করোনা মহামারি চলাকালে গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে দেশের ২১টি জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। দিনে গড়ে বাল্যবিয়ে হয়েছে এক দশমিক সাতটি। বাল্যবিয়ের শিকার পাঁচ হাজার ৮৯ জন মেয়ে করোনাকালে অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভধারণ করেছে। 'বাল্যবিয়ের অবস্থা দ্রুত বিশ্লেষণ :করোনাকাল ২০২০' শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) ওয়েবিনারে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়। ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় এ জরিপ পরিচালনা ও প্রতিবেদন তৈরি করেছে এমজেএফ। ওয়েবিনারে জরিপ উপস্থাপন করেন এমজেএফের সমন্বয়ক অর্পিতা দাশ ও সিনিয়র ম্যানেজার গিয়াসউদ্দীন আহমেদ।
তারা জানান, বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মধ্যে শতকরা ৫০ দশমিক ৬ জনের বিয়ে হয়েছে ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। শতকরা ৪৭ দশমিক ৭ জনের বিয়ে হয়েছে ১৩-১৫ বছরের মধ্যে। শতকরা ১ দশমিক ৭ জনের বিয়ে হয়েছে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে।
সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয়েছে বরগুনায়, এক হাজার ৫১২টি। এ ছাড়া কুড়িগ্রামে এক হাজার ২৭২, নীলফামারীতে এক হাজার ২২২, লক্ষ্মীপুরে এক হাজার ৪১ এবং কুষ্টিয়ায় ৮৮৪ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। বাল্যবিয়ের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৭৮ জনই বাবা-মা। অথচ শতকরা ৯৬ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন, বাল্যবিয়ে বন্ধ হওয়া উচিত। বাল্যবিয়ে নিয়ে সচেতনতা ও চর্চার মধ্যে বড় ধরনের একটা পার্থক্য উঠে এসেছে এ জরিপের মাধ্যমে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৩৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, করোনাকালে তারা তাদের আশপাশে অন্তত একটি বাল্যবিয়ে দেখেছেন। বরগুনার শতকরা ৮৮ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন, তারা অন্তত একটি বাল্যবিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন এ সময়ে। এ সংখ্যা লক্ষ্মীপুরে শতকরা ৬৩, খুলনা ও নীলফামারীতে শতকরা ৫৬।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের হার বাংলাদেশে- শতকরা ৫৯ জন। বাল্যবিয়ের হার বেশি, বিশ্বের এরকম ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে এ দেশ।
জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের শতকরা ৭৭ দশমিক ৯ জন ছেলে ও মেয়ে দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের বয়স সঠিকভাবেই জানে। বিভিন্ন এলাকার ম্যারেজ রেজিস্ট্রাররা চার হাজার ৮৬৬টি বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন এই সময়ে। শতকরা ৩০ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, দারিদ্র্য এবং প্রতিদিনকার জীবনের টানাপোড়েনের কারণে তারা মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সবাই স্বীকার করেছেন, সরকারি অফিস, স্থানীয় এনজিও, পুলিশ এবং হেল্পলাইনগুলো যথেষ্ট কার্যকর ছিল। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরাই বাল্যবিয়ে ঠেকিয়েছে।
সুপারিশমালায় উঠে এসেছে- বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হলে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তি, গণমাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
ওয়েবিনারে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, কেয়ার বাংলাদেশের উইমেন অ্যান্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট প্রকল্পের ডিরেক্টর হুমাইয়রা আজিজ, আইসিডিডিআরবি'র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট রুচিরা তাবাস্সুম নাভেদ এবং আইসিটি ডিভিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি হাসিনা বেগম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর অরলা মারফি।
অনুষ্ঠানে জরিপের ওপর মন্তব্য করেন ইউএনএফপিএর ডেপুটি রিপ্রেসেনটেটিভ এইকো নারিতা ও ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেসেনটেটিভ ভীরা মেনডোনকা। অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েরা। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বক্তব্য দেওয়া হয়।
ভোরের পাতা-এনই