সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাইলেন সরকারি ঘর পাওয়া সেই সাবেক এমপি
প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৮ এএম আপডেট: ২৭.০১.২০২১ ২:৪২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে নির্বাচিত এক সময়ের দাপুটে সংসদ সদস্য এনামুল হক জজ (৮০) অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জজ মিয়ার দাবি, তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তবে, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। এ বয়সে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন, নিজের শিশু সন্তানকে মানুষ করতে হলে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি তার প্রয়োজন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে আবেদন করলে গত শনিবার সকালে তিনিসহ ২০০ জনকে ঘরের চাবি ও দলিল বুঝিয়ে দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে যত আলোচনা-সমালোচনা। তবে, জজ মিয়া বলছেন, আল্লাহ চাইলে তিনি ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেই উঠবেন।

গফরগাঁও পৌরসভায় ভাড়া বাসায় খোঁজ নিতে গেলে আক্ষেপ করে সাবেক এমপি জজ মিয়া বলেন, জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের পালিত মেয়ে নাজুকে ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন এনামুল হক জজ। পরে ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে দু’বার সংসদ সদস্য হন তিনি। এক সময় তার গফরগাঁও পৌর শহর ও ঢাকায় বিলাসবহুল বাড়ি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ পৌর শহরে ১২ শতাংশ জমি মসজিদের নামে লিখে দিয়ে এক রুমের ভাড়া বাসায় থাকছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। খাট কেনার সামর্থ্য না থাকায় মেঝেতেই ঘুমান তিনি। প্রথম স্ত্রী নাজু এক মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা হক ঢাকার পুরানা পল্টন ও মিরপুর কাজী পাড়ায় দুই সন্তান নিয়ে দুটি বাড়িতে থাকেন। সহায় সম্পদ যা ছিল সবই এই দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নামে লিখে দিয়েছিলেন এনামুল হক। বর্তমানে তিনি তৃতীয় স্ত্রী রুমার সঙ্গে পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া বাসায় ৮ বছরের সন্তান নুরে এলাহীকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে এনামুল হক বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় ছিলাম, কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। আমি তখন ইচ্ছা করলেই মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিতে পারতাম। কিন্তু নিইনি। আমি কোনোদিন ভাবতেও পারিনি শেষ বয়সে এসে আমার এমন অবস্থা হবে।’ জজ মিয়ার দাদা হালিম উদ্দিন ছিলেন ভারতের হুগলী মহসীন মাদরাসা থেকে ১৮৮৪ সালে ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ গফরগাঁওয়ের প্রথম পাস করা মৌলভী। তার ছেলে আব্দুছ ছালাম ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এমএ পাস করেন। নাতি এনামুল হক জজ মিয়া ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসন থেকে জাতীয় পার্টির (জাপা) হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে অজানা কারণে নিজের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে হয়েছেন নিঃস্ব। তৃতীয় স্ত্রী ও ৯ বছরের ছেলেসহ ছোট্ট খুপরি ভাড়া বাসায় তার বসবাস। নিজের শেষ সম্বল বলতে আছে কিছু হাড়ি-পাতিল, একটি লেপ ও একটি তোশক। ঘরের মেঝেতেই তার বসবাস, নেই একটি খাটও। এবার তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন দুইবারের এমপি হয়েও গৃহহীনদের ঘর পেয়ে। তবে, তার মতো ব্যক্তির গৃহহীনদের ঘর নেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরা।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আটজনের একটি দল নিয়ে চলে যাই ভারতের মেঘালয়ে। সেখান থেকে এক মাস পরে ফিরে আসি কিশোরগঞ্জের ফুলতলায়। নির্দেশ আসে হোসেনপুর হয়ে নদী পেরিয়ে গফরগাঁও অপারেশনের। একটি বাজারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কখনো রাস্তায় কখনো বাড়িঘরের ভেতর দিয়ে যাই। গন্তব্য কালীবাড়ির (বর্তমান গফরগাঁও ইমামবাড়ি) কাছে একটি পাটখেত। সেখানে এসএলআর বিনিময় হবে বিকেল ৪টায়। সময়মতো চলে আসি হোসেনপুর হয়ে নদী পেরিয়ে। হেঁটে চলে আসি গন্তব্যে। হঠাৎ দেখি ১০-১২ বছরের একটি ছেলে আমাকে ইশারায় ডাকছে। কাছে গেলাম। একটি চিরকুট হাতে দিয়ে ছেলেটি উধাও। লেখা ছিল- তাড়াতাড়ি কেটে পড়ো। সমস্যা আছে। নতুন জায়গার কথা লেখা ছিল চিরকুটে। সেখানে পরদিন সন্ধ্যায় যেতে হবে। হঠাৎ পাকবাহিনীর উপস্থিতি টের পাই। পালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ধরা পড়লাম।’ তিনি বলেন, ‘যখন জ্ঞান ফিরল, দেখি আমি গফরগাঁও ডাকবাংলোর আমগাছে ঝুলে আছি। হঠাৎ কানে ভেসে এল এটা মৌলানা সাহেবের লোক। আমাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। যিনি আমাকে ছাড়িয়েছেন তার কাছে জীবন বাঁচানোর জন্য আমার পরিবার কৃতজ্ঞতা জানাল।’ এনামুল হকের তৃতীয় স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, ‘আমি একজন সাবেক এমপির স্ত্রী হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠতে পারি না। পৌরসভার ভেতরে যদি কোনো ব্যবস্থা করে দিত তাহলে খুব ভালো হত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেও হয়তো ছেলেকে মানুষ করতে পারতেন।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এনামুল হক এক সময় অনেক অর্থ সম্পদের মালিক ছিলেন। দুই বারের এমপিও ছিলেন। তার এখন কিছুই নেই। থাকার একটু জায়গা ছিল। তাও মসজিদের নামে দান করে দিয়েছেন। তার এমন দুরবস্থা দেখে তাদের খুব খারাপ লাগে। একজন বলেন, তিনি একজন সাবেক এমপি ও সম্মানী ব্যক্তি। তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ওঠা অপমানজনক। সরকার যদি তার প্রতি একটু নজর দেয় তাহলে হয়তো সম্মানের সঙ্গে তিনি চলতে পারবেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ছাড়াও তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। তাছাড়া তিনি কিছু ফার্নিচার আবদার করেছিলেন। তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করেই স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ২৩ জানুয়ারি তাকে একটি ঘর বুঝিয়ে দেন। তাছাড়া, তার দৈনন্দিন কিছু চাহিদা আছে। সেগুলো সাধ্যমতো ব্যবস্থা করা হবে।’ এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ঘরগুলো আশ্রয়হীনদের জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে যারা নির্বাচন কমিটিতে আছেন, তাদের সুপারিশেই তাকে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। আমাদের সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।’



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]