প্রকাশ: বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১, ১১:০৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বুক টান করে শত্রুদের রুখে দাঁড়ানো মানুষটি রহমত উল্লাহর শরীরে এখন আর তেমন বল নেই। সরকারের দেয়া দুই একর জায়গার পুরোটাই বেদখলে। নিজের ভিটেমাটি নেই বলে স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন শ্বশুর বাড়িতে। পাঁচ মেয়ের প্রত্যেকে স্বামীর ঘরে। ছেলে বাবলু মিয়া রিক্সার প্যাডেল ঘুরিয়ে দু’পয়সা রোজগার করলে পেটে চারটে ভাত পরে তাদের।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উপজেলার বুরুঙ্গিতে জন্ম রহমত উল্ল্যার। ১৯৬৫ সালে মেট্রিক পাশ করেন। গানের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতেন। এরই মধ্যে দেশের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে।
দেশ স্বাধীনের পর অভাব অনটনের সংসার সামলাতে গিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেননি। রহমত উল্ল্যা বলেন, ‘১৯৬৫ সালে এসএসপি পাশ করার পর চাকরির সন্ধান করছিলেন। এরই মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে নেয়ার পর পাকবাহিনীর দোসররা তার বাড়ি থেকে মেট্রিক পাশের সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে যায়। পরে দেশ স্বাধীনের পরেও আর চাকরির সুযোগ পাননি। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলে বাঙ্গালী নদীর তীরে রামনগর গ্রামে তাকে দুই একর জমি দেয়া হয়।
সেই জমির ১ একর জোর করে লিখে নিয়ে পুরো দুই একর জমি দখল করে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালী গফুর মাস্টার, বাছের আলী, নুর হোসেন, আব্দুল, পরবাসু ও তাদের লোকজন। নিরুপায় হয়ে শ্বশুর বাড়ী অনন্তপুর এলাকায় অন্যের জায়গায় একটি টিনসেড ঘরে কষ্টে শিষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি। হাতের উপর ভর করে ৫ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সরকারি ভাতা আর একমাত্র ছেলে বাবলুর রিক্সা চালানো সামান্য আয়ে সবার আহার জোটে।
মুক্তিযোদ্ধা রহমত উল্ল্যার অভিযোগ, বহু চেষ্টা করেও তিনি সরকারের দেয়া সেই জমি উদ্ধার করতে পারেননি। স্ট্যাম্পে সাক্ষর নিয়ে তাকে জোর জুলুম করে জমি থেকে উচ্ছেদ করে প্রভাবশালীরা।
তার স্ত্রী আকিসা বেগম জানান, ‘সরকারের কাছে তার চাওয়ার কিছু নেই। সরকারিভাবে যদি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমরা সুখে শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।’
মুক্তিযোদ্ধা রহমত উল্ল্যার ছেলে বাবলু ইসলাম জানান, ‘আমার বাবার জমি রক্ষা করতে গিয়ে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে । আমরা বাধ্য হয়ে সেই জমি ছেড়ে দিয়ে এখন অন্যের জমিতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।’
মুক্তিযোদ্ধা রহমত উল্যার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সবসময় থাকবে বলে জানান গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা গৌতম চন্দ্র মোদক।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারিভাবে বসতবাড়ি দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউএনও বরাবরে আবেদন করলে তাকে অবশ্যই বসতবাড়ি দেয়া হবে।’
ভোরের পাতা/পি