ড. কাজী এরতেজা হাসান, সিআইপি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১১.০৩.২০২১ ১:৪৩ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাস্থ্যবিধি না মানার কোনো বিকল্পই আমাদের সামনে খোলা নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রী বার বার সে কথা বলছেন। দিচ্ছেন নির্দেশনা। কিন্তু আমরা সব জেনেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছি। ফলাফল কী, একেবারেই ভয়াবহ। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা আর বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে গবেষকরা ভেবে পাচ্ছেন না, করোনার ঊর্ধ্বগতি কেন? এ অবস্থায় সরকার প্রধান শেখ হাসিনাও বিচলিত। তিনি করোনার হাত থেকে সুরক্ষা পেতে তিনটি নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছেন। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দেয়। সরকার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আগেভাগে পদক্ষেপ নেয়। ফলে করোনার পথম আঘাত যতটা বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল, দ্বিতীয় ঢেউ হয়তো সেটা পারেনি। তবে শঙ্কা ঠিকই বাড়িয়েছে। দেশে কয়েক লাখ মানুষ করোনাভাইরাস টিকা নিয়েছেন। প্রতিদিন দেশব্যাপী টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য ৯ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া। করোনা টিকাদান সহজ করার কথাও সরকারের মাথায় আছ বলে জানা গেছে। বর্তমানে করোনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মানুষের মধ্যে করোনাভীতিও অনেকটাই দূর হওয়ার পথে রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে সরকারসহ দেশের মানুষকে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে গতকাল বুধবার প্রকাশিত সহযোগী একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস পর করোনা রোগী শনাক্তের হার আবার ৫ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। গত এক দিনে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময় এক দিনে ৯১২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা ৫৮ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি এক দিনে এর চেয়ে বেশি ১ হাজার ৭১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
তারপর থেকে এ পর্যন্ত দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯০০-এর নিচেই ছিল। এমনকি পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার সর্বশেষ ৫ শতাংশের বেশি ছিল গত ১৮ জানুয়ারি। এরপর কমতে কমতে তা ৩ শতাংশের নিচেও নেমে আসে। তবে মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শনাক্তের হারও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার এ সংখ্যা আবার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা করোনা বিষয়ে তিনটি নির্দেশনা দেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় আবারও সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। প্রথমত, যে যেখানেই থাকুন না কেন, করোনার টিকা নেন বা না নেন, সবাই যেন অবশ্যই মাস্ক পরেন। দ্বিতীয়ত, যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং তৃতীয়ত, জনসমাগম যেখানে হচ্ছে, সেখানে যেন নির্ধারিতসংখ্যক মানুষ থাকে। কারও যেতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি যেন ঠিকমতো মানা হয়।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সবাই মেনে চললে আশা করা যায় সুরক্ষা পাওয়া যাবে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, বর্তমানে মানুষকে যথেষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়। মাস্ক পরার ব্যাপারে যাদের অনীহা ছিল, তারাও রীতিমতো মাস্ক পরছেন। এতে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে নিরাপদ রাখবে মাস্ক। এদিকে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি যা গবেষকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনটি বিষয়ের দিকে অবশ্য তারা নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গবেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যে করোনার যে নতুন ধরন, সেই ধরনটা বাংলাদেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এর জন্য তারা করোনার ধরন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি করোনাভাইরাস গ্রীষ্মম-লীয় দেশগুলোর জন্য গ্রীষ্মকালের ও শীতপ্রধান দেশগুলোর জন্য শীতকালীন ভাইরাস হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে কি না, সেটাও পরীক্ষা করতে হবে। তবে তারা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন।
পরিশেষে বলা জরুরি যে, করোনার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা দেখা দিলেও একে সরকার মোকাবিলা করতে পারবে। করোনার এক বছর পার হয়েছে। রোগটিকে মোকাবিলা করে কীভাবে টিকে থাকতে হবে, দেশবাসীর এই অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ সমৃদ্ধই বলতে হবে। তবে যত দ্রুত আরও অধিক মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া যায়, ততোই ভালো। টিকা নিলে মানুষ করোনা থেকে অনেক বেশি সুরক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট সচেতন রয়েছে বলেও আমরা বিশ্বাস। দেশের ৯ কোটি মানুষকে করোনা টিকা দেওয়ার যে লক্ষ্য সরকারের রয়েছে, তা ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি । সব ঠিকমতো চললে করোনার ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। শুধু প্রয়োজন করোনা বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।