#কারা উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ
#অপেশাদার অপরাধীদের কারামুক্তির বিষয়ে ভাবছে সরকার
করোনা মহামারিতে যেখানে অপরাধ বৃদ্ধি পাবার ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে অনেকটাই। এ বিষয়ে গতকাল সংসদে এক পরিসংখ্যান পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার উত্থাপিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আছে ৮২ হাজার ৬৫৪ জন বন্দি। যাদের মধ্যে ৭৯ হাজার ৪৫৪ জন পুরুষ ও ৩ হাজার ২০০ জন নারী। যেখানে বিগত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কারা অধিদফতর ও ওয়ার্ল্ড প্রিজন ব্রিফ’র সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৬৮টি কারাগার ও জেলগুলোতে ৪০,৯৪৪ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে অপরাধী ছিল মোট ৮৮,০৮৪ জন। কমেছে ৫৪৩০ জন। তবে এখনও আছে প্রচুর মামলার চাপ এবং অনেকেই আছেন বিচারাধীন মামলায়।
জানা গেছে, বিচারাধীন থাকা মামলার বেশিরভাগই পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হঠাৎ করেই অপরাধের সাথে যুক্ত হয়েছে। কেউবা হয়তো দারিদ্র্যের কষাঘাতে অথবা নানা পরিস্থিতির মুখে পড়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছেন। যেহেতু এদের বেশিরভাগই সহিংস অপরাধের সাথে যুক্ত নয়, সেহেতু তাদের শাস্তির পরিমাণও এক বছরের বেশি নয়। এরা পেশাগত অপরাধী নয় বিবেচনায় নিয়ে এদের অনেকের নিঃশর্ত মুক্তি, জামিন, প্রবেশন নিয়ে ভাবছে সরকার-এমন তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
সহিংস অপরাধ বিশেষ করে খুন, ধর্ষণ, সিরিয়াল খুন, এসিড নিক্ষেপ, অস্ত্রমামলা ও ডাকাতির মতো অপরাধের বাইরে অসহিংস ও স্থুল এবং স্বল্পমাত্রার অপরাধীদেরকে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারেও কাজ করার কথা ভাবছে সরকার ও কারা অধিদফতর। বিশেষ করে, বয়স বিবেচনায়, গুরুতর অসুস্থ, মানসিক রোগী ও শিশু-কিশোর ও তাদের মায়েদের অবিলম্বে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এর বাইরে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে জরুরি সিদ্ধান্তও আসতে পারে। এছাড়া সংশোধনাগারে থাকা আসামিদের ব্যাপারে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বন্দি পুনর্বাসনের আওতায় দেশের বড় কারাগারগুলোতে বন্দিদের জন্য গড়ে উঠেছে ছোট্ট ছোট্ট বেশ কিছু শিল্প। দক্ষতা বাড়াতে চলছে প্রশিক্ষণ প্রকল্প। যদিও কারাবন্দিদের নানা রকম হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ হাতে নিলেও কারাপণ্যের যথাযথ বাজারজাত নিশ্চিত করতে না পারায় অনেক ক্ষেত্রেই মিলছে না কাক্সিক্ষত সুফল। সে ক্ষেত্রে আরো বড় পরিসরে পরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হলেই ত্বরান্বিত হবে এসব প্রকল্প। জেল কোড অনুসারে, প্রতি ৩৫ বর্গফুট জায়গা এক জনের জন্য বরাদ্দের কথা থাকলেও, কারাবন্দিরা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা।
তবে, সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার হওয়া এ সমস্যার কিছু সমাধান হলেও। সংকট পুরোপুরি কাটেনি। চর্চা ও খেলাধুলা আর সংস্কৃতির নানা আচার অনুষ্ঠান বদলে দিয়েছে জেল জীবনের মানে। এক কারাবন্দি জানিয়েছেন, ‘জেল সম্পর্কে তার খুব ভীতিকর এবং খারাপ একটি ধারণা ছিল। এখন সে ধারণাটা অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। তবে জেলে তৈরি পণ্য বিপনের ব্যবস্থা ঠিকঠাক না হওয়ায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসব দক্ষতা কাজে লাগানোর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি বলে আক্ষেপ করেন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, সবার আগে মেটাতে হবে জনবল ঘাটতি। তাই বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন বড় পরিসরে পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়নে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, একটা নীতিতে যখন পরিবর্তন আসবে তখন কিন্তু আইন, নীতি, অবকাঠামো সব পরিবর্তন করতে হবে। এ বিষয়ে কারাসূত্র জানিয়েছে, তারা চেষ্টা করছেন দ্রুত এই কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার ব্যাপারে। দক্ষতা বৃদ্ধির এসব কার্যক্রমে গতি এলে হয়তো অপরাধে শাস্তি পাওয়া এই মানুষই বদলে যাবে দক্ষ জনগোষ্ঠীতে। কারাগারগুলোতে অধূমপায়ী, বৃদ্ধ ও কিশোরদের জন্য রয়েছে পৃথক থাকার ব্যবস্থা। গোসল ও খাবারের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা এবং দিন-রাত সব সময়ের জন্য টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও পাশাপাশি বেশ কিছু সমস্যাও আছে। এর মধ্যে রয়েছে খাবার সরবরাহে বিলম্ব, স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতে সমস্যা, বৈদ্যুতিক সমস্যা, বন্দি রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণে জটিলতা, বিনোদন সামগ্রীর অভাব। কারা কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, এসব সমস্যা সাময়িক। এগুলো খুব শীঘ্রই কেটে যাবে। কারা সূত্র জানিয়েছে, কিছু কিছু কারাগারে বন্দিদের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে কারাভ্যন্তরের ক্যাশ টেবিলের সামনে বিশাল একটি সাউন্ড বক্স রাখা হয়। সেখানে বন্দিরা ইচ্ছেমতো তাদের পছন্দের গান শুনতে পারেন।
যেমন, কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারগারে এ ব্যবস্থা আছে। এছাড়া কারাগারের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি বন্দির সঙ্গে সুন্দর আচরণের। এর বাইরে কারাগার থেকে বের হয়ে সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন গঠনের জন্য নিয়মিত চালানো হচ্ছে মোটিভেশন কার্যক্রম। কারারুদ্ধ জনৈক ব্যক্তির স্বজন ভোরের পাতাকে জানিয়েছেন, কারাগার শুধু শাস্তি প্রদানের স্থান না করে একে বন্দি সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা উচিৎ। সেইসঙ্গে কারা উন্নয়নের ব্যপারে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিলে দেশে অপরাধপ্রবণতাও অনেকটা কমে আসবে বলে জানান তিনি।