মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
থানা পরিক্রমা-৭
‘পুলিশ গুন্ডা বাহিনী নয় যে কাউকে হুমকি দেবে, এটা বেআইনি’
মিরপুর পল্লবী থানা
শাকিল আহমেদ
প্রকাশ: রোববার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৮.০২.২০২১ ৩:০৮ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটা। রাজধানীর পল্লবি থানা। ছয় তলা বভনটির নান্দনিক ডিজাইনের কারণে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে থানাটিতে। দূর থেকে চোখে পড়লো সোনালি অক্ষরে ভবনের গায়ে বড় করে লেখা গণপ্রজাতন্ত্রী বংলাদেশ সরকার পল্লবী থানা। অন্যান্য থানার তুলনায় এ থানার পরিবেশটা একটু ভিন্ন। থানার প্রধান ফটকের সামনে দায়িত্বপালন করছেন এক পুলিশ কনস্টেবল। থানা প্রাঙ্গণে রয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার জায়গা। ভবনটির নিচ তলায় খাবারের ক্যান্টিন। দ্বিতীয় তলায় ডিউটি অফিসারের রুম। রুমের বাইরের ডেস্কে দুই পুলিশ সদস্য সার্ভিস ডেলিভারি দিতে ব্যস্ত। সামনের সোফায় কিছু মানুষ বসে আছেন। ডিউটি রুমের পাশে রয়েছে থানার অফিসার্স ইনচার্জ, ওসি তদন্ত এবং ওসি অপারেশনের রুম। ভবনটির তৃতীয় তলার এক পাশে রয়েছে হাজতখানা আর অন্যপাশে মিরপুর জোনের এসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশের (এসি) রুম এবং অস্ত্রাগার ও মালখানা। চতুর্থ তলায় পুরো অংশ জুড়ে রয়েছে অফিসারদের ভিন্ন ভিন্ন ডেস্ক। এখানে বসে তারা আসামি ও অভিযোগকারীদের কথা শুনেন এবং মিমাংসা করেন। পঞ্চম তলায় ওসি ও এসআইদের থাকার ব্যবস্থা এবং ছয় তলায় রয়েছে এএসআই ও আনসারদের ব্যারাক।

২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন থাকায় থানায় মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। ডিউটি রুমের দায়িত্বে আছেন এসআই নাঈমা খাতুন ও এএসআই জাহিদ। দুপুর সাড়ে তিনটা। ডিউটি রুমে দেখা যায়, মিরপুর সেকশন-১২ থেকে নারী নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে আসেন দুই নারী। তাদের মধ্যে একজন তার স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে প্রায়ই কারণে-অকারণে মারধর করে। মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফেরেন না। সে অন্য কারো সঙ্গে হয়তো পরকিয়া করে। আমার একটা সন্তান আছে, এখন অমি কি করবো? সবকিছু শুনে ডিউটি অফিসার নাঈমা খাতুন ওই নারীকে বুঝিয়ে বলেন, থানা পুলিশ করলে তো আপনাকে আরও বেশি নির্যাতন করবে। সংসার করতে পারবেন? আপনি যদি সংসার করতে চান তাহলে পারিবারিক আদালতে যান। তারাই আপনার স্বামীকে ডেকে উভয় পক্ষের কথা শুনে সমাধান দেবে। আর মামলা করতে চাইলে আমি মামলা নিতে পারবো। সে ক্ষেত্রে আপনাকে নির্যাতনের মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে। এর বাইরে কিছু করতে পারবো না। তাছাড়া এটা দোহার থানায় পড়েছে আপনাকে ওখানে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর ওই নারী বলেন, মামলা না করে যদি আপনি আমার স্বামীকে বুঝিয়ে বলেন তাহলেও হতো। জবাবে নাঈমা বলেন, আমি পুলিশ, কোনো কাউন্সিলর নই যে আপনার স্বামীকে বোঝাব, তাছাড়া সাত বছর সংসার করার পরেও আপনি যাকে বোঝাতে পারছেনা সে কি আমার কথা শুনবে? এরপর ওই নারী আবারও বলেন, ঠিক আছে তাহলে একটু হুমকি বা ভয়-ভীতি দেখান, তাহলে হয়তো আমার স্বামী ভয় পেয়ে ফিরে আসবে। এবার নাঈমা বলেন, আমরা পুলিশ, গুন্ডা বা সন্ত্রাসী নই যে হুমকি দিলে আপনার স্বামী ভয় পাবে, কোন লিখিত অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কারও বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারে না। এটা বেআইনি। এরপর ওই নারী  কোনো  সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে চলে যান।

