ভারতের
করোনা পরিস্থিতি এখন নাজুক পর্যায়ে। যদিও গত কয়েক মাসে ভারতে কোভিড-১৯
শনাক্ত এবং মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। গত জানুয়ারিতে গণ টিকাদান
কার্যক্রম শুরুর পর দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় ছিল ভারতীয়রা।
কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে সেই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে।ভারতের মহারাষ্ট্র
এবং কেরালাসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং মৃত্যু লাফিয়ে
বাড়তে থাকে।
বিবিসি জানায়, ভারতের বাণিজ্যিক
রাজধানী মুম্বাই থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অমরাবতী জেলার চিকিৎসকরা লক্ষ্য
করেন, ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ করেই জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা
বাড়ছে।অথচ, মহারাষ্ট্রের এই জেলার জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল।
জেলার সরকারি হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর আইসিইউ বেডে রোগীর
সংখ্যাও প্রায় শূন্যে নেমে এসেছিল।হঠাৎ করে চলতি মাসে সব কিছু পাল্টে যায়
বলে জানান স্থানীয় সংবাদিক অনিল যাদব।তিনি বলেন, ‘এখন পুরো জেলা জুড়ে
আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে।’চলতি মাসের শুরু থেকে এক অমরাবতী জেলাতেই ১০
হাজারের বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত এবং ৬৬ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
এ সপ্তাহে জেলায় এক হাজারের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে
ভর্তি হয়েছেন। অমরাবতীসহ রাজ্যের আরো কয়েকটি জেলায় পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করা
হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শ্যামসুন্দর নিকম
বলেন, ‘কেন আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে তার কারণ আমরা সত্যিই বুঝতে
পারছি না। সব থেকে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এবার একবারে একটি পরিবারের সব
সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন। এই প্রবণতা সম্পূর্ণ নতুন।’অমরাবতীর আশেপাশের
জেলাগুলোতেও দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার এক
মহারাষ্ট্রেই প্রায় নয় হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা গত চার মাসের
মধ্যে দৈনিক শনাক্তের নতুন রেকর্ড। ওই দিন এ রাজ্যে মারা গেছেন ৮০
জন।রাজ্যের কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডা. সঞ্জয় ওআক জানান,‘স্থানীয় লোকজন
মাস্ক ব্যবহার করছেন না।
এছাড়া, তারা বিয়ে
বা স্থানীয় নির্বাচনী প্রচারের মত অপ্রয়োজনীয় ভিড়ে জড় হচ্ছেন। লোকজন অবাধে
চলাফেরা করছেন। কেউ সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। রোগ শনাক্তের পরীক্ষা
এবং রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কাজের গতিও খুব ধীর।
এসব কারণেই বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।’শুধু মহারাষ্ট্র নয়; কেরালা,
কর্নাটক, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড় এবং পাঞ্জাবে সংক্রমণ আবারও
দ্রুত বাড়ার খবর পাওয়া গেছে।এসব খবর এমন সময়ে আসছে যখন ভারত কোভিড-১৯
মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের বিজয় দেখতে পাচ্ছিল।এর আগে দেশটিতে
বর্তমানে দৈনিক শনাক্ত ২০ হাজারের নিচে নেমে আসে যা গত সেপ্টেম্বরে প্রায়
লাখ ছুঁই ছুঁই রোগী শনাক্ত হচ্ছিল।এ অবস্থায় কেন আবার পরিস্থিতি উল্টো দিকে
ঘুরতে শুরু করেছে তা বিজ্ঞানী ও রোগ গবেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে।তবে কী ভারতে
কোভিড এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে?:এপিডেমিওলজিস্ট ডা. ললিত কান্ত এ
বিষয়ে বলেন, দেশ জুড়ে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠার ‘একটি ভ্রান্ত ধারণা’
ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ
প্রতিরোধে যেসব সুরক্ষা ব্যবস্থার গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সেগুলো বাদ দিলে
যে পরিস্থিতির তৈরি হবে সেটা সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই
যেসব জায়গায় ভিড় হয় সেসব জায়গা খুলে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আরো সতর্কহওয়ার
প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া সব রাজ্যে আবারও বৃহৎ
আকারে রোগ শনাক্তের পরীক্ষা, রোগীর সংস্পর্শে আবার ব্যক্তিদের খুঁজে বের
করা এবং অন্যদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কাজ করতে হবে। পরিস্থিতি
আরো খারাপ হওয়ার অপেক্ষা আমরা করতে পারি না।’থাকতে হবে সতর্ক
:যেসব রাজ্যে দৈনিক শনাক্ত বাড়ছে যেসব রাজ্যে সতর্ক অবস্থার পাশাপাশি
যেখানে রোগের প্রকোপ কমে গেছে সেখানেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কেরালার
কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডা. এ ফাতাহুদ্দিন।
তিনি
বলেন, ‘নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে ভাইরাস সংক্রমণ
থেমে গেছে। বরং এটা এক দেহে থেকে আরেক দেহে ছড়াচ্ছে এবং বয়স্ক বা দীর্ঘরোগে
ভুগছেন এমন দুর্বল শিকারের অপেক্ষায় আছে।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাস থেকে
মুক্তি পেতে হলে সেটির থেকে এক পা এগিয়ে থাকতে হবে। এজন্য দ্রুত টিকা
দেওয়ার ব্যবস্থা করা, জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং বেশি করে পরীক্ষা করাতে
হবে।নতুবা অন্যান্য রাজ্যেও আজ হোক বা কাল, দৈনিক শনাক্ত বাড়বে বলেও মনে
করেন ডা. ফাতাহুদ্দিন। ‘এবং সেটা হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেবে। বিশেষ করে
স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যারা এক বছর ধরে যারা মহামারীর বিরুদ্ধ প্রাণপণ
লড়াই করে যাচ্ছেন’ যোগ করেন ডা. ফাতাহুদ্দিন ।