প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৩ পিএম আপডেট: ২২.০১.২০২১ ২:৫৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ১৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের জন্য এই কর্মসূচির আওতায় এসব জমি একদম হতদরিদ্র মানুষগুলোর মাঝে বিতরণ করা হবে। কাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব পরিবারের কাছে ঘর হস্তান্তর করবেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ দেওয়া ছাড়াও এসব পরিবারকে ঋণদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা ও আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আহমেদ কায়কাউস বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন মুজিববর্ষে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। প্রতিটি পরিবারকে আলাদাভাবে ঘর করে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছেন। করোনার মধ্যে ছয়মাসেরও কম সময়ে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে দুই হাজার ৯৮ একর সরকারি খাস জমি। এসব জমির বেশ কিছু অবৈধ দখলদার ছিল সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকারি জমি উদ্ধার করে জনকল্যাণে ব্যবহার হচ্ছে ফলে দু’টি উপকার হয়েছে। এসব বাড়িতে সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বাড়ির বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের জন্য আশপাশে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, মুজিববর্ষের অসাধারণ ঘটনা। সরকারি উদ্যোগে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করার নজির পৃথিবীতে এ প্রথম।
প্রধানমন্ত্রীর দর্শন হচ্ছে, কাউকে যদি ছাদ দেওয়া হয় তার মাধ্যমে তার দারিদ্র্য বিমোচনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী নির্মিত এসব বাড়ির জন্য উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ ও কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সে কমিটি নিজেরা নির্মাণসামগ্রী কিনে বাড়িগুলো বানাচ্ছে। সাধারণভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দরপত্রের মাধ্যমে কাজ করা হলেও এটি সরাসরি স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও সরকারি তরুণ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হচ্ছে।
মুখ্য সচিব বলেন, সচিবদের পক্ষ থেকে দু’টি করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আরও ছয় হাজার ৫৭০টি ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। এরমধ্যে অনেকেই নির্মাণ করে ফেলেছেন, অনেকেই করতে যাচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও এ দায়িত্বগুলো নিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা তিন লাখের কিছু কম। জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবার আছে ছয় লাখের কিছু কম। প্রায় নয় লাখ পরিবার আছে। প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে আগামী এক মাসে ঘর পাবে প্রায় এক লাখ পরিবার। এটি চলমান থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সবাইকে ঘর দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করতে পারবো বলে আশা করছি। ১০ লাখ মানুষ মাথার নিচে ছাদ, সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ পেলে কী পরিমাণ কল্পনাতীত মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, এসব ঘরের নকশা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে দু’টি শয়ন কক্ষ, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর ও একটি লম্বা বারান্দা থাকবে। প্রতিটি পরিবারকে দুই শতাংশ জমি স্বামী-স্ত্রী দু’জনের নামেই রেজিস্ট্রি ও নামজারি করে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে একটি সনদ দেওয়া হচ্ছে। ঘরগুলো এমন জায়গায় করা হয়েছে যাতে তার জীবনধারণের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা হলেও জমির দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা হবে।
মুখ্য সচিব বলেন, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। যার মূল লক্ষ্য ছিল গৃহহীনদের মাথায় ছাদ দেওয়া। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫৮৯টি ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। জানা গেছে, তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ ঘরগুলো দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায় তৈরি করা হয়েছে ২৪ হাজার ৫৩৮টি ঘর। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনশীল ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় ৩৮ হাজার ৫৮৬টি ঘর ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকায় তিন হাজার ৬৫টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোতে মোট ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা।