অবৈধ অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত শহীদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণার পরপরই লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। এ আসনে উপ-নির্বাচন হবে আগামী ১১ এপ্রিল। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অর্ধডজন নেতার অনুসারীরা প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও কৃষকলীগসহ ডজনখানেক নেতা। পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা তৎপর রয়েছেন দলীয় মনোনয়ন পেতে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গত শুক্রবার এই আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। সোমবার পর্যন্ত ১৬ জন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি হবে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মো. গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, ডা. এহসানুল কবির জগলুল, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমমেদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রানা আফছারী, আমরা কজন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা এএফএম জসিম উদ্দীন, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম নবী নেওয়াজ করিম চৌধুরীর স্ত্রী রেশমা আক্তার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবুল কাশেম, এডভোকেট সালাহ উদ্দিন রিগেন ও চট্টগ্রাম এক্স শাহীন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঈদুল বাকীন ভূঁইয়াসহ ১৬ জন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের দাবি, তার সাংগঠনিক তৎপরতা ও মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে লক্ষ্মীপুরে দলের সমর্থন বেড়েছে। অতীতে দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করা সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ মনে করেন, দলের মনোনয়ন তিনিই পাবেন। আর মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হবেন তিনি। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুকের আশা, দল এবার তাকে ‘মূল্যায়ন করবেন’। তার দাবি, জেলা আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে রয়েছে এবং তাকে চায়।
এদিকে বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়ার নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। গত নির্বাচনেও তিনি এ আসনে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পাশাপাশি জেলা বিএনপির
সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু এবার ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এম আর মাসুদ ও শেখ মোহাম্মদ ফায়জুল্লাহ শিপন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা কেন্দ্র্রেও লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এমপি নির্বাচিত হন। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, রাজনীতির বাইরে থাকা পাপুল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ভর করে তখন স্বতন্ত্র এমপি হয়েছিলেন। কুয়েতে পাপুলের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের শুরুতে মানবপাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠে। পরে ওই মামলায় তিনি কুয়েতে গ্রেপ্তার হন। গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের আদালত পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করা হয়। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনের স্বতন্ত্র এমপি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ পাপুলের এমপি পদ শূন্য ঘোষণা করে।
নির্বাচন কমিশন গত ৩ মার্চ লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন। ১৯ মার্চ মনোনয়ন বাছাই ও ২৪ মার্চ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। এ আসনে ভোট হবে ১১ এপ্রিল।
ভোরের পাতা-এনই