ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, ইভিএম ভাঙচুর, গুলিতে নিহত, ভোটকেন্দ্র ঘেরাও করে হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ৷ বুধবার সকাল ৮টা থেকে একযোগে সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়রপ্রার্থী এম রেজাউল করিম নৌকা প্রতীকে বিএনপির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের ধানের শীষ প্রতিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। সকালে এই দুই প্রার্থী নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোট দিয়ে এই দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী স্ব-স্ব অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
সন্ধ্যায় ঘোষিত ৫৩ কেন্দ্রের ফলে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী এগিয়ে রয়েছেন। এই কেন্দ্রগুলোতে তিনি নৌকা প্রতীকে ১৭ হাজার ২৩৪ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্ধী বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ১৮৯ ভোট। নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে ভোটের ফল ঘোষণা করছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমকে হারিয়েছিলেন। আ জ ম নাছির পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। সাবেক মেয়র মনজুর পান ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭ ভোট। সেই সময় ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন মনজুর। এবার বিএনপি নির্বাচনে থাকলেও ‘দখলদারিত্বের’ কারণে কোনো ভোটই হয়নি বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটি।
বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও ভোটারদের মাঝে আগ্রহের কোনো ঘাটতি ছিলনা। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোটাররা সকাল থেকেই জড়ো হন বিভিন্ন কেন্দ্রে৷ তবে এবার ইভিএম পদ্ধতি থাকায় অনেক কেন্দ্রেই ভোটাররা ভোট দিয়ে দ্রুত চলে যেতে পেরেছেন৷ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরে সন্তুষ্ট ভোটাররা৷ ভোটকেন্দ্র ঘেরাও করে হামলা, ইভিএম ভাঙচুরের অফিযোগে পাথরঘাটায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে খুলশিতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মোটরসাইকেল ভাঙচুর, লালখানে কাউন্সিলর প্রার্থী ও মনোনয়ন বঞ্চিত’র সমর্থকদের সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১, ভাইয়ের হাতে ভাই খুনের মত ঘটনা ঘটেছে। এদিকে নির্বাচনী সহিংসতায় চমেকে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৪০ জনের মত।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন। মোট ২৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এদের মধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন। মেয়র পদে ৭ প্রার্থী হলেন- নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়া মিনার প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম, চেয়ার প্রতীক নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে খোকন চৌধুরী নির্বাচন করেছেন। তবে এবারের নির্বাচনে ২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এর মধ্যে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্ধীতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হারুনুর রশিদ।
চকবাজার ওয়ার্ডের কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ, কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ কেন্দ্রসহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের চিত্র এটি। সকালে মাকে সালাম করে ভোট দেওয়ার জন্য নগরের পশ্চিম বাকলিয়ায় যাচ্ছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সিটি ডা. শাহাদাত হোসেন। সকাল সাড়ে ৯টায় নগরের বাদশা মিয়া রোডের বাসা থেকে বের হন তিনি। ডা. শাহাদাত সকাল ১০টায় পশ্চিম বাকলিয়ার বিএড কলেজে ভোট দেন। বাসা থেকে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পশ্চিম বাকলিয়া, পাথরঘাটা ও জামালখানে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোটকেন্দ্র দখল করে রেখেছে। রাতে বাকলিয়ার ৭জন এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোটে আমি শেষ পর্যন্ত থাকবো। তাদের ভোট ডাকাতির মুখোশ সারাবিশ্বে জানাবো। প্রশাসন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।
এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। সকাল ৯টায় নগরের এখলাসুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন।
এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। ভোট দেওয়ার পর
রেজাউল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সুন্দরভাবে ভোট দিয়েছি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। সারাদিন সুষ্ঠু ভোট হবে বলে আশা করি। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারা সবসময় এমন অভিযোগ করে আসছে। এটা তাদের নিয়ম। সারাবছরই তারা শুধু অভিযোগ করে আসছে।
এদিকে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালিকে আটক করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ এ খবর নিশ্চিত করেছেন।