দুর্নীতি মামলার তদন্তের দীর্ঘসূত্রতাকে বড় সমস্যা উল্লেখ করে সেটি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। গতকাল বুধবার দুদক কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন। মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, আইনের যথাযথ ব্যবহার করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৎপর থাকবে বর্তমান কমিশন। নতুন চেয়ারম্যান বলেন, শুধু আইন দিয়েই দুর্নীতি কমানো যাবে না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। দুদকের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে বলেও তিনি জানান।
দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, দুর্নীতি দমনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে আমাদের, যা দিয়েই দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয়েছে। সরাসরি আমাদের ওপর দায়িত্ব, তবুও আমি বলব- বাংলাদেশের যতগুলো আইন আছে প্রতিটি আইনই দুর্নীতি যাতে না হয় সেটা অন্তর্ভুক্ত আছে। আমার প্রত্যাশা থাকবে সবগুলো আইনের মাধ্যমে দুর্নীতি যাতে কম হয় বা নিশ্চিহ্ন করা যায় সেই উদ্দেশ্য থাকবে। তারপরও আমাদের ওপর যে দায়িত্ব আছে আইন ও বিধি অনুযায়ী সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা থাকবে কোনো কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তে যে দীর্ঘসূত্রতা আছে তা যতখানি সম্ভব তা কমিয়ে আনা। একইসঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে সবার প্রতি সমান দৃষ্টি দিয়ে কাজ করব। এ জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা দরকার। শুধু আইন দ্বারা দুর্নীতি দমন করা দুরূহ ব্যাপার এবং সম্ভব কি না সেটাও আপনাদের প্রতি আমার প্রশ্ন। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ থাকুক, দুর্নীতিমুক্ত দেশ থাকুক, এটার ব্যাপারে সবাই একমত। এটার বিপক্ষে আপনি একজনও পাবেন না। তারপরও পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি দুর্নীতি থাকে। আমাদের দেশেও যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন আছে, পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ আছে। এ নিয়েই চলতে হবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত দেশ বা সমাজ গড়ার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যতখানি আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কেউ চাই না যে সমাজে দুর্নীতি থাকুক। সবাই সবার অবস্থান থেকে দুর্নীতি দমনে আমাদের সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে গণমাধ্যম। আপনারা সমাজের দর্পণ। এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এর আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। সে উদ্যোগ থাকবে।
জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে এই কমিশন কী ধরনের ভূমিকা রাখবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণের আকাক্সক্ষা যা, জাতির আকাঙ্ক্ষা যা এটার সঙ্গে যাতে দুদকের দূরত্ব কমে আসে সেই চেষ্টা থাকবে। আমাদের উদ্দেশ্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। আপনারা যা বললেন সেগুলো নিয়ে আমরা কমিশনে আলোচনা করব। আশা করি সেটাই আমরা করার চেষ্টা করব। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখব কেন তা শেষ করতে পারেনি, হয় নাই কেন, এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আমরা কারণগুলো অসুন্ধান করে এটা যাতে আর বেশি প্রলম্বিত না হয় এর উদ্যোগ নেব। আর নবনিযুক্ত কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করবে দুদক। অর্থপাচার রোধের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান জহুরুল হক।
এর আগে বেলা ১১টায় নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার মো. জহুরুল হক সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আসলে তাদের অভ্যর্থনা জানান দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। গত ৩ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহকে দুদকের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় সরকার। সেই দিনই দুদকের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক।