সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) সুমন চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছয় বছর পর আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতদিন এ তথ্য জানা যায়নি। গত সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে আদালত এখনো অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি। চার্জশিটটি পর্যালোচনার জন্য আদালত আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। ২০১৪ সালে শাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সুমন নিহত হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সিলেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শামীম উর রশীদ পীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ মামলার ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে তিনি চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটটি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। চার্জশিটে বহিরাগত ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। তৎকালীন শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিবন চক্রবর্তী পার্থকে প্রধান অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন-তৎকালীন শাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ, সহসভাপতি সৈয়দ জুয়েম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ মিয়াজী, সহসম্পাদক মোশাররফ হোসেন রাজু, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন, ছাত্রলীগ কর্মী সজল চন্দ্র ভৌমিক, আব্দুল কুদ্দুস নোমান, সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম বুলবুল, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আল আসাদ, তৎকালীন সহসভাপতি নুরে আলম, আইন সম্পাদক জহির হোসাইন, সহসভাপতি এসকে হাসিবুর রহমান, ছাত্রলীগ কর্মী জুনায়েদ আহমদ, হাবিবুর রহমান হাবিব. সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হোসেন নাঈম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী জেসমুল হাসান, ক্রীড়া সম্পাদক জাকির খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আশিকুজ্জামান রূপক, ছাত্রলীগ কর্মী নয়ন চৌধুরী, সহসম্পাদক সুকান্ত ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক তৌকির আহমেদ তালুকদার, বহিরাগত সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ারুল হক আলম, রানা আহমদ শিপলু ও এমদাদুল হক (খোকন)। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গ্রেফতার হওয়া নাঈম আহমদ ও ফরহাদ আহমদের বিরুদ্ধে হত্যাকা-ের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা মোশাররফ, হাবিবুর, জাহিদ, ফরহাদ ও এমদাদ হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছে এবং নাঈম ও সজল মহানগর দায়রা জজ আদালতের জামিনে আছেন।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, ২০১৩ সালের ৭ মে শাবি ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটিতে সঞ্জিবন চক্রবর্তী পার্থকে সভাপতি, আবু সাঈদ আকন্দ, রণঞ্জিৎ দেব, অঞ্জন রায়কে সহসভাপতি, ইমরান খানকে সাধারণ সম্পাদক, সাজিদুল ইসলাম সবুজকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রজিৎ চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। আর উত্তম কুমার দাস, আব্দুর রশিদ খান ও রাশেদকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়। এ কমিটি না মেনে শাবি ছাত্রলীগের অঞ্জন রায়, উত্তম কুমার দাসের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ বিদ্রোহ করে।
সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতারা আড়ালে থেকে তাদের সমর্থন দেন। দলের স্থানীয় নেতাদের সমর্থনে তারা নিজেদের নাম প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ (রহ.) হল দখল এবং ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে কর্মকা- চালায়। এরপর কমিটির নেতারা গ্রুপ গঠন করে। এ কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম শত্রুতা তৈরি হয়। বিদ্রোহী অঞ্জন ও উত্তম গ্রুপ এ ঘটনার আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদত ইমরান খানকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় মারধর করে গুরুতর জখম করে এবং ডান হাত ভেঙে দেয়। ইমরানকে মারধরের ঘটনায় বিরোধ আরও বেড়ে যায়।
পার্থ ও সাঈদ গ্রুপ বাইরের ক্যাডারদের নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে। একপর্যায়ে তারা হল ও ক্যাম্পাস দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর লাঠিসোটা, দা, পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ক্যাডারদের নিয়ে পার্থ, সাঈদ ও সবুজের নেতৃত্বে শাহপরাণ (রহ.) হল ও ক্যাম্পাস দখলে হামলা চালায়। প্রথমে অঞ্জন ও উত্তম গ্রুপ পিছু হটলেও পরবর্তী সময়ে বহিরাগত ক্যাডারদের সহায়তা তারাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পার্থ গ্রুপের অস্ত্রধারী ক্যাডার সৈয়দ জুয়েম গুলি ছুড়লে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন গুলিবিদ্ধ হন। ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।