সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদারের রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিনের মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বুধবার (১০ মার্চ) রন হক সিকদারের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এ আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে বাদীপক্ষ আদালতে লিখিত আবেদন জমা দিয়ে আসামি রন হক সিকদারের জামিন বাতিল চায়। জামিন বাতিল চেয়ে বাদীপক্ষের করা আবেদনে বলা হয়, আসামি রন হক সিকদার করোনা মহামারির মধ্যে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে বিদেশে যান। তিনি বিদেশে বসে উচ্চ আদালতে জামিন চান। এ নিয়ে উচ্চ আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেন। আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য আসামির জরিমানা করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ কাউছার আলম আদালতে বলেন, আসামি রন হক সিকদার দেশের আইন ও আদালতকে তোয়াক্কা না করে বিদেশে যাওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে আসেননি। বাবার মৃত্যুর কারণে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরলে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তখন মানবিক কারণে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এখন নতুন করে বিষয়টি দেখা দরকার। মামলার তদন্ত চলমান। মামলার আরেক আসামি রন হক সিকদারের ভাই বিদেশে আছেন। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে আসামি রন হক সিকদারের জামিন বাতিল করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হোক।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, রন হক সিকদার জামিনের অপব্যবহার করেননি। তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হোক।
আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে রন হক সিকদারের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
আজ আদালতে শুনানিকালে আসামি রন হক সিকদার উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে সাংবাদিকেরা রন হক সিকদারের ছবি তুলতে গেলে তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন বাধা দেন।
হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হওয়ার পর প্রায় ৯ মাস দুবাইয়ে ছিলেন রন হক সিকদার। বাবার মৃত্যুর কারণে ১২ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর গ্রেপ্তার হন তিনি। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর পরপরই গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রনকে গ্রেপ্তার করে। এদিন দুপুরে তাঁকে আদালতে তোলা হলে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন পান তিনি। তাঁকে ১০ মার্চ (আজ) পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়।
রন হক সিকদারের বাবা জয়নুল হক সিকদার। তিনি সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান। জয়নুল হক সিকদার ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। আর তাঁর ছেলে রন হক সিকদার এখন এই ব্যাংকের পরিচালক।
গুলশান থানায় এক্সিম ব্যাংকের করা অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি রন হক সিকদার। এ মামলায় তাঁর ভাই দিপু সিকদারও আসামি। দিপু এখনো বিদেশে আছেন।
রন হক সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অপহরণ করে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ অভিযোগে গত বছরের ১৯ মে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রন হক ও তাঁর ভাই দিপু হকের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করে।
এরপর গত ২৫ মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই ভাইয়ের ব্যাংককে পাড়ি জমানোর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। দুই ভাইয়ের বিদেশে পাড়ি জমানোর মধ্যে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রন হক সিকদারের একটি গাড়ি জব্দ করে।
গুলশান থানায় করা মামলায় বলা হয়, রন হক সিকদার গত বছরের ৭ মে সকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিসহ গুলশানে এক্সিম ব্যাংকে যান। তাঁরা তাঁদের প্রস্তাবিত ৫০০ কোটি টাকা ঋণের টাকার বিপরীতে ‘কো-লেটারেল’ হিসেবে সিকদার গ্রুপের রূপগঞ্জ কাঞ্চন প্রস্তাবিত আদি নওয়াব আসকারী জুট মিলটি পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যান এমডি হায়দার আলী ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজকে। ওই স্থান পরিদর্শন করে জায়গাটির বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে রন হকদের বন্ধকি মূল্যের বিশাল ব্যবধান হওয়ায় এমডি ও এএমডি ঋণ দিতে দ্বিমত পোষণ করেন। এর জের ধরে ‘কৌশলে’ এক্সিম ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পূর্বাচলে নিয়ে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ’ এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেখান থেকে বনানী ১১ নম্বরে সিকদার হাউসে নিয়ে ‘হেনস্তা করা হয়’।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, জমির দাম কম বলায় রন ও দিপু এক্সিম ব্যাংকের এএমডি ফিরোজকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন। অস্ত্র তাক করে জোর করে একটি সাদা কাগজে তাঁদের স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পাঁচ ঘণ্টা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখে পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভোরের পাতা/পি