ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৮ এএম আপডেট: ২৭.০১.২০২১ ২:১৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ভারত থেকে কেনা ৫০ লাখ ডোজ করোনা টিকা গত সোমবার দেশে এসে পৌঁছেছে। এর আগে ভারতের শুভেচ্ছা উপহার ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছায়। সরকারের হাতে এখন ৭০ লাখ টিকা রয়েছে। আজ থেকে মানবদেহে টিকার প্রথম প্রয়োগ শুরু হতে যাচ্ছে। আগামীকাল থেকে আরও বেশ কয়েকটি স্থানে এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রম সরকার হাতে নিয়েছে। টিকা নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। বিদেশ থেকে টিকা এনে সাফল্যই বিএনপির গাত্রদাহের কারণ। ফলে প্রতিদিনই তারা টিকা নিয়ে নানা গুজব, মিথ্যা কথা বলে চলেছে। এতে অবশ্য দলটি হালে পানি পাচ্ছে না। বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে মানুষের সবচেয়ে আকাক্সিক্ষত করোনা টিকা এনে তা প্রয়োগের ব্যবস্থা করছেন। এটা যে আমাদের জন্য অনেক বড় বিজয় একই সঙ্গে অর্জন তা সবাই অনুধাবন করতে পারছেন। করোনা মানুষের জীবনকে কতটা বিপদাপন্ন করে তুলেছে, তা তো কারোর অজানা নয়। এমতাবস্থায় করোনা প্রতিষেধক টিকাই পারে এই বিপদাপন্ন অবস্থা থেকে জাতিকে সুরক্ষা দিতে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বহু দেশেই টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তাও সবার জানা। গণহারে টিকা প্রয়োগে অনেক দেশ এগিয়ে আছে। ভারতেও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে সম্প্রতি।
ভারতের কাছ থেকে ২০ লাখ টিকা উপহার পাওয়ার পরে ৫০ লাখ টিকা প্রাপ্তির পরে এখন গণহারে টিকা দেওয়ার দিনক্ষণও সরকার ঠিক করে ফেলেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকার ব্যাপারে যা যা বলেছিলেন, তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। তার একটি কথার বিচ্যুতি হয়নি। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে টিকা প্রয়োগের দিকে এগোচ্ছে দেশ। এই সাফল্য একদম সহ্য করতে পারছে না জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি। ফলে নানা উদ্ভট কথা বলে দলটির নেতারা নিজেদের উপহাসের পাত্রে পরিণত করছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাফল্যের সাক্ষর রাখায়, বিএনপি নিজেদের আর সামলিয়ে রাখতে পারছে না। দলটির নেতাদের যে সংযম প্রদর্শন করা উচিত আখেরে নিজেদের ভালোর জন্য, সেটিও তারা ভুলে গেছে।
করোনা টিকা আবিষ্কারে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অনেক ঘাম ঝরেছে। শেষ অবধি তারা মানবজাতির সুরক্ষায় করোনা টিকা উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন। করোনা বিশ্বকে কতটা টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে তা সবাই প্রত্যক্ষ করেছেন। বিশ্বকে এই কম্পমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে টিকা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মানুষের রক্ষা কবজ হিসেবে টিকার ওপরে আর কিছু নেই। গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। একথা নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের তিনি জানান আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এদিন ২৫ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশ ও আর্মি- এদের মধ্যে যারা টিকা পাবেন তাদের ৫ জনের টিকা দেওয়া দেখবেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ব্যাপক হারে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চারশ থেকে পাঁচশ’ জনকে টিকা দিয়ে সাতদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ করে প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। এদিকে করোনা নিয়ে বিএনপির অভিযোগের জবাব দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে ব্যবসায়িক স্বার্থের অভিযোগ অমূলক ও ভিত্তিহীন। কাউকে লাভবান করা বা কারও ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় সরকার করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেনি। এটা সংগ্রহ করা হয়েছে জনগণের স্বার্থে। বিএনপি এ নিয়ে অপপ্রচার, গুজব এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মানুষ যাতে ভ্যাকসিন গ্রহণ না করে সে বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি করছে এবং করোনা ক্রাইসিসকে দীর্ঘসূত্রতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি করে অহেতুক একটা ভালো কাজে বাধা দেওয়া ঠিক নয়। দলটিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ভ্যাকসিন ইস্যুতে গঠনমূলক এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের মিথ্যাচার জনগণ অতীতের মতো এখনও আমলে নিবে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা দিলে কথা রাখেন। দ্রুত ভ্যাকসিন এনে তিনি সেটিই প্রমাণ করেছেন। তার নির্দেশে কোথায় কোথায় অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে তার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, দেশে করোনার সূচনা থেকে সরকার সাফল্যের সঙ্গে এ মহামারি মোকাবিলা করেছে। যথাযথভাবেই সরকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে; যা অনেক ধনী ও সম্পদশালী দেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, টিকাদান সঠিক সময়েই শুরু করা হবে। তিনি তার এ কথা ঠিক রেখে করোনা টিকাদান কার্যক্রম শুরু করছেন। যা দেশের মানুষের মধ্যে বাঁধভাঙা আনন্দের উৎস তৈরি করেছে।