গণফোরাম থেকে বাদ পড়ছেন ড. কামাল!
এবার দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে বাদ দিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে গণ ফোরামের বর্ধিত সভা থেকে। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের হল রুমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত সদস্যদের নিয়ে এই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে আলোচকরা ড. কামাল হোসেন বিষয়ে নানা ধরনের কটূক্তি করেন। এক বক্তা তাকে জিরো এবং ননসেন্স বলে মন্তব্য করেন।
বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইদ। যদিও ড. কামাল হোসেনকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি এখনো প্রস্তাব আকারে রয়েছে এবং আগামী জাতীয় সম্মেলনে তা তোলা হবে বলে দলটির নেতা মোস্তফা মহাসিন মন্টু জানিয়েছেন।
বর্ধিত সভায় জানানো হয়, আগামী ২৮ ও ২৯ মে দলটির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি ও ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করতে মোস্তফা মহাসিন মন্টুকে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন এবং অধ্যাপক ড. আবু সাঈদকে আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম খালেকুজ্জামানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া আগামী জাতীয় কাউন্সল পর্যন্ত গণফেরামের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য মোস্তফা মহসিন মন্টুকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে ড. কামাল হোসেনকে রাখা হয়নি। তবে মোকাব্বির খান এমপিকে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেনের সমর্থক। তাকে কমিটিতে রাখার বিষয়ে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে গণফোরামে থাকতে চাই। এ জন্য তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তবে তিনি কমিটিতে না থাকতে চাইলে থাকবেন না।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন আলোচক অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ। সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন পলিটিশিয়ান নয়। তাকে নিয়ে রাজনীতি হবে না। তিনি একটা জিরোপারসন। তিনি ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করেন।’
মহসিন রশিদ বলেন, ‘ড. কামাল ও রেজা কিবরিয়া দুজনেই মিথ্যাবাদী। দলীয় এমপি মোকাব্বির হঠাৎ করে এমপি হয়েছেন। কীভাবে এমপি হয়েছেন, দেশবাসী সবাই জানে। ড. কামাল হোসেনকে বাদ দিয়েই গণফোরামকে এগিয়ে নিতে হবে।’
অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ আরও বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্য ফোরাম গঠন করা হলো। কী উদ্দেশ্য নিয়ে ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য ফোরাম গঠন করলেন তা বোধগম্য নয়। ঐক্যফ্রন্টে কারা যোগ দিলেন? জামায়াতের লোকজন। আর ড. কামাল হোসেন তাদের নিয়ে সুস্থ রাজনীতি স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন করতে চাইলেন। আমি প্রস্তাব করছি ড. কামাল হোসেন ‘ননসেন্স’ তাকে গণফোরাম থেকে বাদ দিয়ে সামনে চলুন।’
ঢাকা বিভাগের গণফোরাম নেতা বিশ্বজিৎ গ্যাঙ্গুলি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনকে অদৃশ্য একটি সুতা টেনে ধরেছে। ফলে গণফোরাম পেছনের দিকে ছুটছে। সামনে আর এগুতে পারেনি। তাই সময় এসেছে সুতা কেটে দেওয়ার। সুতাটি কেটে দিন গণফেরাম সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
অ্যাডভোকেট হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘২০০৮ সালে গণফোরাম ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ড. কামাল হোসেন সুযোগ কাজে লাগাননি। কেন লাগাননি সে বিষয়টি আজও জানা হলো না। জানা গেল না।’
তিনি বলেন, ‘গণফোরাম আজ মৃতপ্রায়। তাকে মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে টেনে তুলতে হবে। তা না হলে রাজনীতি থেকে গণফোরাম একেবারে ছিটকে পড়বে।’
এছাড়া বর্ধিত সভায় রাজবাড়ী জেলা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উল্লাহ নতুন কোনো ফোরামের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব করেন। রংপুর বিভাগের পক্ষে বক্তব্য দেন মির্জা হাসান, ময়মনসিংহের অ্যাডভোকেট রায়হান উদ্দিন, আ্যাডভোকেট হাফিজ উদ্দিন ঠাকুরগাঁও জেলা গণফোরামের সদস্য সচিব জাফর সাদেক, রাজবাড়ী জেলা সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উল্লাহ, কুষ্টিয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম পর্বতসহ অন্যরা।