কিছুক্ষণ পর মিরপুর বনলতা এলাকা থেকে বেতন না দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। লিখিত অভিযোগ পড়ে নাঈমা খাতুন প্রশ্ন করেন, আপনি কতদিন ওই কোম্পানিতে চাকরি করেন? জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন- ছয় মাস। নাঈমা বলেন, আপনি ছয় মাস চাকরি করেন আর ছয় মাসই বেতন পাননা এটা কি করে সম্ভব? উত্তরে অভিযোগকারী বলেন, কোম্পানি এতদিন বেতন দিই-দিচ্ছি- এসব বলে আমাকে ঘুরাতে থাকে। এখন আমি বুঝতে পারছি যে তারা প্রতারক। অভিযোগকারীর কথা শুনে নাঈমা বলেন, আপনি এসআই শফিকুলের সঙ্গে দেখা করেন, তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, উনি আপনার বিষয়টি দেখবেন। মিরপুর ডি-ব্লক থেকে মারধরের অভিযোগ নিয়ে আসেন শাহ জামাল। তিনি বলেন, আমি একটি ডিস লাইনের কোম্পানিতে চাকরি করি। এক টিভি মাসে দুইশো ও দুই টিভি তিনশো টাকা করে বিল নিই। ডি-ব্লকের একটি বাসায় দুটি টেলিভিশন চলে কিন্তু তারা আমাকে একটির বিল দেয় এবং বলে একটি টিভি নষ্ট। তখন আমি লাইন চেক করার কথা বললে তারা বলেন, বাসায় এখন লোক নেই পরে আসেন। এরপর সন্ধার সময় আমি অফিসে কাজ করছিলাম, এসময় ওই মহিলার স্বামী স্থানীয় চার পাঁচজন সন্ত্রাসী নিয়ে আমাকে অনেক মারধর করেন। আমি লাইন চেক করতে যাইওনি তারপরও মাত্র একশো টাকার জন্য তারা আমাকে মেরেছে। তারা সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী, তাই আমি শঙ্কায় আছি। সবকিছু শুনে অভিযোগ নিলেন নাঈমা।

বিকাল চারটা মিরপুর-১০ নম্বর ওয়াপদা বিল্ডিং থেকে ফিরোজা বেগম (৫০) নামে এক নারী ডিউটি রুমে এসে বলেন, আমার ছোট বোনকে তার স্বামী মারধর করছে, তাড়াতাড়ি আমার সঙ্গে চলেন। কি হয়েছে, কেন মেরেছে এসব বিষয়ে জানতে চান ডিউটি অফিসার নাঈমা। জবাবে ফিরোজা বেগম বলেন, আমার ছোট বোনের নাম জোছনা। সে বাসাবাড়িতে কাজ করে। জোছনার জামাই দাঁরোয়ানের চাকরি করেন। আমার বোন সারাদিন কাজ করে অনেক ক্লান্ত থাকে। তার জামাই মেলামেশা করতে পারে না বলে তাকে প্রতিদিন মারধর করে। আপনারা চলেন, আজকে ওরে একটা শিক্ষা দিমু। এসব কথা শুনে নাঈমা বলেন, আপনার বোন না এসে আপনি কেন অভিযোগ করছেন? সে যদি তার স্বামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে তখন তো আমরা ফেঁসে যাবো। এরকম অনেক উদাহরণ আছে। আপনার বোনকে আসতে বলেন। ডিউটি অফিসার নাঈমা জোছনা বেগমকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলেন। ফিরোজা বলেন, আমার ফোনে টাকা নেই। এরপর ডিউটি রুমের ফোন থেকে জোছনার নাম্বারে ফোন দেন নাঈমা। কিন্তু তার ফোন বন্ধ। এদিকে পুলিশ ছাড়া কিছুতেই বাসায় যাবেন না ফিরোজা বেগম। বিপাকে পড়ে যান নাঈমা। এরপর ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা এসআইএ’র নাম্বার দিয়ে তাকে ফোন করতে বলেন নাঈমা। এরপর নাম্বার নিয়ে চলে যান ফিরোজা বেগম।

প্রতিদিন এরকম অসংখ্য অভিযোগ জমা হয় পল্লবী থানায়। থানা সূত্রে যানা যায়, প্রতিমাসে পল্লবী থানায় ৪৫ থেকে ৫০টি মামলা হয় যার অধিকাংশই মাদকের। এছাড়াও রয়েছে পারিবারিক সহিংসতা ও ছিনতাইয়ের মামলা। প্রতি মাসে সাধারণ ডায়েরি হয় পাঁচশতাধিক। ২১ ফেব্রুয়ারি বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত এ থানায় মামলা হয় ১টি, সাধারণ ডায়েরি ২৭টি, ৯৯৯ এ অভিযোগ ৭টি ও থানায় সরাসরি অভিযোগ আসে ৫টি। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই থানার দায়িত্বে রয়েছেন তিনজন ইন্সপেক্টর, ৩১ জন এসআই, ৩৫ জন এএসআই, কনেস্টবল পুরুষ ৪৩ নারী ৮ এবং আনসার সদস্য  ২৯ জন।

মিরপুর পল্লবী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.আবু সাঈদ আল মামুন ভোরের পাতাকে বলেন, পল্লবী থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। আমরা যে কোন রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করছি। প্রত্যেকটা অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের এখানে মাদক একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ মামলাই মাদকের। এই এলাকায় বিহারি ক্যাম্পসহ বেশ কয়েকটি পুরনো মাদক স্পট আছে; আমরা সেগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর মিরপুর ডিওএইচএস চত্বর সংলগ্ন সাগুফতা আবাসিক এলাকার প্রবেশ পথের পাশে ছয়তলা বিশিষ্ট থানা কমপ্লেক্স কাম ব্যারাক এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন ডিএমপির তৎকালিন কমিশনার মো.আসাদুজ্জামান মিয়া। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এ থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। পল্লবী থানার ১টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ৭টি বিট রয়েছে। সব বিটের কার্যক্রম হয় কালশীর ইসিবি চত্বরে থাকা ফাঁড়িতে। প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাস পল্লবী থানায়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে, যার বেশিরভাগই মাদক ও পারিবারিক জটিলতা সংক্রান্ত। ডিএমপির (ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ) আওতাভুক্ত পল্লবী থানার আয়তন ২৫ দশমিক ২৮ বর্গ কিলোমিটার। পল্লবী থানার উত্তরে তুরাগ এবং উত্তরা থানা, দক্ষিণে মিরপুর ও শাহ আলী থানা, পূর্বে বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট ও কাফরুল থানা এবং পশ্চিমে সাভার উপজেলা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]