঠার জাতিসংঘ গণহত্যা সনদ ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদন দেয় সাধারণ পরিষদ। কোন কোন কর্মকাণ্ড গণহত্যা বলে গণ্য হবে, তা এই সনদে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সনদে সই করা ১৫২টি দেশের মধ্যে রয়েছে চীনও। সনদের দুই নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো জাতীয়, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গৃহীত কর্মকাণ্ডই গণহত্যা বলে গণ্য হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উইঘুরদের নিশানা করে চীনের গৃহীত নীতি ও কর্মকাণ্ড অবশ্যই সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। তার এসব নীতি ও কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য হলো, উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীকে একেবারে বা আংশিকভাবে নির্মূল করা। জাতিসংঘ সনদে গণহত্যা সংঘটিত করার দায়ে কোনো দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে নিউলাইনসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সনদের অধীন চীনের বিরুদ্ধে অন্য ১৫১টি দেশের পদক্ষেপ নেওয়ার দায় রয়েছে।