প্রকাশ: রোববার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৮.০২.২০২১ ২:০৮ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে টানা বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া ও সেনাশাসনের অবসান চেয়ে দেশের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের এই বিক্ষোভ সামাল দিতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জান্তার প্রশাসন। তাই জনবিক্ষোভ ঠেকাতে এবারে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। তাদের মারমুখী আচরণে সাধারণ মানুষ এখন চরমভীতির ভিতরে দিন কাটাচ্ছে। যখন তখন পুলিশ যাকে তাকে গ্রেফতার করছে। আটকদের অনেকেই আবার নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন। তাদের কোন খোঁজখবর পরিবার পাচ্ছে না। ওয়াং থুন নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলেও তার পরিবার থেকে কোন খোঁজ মিলছে না। বার বার পুলিশের কাছে গেলেও তারা কোন তথ্য দিচ্ছে না।
এমনকি তাকে আটক করা হয়েছে তাও স্বীকার করছে না। পুলিশের এই নিরবতা যা মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনায় সারা মিয়ানমার জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও আন্দোলনকারীদের মতে, এইভাবে গণগ্রেফতার ও গুমের মত ঘটনা ঘটিয়ে জান্তা তাদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে। আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে তার নিষ্কণ্ঠক করতে চায়।
এবিষয়ে বিক্ষুদ্ধকারীদের একজন ওয়ান থুন বলেন, এভাবে গ্রেফতার গুম করে আমাদের আন্দোলন কোনভাবেই থামিয়ে দেওয়া যাবে না। খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।এদিকে জাতিসংঘে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের দূত সরব হওয়ার পর দেশটির সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে নির্বিচারি হয়ে উঠেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিক্ষোভকারীরা সমবেত হওয়ার আগেই কয়েকটি জায়গার দখল নিয়ে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলেই গ্রেফতার করা হয় অনেককে। এসময় লাঠিপেটা, রাবার বুলেট ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। এসময় আটক করা হয়েছে বেশ কয়েক জন সংবাদকর্মীকেও। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশি এ্যকশানের পরেও রাস্তায় নেমে এসেছে বিক্ষোভকারীরা। ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে নৃ তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের একটি গ্রুপ। দিন গড়াতে থাকলে তাদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অভ্যুত্থানবিরোধী গান গেয়ে বিভিন্ন পার্শ্বসড়কে মিছিল শুরু করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি শহরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে।
মধ্যাঞ্চলের শহর মনওয়ার এক বিক্ষোভকারী জানান, বিক্ষুব্ধদের ঘিরে রেখে তাদের ওপর জল কামান প্রয়োগ করা হয়েছে। আয় আয় টিন্ট নামের বিক্ষোভকারী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর জল কামান ব্যবহার করা হয়েছে- মানুষের সঙ্গে এরকম আচরণ তারা করা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ মান্দালয়ে আটক করা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রয়েছেন অং সান সু চির দল এনএলডি থেকে নির্বাচিত দুই মুসলিম আইনপ্রণেতার যার একজন উইন মিয়া মিয়া।
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ নিতে গত শুক্রবার জাতিসংঘকে আহ্বান জানান ওই সংস্থায় নিয়োজিত দেশটির রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন। তিনি দেশটির জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদানে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া মিয়ানমার প্রশ্নে জাতিসংঘের এক বিশেষ বৈঠকে সব সদস্য রাষ্ট্রকে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতির প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিকে ক্ষমতা দখলকারী সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর সর্বনিম্ন বলপ্রয়োগ করছে কর্তৃপক্ষ। তারপরও এখন পর্যন্ত অন্তত তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষের দাবি এক পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হয়েছে।