মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর...
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: রোববার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৮.০২.২০২১ ৩:১৫ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’ লিখেছিলেন, আজি এ প্রভাতে রবির কর/কেমনে পুশিল প্রাণের পর/কেমনে পুশিল গোহার আঁধারে/প্রভাত পাখির গান! না জানি কেনরে এতদিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ....। অন্যদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম একদিন বাঙালিকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন। তবে এই উপহাসের কেন্দ্রে ছিলেন আমাদের দেশের কাঠমোল্লার দল। তাই তিনি লিখেছিলেন, ‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখন বসে/বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজি ফেকাহ হাদিস চষে/সেদিনের অবসান ঘটতে চলেছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলা আর বাঙালি সে অপবাদকে পেছনে ফেলে আজ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশ সত্যিই বদলে গেছে। এই সত্য কেউ আর আড়াল করে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশের উন্নতি-সমৃদ্ধি দেখে যাদের শরীরে জ্বালা ধরে তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন বাংলাদেশ বদলে গেছে; তারা বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার চিত্র যতই অস্বীকার করার চেষ্টা করেন, তাতে কোনো লাভ নেই। বিশ্বের বুকে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, বাংলাদেশের এই সাফল্যকে বিশ্বের সবাই স্বীকার করে নিয়েছে। ফলে যারা এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদের নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যকে আমলে নিতে চান না, তারা যে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করছেন সেটি তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। হ্যাঁ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ এই  বদলে যাওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে। শনিবার ভার্চুয়ালি বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এই সাফল্যের কৃতিত্ব দেশের জনগণকেই দিয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের এই অর্জন তুলে ধরতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কৃতিত্ব এ দেশের আপামর জনসাধারণের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।’ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ভার্চুয়ালি এই সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ হাসিনা। তিনি শুরুতেই বলেন, ‘আজ অবশ্য আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি বাংলাদেশের একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য। ‘বাংলাদেশ গতকাল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।’ লক্ষ্য অর্জনের এই সময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটল, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি; আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।’

এই ঐতিহাসিক ঘটনা হয় তো এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত শক্র ও ঘাতক জামায়াত স্বীকার বরবে না। স্বীকার করবে না জামায়াতের ঘনিষ্ঠ মিত্র বিএনপিও। তারা যতদিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, ততদিন বাংলাদেশকে নিঃস্ব করেছে। দীনতার চিত্র উপহার দিয়েছে। দেশকে আর জাতিকে উপহার দিয়েছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উলম্ফণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছে। ধর্মকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে অবৈধ উপায়ে টাকার পাহাড় বানিয়েছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বলা চলে ক্ষমতায় থাকাকালে তারা চরম স্বেচ্ছাচারের পরিচয় দিয়েছে। জামায়াত-বিএনপি একই মুদ্রার এপিট এবং ওপিট। বঙ্গবন্ধুর ঘাতক অবৈধ সেনাশাসক জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ করে বাংলাদেশকে বর্বর পাকিস্তানের আদর্শে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। জিয়া বাংলাদেশের নাম পাল্টাতে সক্ষম না হলেও বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাকিস্তানের রক্ত প্রবাহ ঢুকিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন আমৃত্যু। কিন্তু জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া পুঁজ-দুর্গন্ধ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন এবং বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ রাখেন এবং তিনি এতে আজ পুরোপুরি সফল।

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদ- পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মানদ-ের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৭ গুণ। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদ- ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদ- নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে। নিউইয়র্কে ইউএন-সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় গত শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর এই সিদ্ধান্তের ভেতর দিয়ে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেল বাংলাদেশ। এতটুকু তে সন্তুষ্ঠ নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রত্যাশা আরও বড় কিছু। অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বললেন, উন্নয়নের চলমান গতিধারা বজায় থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই উন্নত দেশের কাতারে উঠবে।

পরিশেষে বলা জরুরি যে, ঘাতক জামায়াত-বিএনপি, বাংলাদেশকে নিয়ে, বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যতই কুৎসিত ষড়যন্ত্র করুক, এতে প্রতিবারের মতোই ব্যর্থ হবে। দল দুটি কোনো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের উন্নতি-সমৃদ্ধি-গণতন্ত্র ও সুশাসনকে পশ্চাৎপদ করে রাখতে পারবে না। সেনা ছাউনিতে জন্ম নেওয়া বিএনপি সব ধরনের ভণ্ডামির মুখোশ খুলে গেছে। স্বাধীনতার শক্র-ঘাতক জামায়াতের পিঠে সওয়ার বিএনপি কুৎসিত চেহারা উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। বিএনপি এখনো রাজনীতির মাঠে বাজিমাৎ করতে চায়, শুধু তাদেরই নিয়ে, এখনো যারা স্বাধীনতা বিরোধী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিরোধী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শক্তিকে পুঁজি করে সামনে এগুনোর পথ দেখে। যদিও বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে এদেরই পুঁজি করে রাজনীতি করে আসছে এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়েছে। কিন্তু দিন বদলে গেছে। এদেশে পাকিস্তানপন্থি ধর্মকে পুঁজি করে যারা রাজনীতি করছে এবং স্বাধীনতার শত্রু বাঙালির শক্র তারা আর কোনোদিন বাংলাদেশের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধেরে চেতনা সম্পন্ন প্রতিটি বাঙালি রয়েছেন বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার পেছনে। তারা সব শক্তি দিয়ে দেশের অপশক্তিকে হটিয়ে দেবে এবং বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাবে নিরলস চেষ্টার মাধ্যমে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]