বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বাংলার মাটিতে করোনার টিকা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

টিকা নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলার মাটিতে করোনার টিকা পৌঁছেছে।  আমাদের মিত্র প্রতিবেশী ভারতের উপহার ২০ লাখ ডোজ টিকা বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ঘটনার ভেতর দিয়ে টিকা নিয়ে যে দোলাচল ও  সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান হলো। সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে দেশের সবাইকে করোনা টিকা দেওয়া হবে। করোনা আছড়ে পড়ায় গোটা বিশ্ব এক নতুন তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। পৃথিবী থেকে করোনা চলে গেলেও এর ঘা ও দাগ রয়ে যাবে মানুষের মনণে এবং চেতনায়। পৃথিবীব্যাপী লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। এখনো এর রেশ কাটেনি। করোনা ভয়াবহ এক আতঙ্কের নাম। চরম এই দুঃসময়ে মানুষের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে একমাত্র টিকা। পৃথিবীর নানা সময়ে মহামারি কোনো রোগের ত্রাতার ভূমিকায় টিকাকে দেখা গেছে। যদিও টিকা আবিষ্কার দীর্ঘ একটি সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বিশ্ববাসীর ভাগ্য ভালো যে বিগত সময়ে টিকা আবিষ্কারে যে বড় সময় লেগেছে, তার তুলনায় করোনা টিকা আবিষ্কারে বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা দ্রুত সাফল্য দেখিয়েছেন। টিকা আবিষ্কারের সাফল্যে খবরটি শোনার জন্য বিশ্ববাসী চঞ্চলচিত্তে অপেক্ষা করে এসেছে। এখন মানুষের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে জনগণের মধ্যে টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে।

আমাদের আগেই ভারতে টিকা দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এতে ভারতের মানুষের মধ্যে করোনার ভীতি কাটতে শুরু করেছে। আমাদের সরকার ঘোষণা করেছে দেশের ৯ কোটি মানুষের টিকা দেওয়া হবে। সব টিকাই ভারত থেকে আনা হবে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার দেওয়া ২০ লাখ টিকা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো জানায়, ভারত থেকে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন (কোভিশিল্ড) বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী এক অনুষ্ঠানে টিকা হস্তান্তর করেন। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে বিশ্বের যেসব দেশে করোনা টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে, ওইসব দেশে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নিয়ে পরে জনসাধারণে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও সেটাই অনুসরণ করা হবে। গতকাল দেশের মাটিতে ভারতের শুভেচ্ছা উপহার পাঠানো ২০ লাখ টিকা প্রথমে ট্রায়াল দেওয়া হবে। অর্থাৎ কিছু মানুষকে আগে দেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে বহু মানুষকে দেওয়ার আগে সরকার এই মহড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গণমাধ্যমগুলো জানায়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত টিকা দেশে এসে পৌঁছানো দক্ষিণ এশিয়ার ছয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশও একটি। ভারতের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ভারত-বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম ছয় দেশকে টিকা উপহার স্মারক।

টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগকে ‘ট্রায়াল ভ্যাকসিনেশন’ বলছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা জানান, ‘অনেকটা মহড়ার মতোই। ঢাকা শহরের একটা কেন্দ্রে প্রথম দিন টিকা দেওয়া হবে। টিকায় কোন বা কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, টিকা দেওয়া শুরু করলে কোনো সমস্যা হয় কি না, টিকা নিতে আসা লোকজনের মনোভাব, পরিবেশ, জাতীয় টিকা পরিকল্পনা পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করে কি না, ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে এসব দেখা হবে। পরে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনে টিকা পরিকল্পনা সংশোধন করা হবে। এরপরই জাতীয় পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু করা হবে। শুধু ট্রায়াল নয়, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে কাউকে স্বেচ্ছায় রাজি হতে হবে। স্বেচ্ছায় রাজি না হলে টিকা দেওয়া হবে না। জোর করে মানুষকে টিকা দেব না।’

উল্লেখ্য, টিকা নেওয়ার পরে নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার খবর আন্তর্জাতিক ও দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় দেশের মানুষের মনে টিকা নিয়ে একটি ভীতি কাজ করছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা অনেক সচেতন। ট্রায়ালের সুবিধা কী জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানাবিধ কথা হয়। ট্রায়াল করলে সবাই নিশ্চিত হতে পারবে যে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। আমরা জানি যেখানে টিকা দেওয়া হয়, সেখানে ব্যথা হবে, জ্বর হতে পারে, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। এগুলো যেকোনো টিকার ক্ষেত্রেই হতে পারে। এছাড়া আলাদা কিছু হয় কি না, সেটা জানা যাবে। তাড়াহুড়ো না করে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে টিকা শুরু করতে হবে।’ দেশের কিছু মানুষের মধ্যে অহেতুক টিকা নিয়ে নানা গুজব ছাড়ানোর প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারকে এই অতিরঞ্জিত কথাবার্তার একটি জবাব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। একশ্রেণির মানুষ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ কেন আগে পাবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে উষ্মা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশে ভিআইপি নয়, যাদের আগে প্রয়োজন তাদেরকেই করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। গতকাল তেজগাঁওয়ে অবস্থিত জেলা ইপিআই’র স্টোরে ভ্যাকসিন রাখার ব্যবস্থাপনা দেখতে এসে বলেন ‘আমরা চাই, দেশে যাদের প্রয়োজন তাদেরকে আগে দিতে এবং আমাদের দেশের মানুষ ভ্যাকসিন নিতে অভ্যস্ত। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভ্যাকসিন নতুন কিছু না। দেশের মানুষ ভ্যাকসিনে ভয়ও পান না। কাজেই আমরা আশা করি, পর্যায়ক্রমে সবাইকে দিতে সক্ষম হবো।’ দেশবাসীকে গণহারে কখন টিকা দেওয়া হবে, এটাই কিন্তু একটা বড় বিষয়। এটা জানার ব্যাপারে মানুষ কৌতূহলী হয়ে আছে। টিকা একবার নিলে করোনা থেকে ভালোভাবে সুরক্ষা পাওয়া যাবে। করোনা আর জেঁকে বসতে পারবে না। ফলে মানুষ কখন টিকা পাবে এটাই তাদের জানার আগ্রহ। আমরা মনে করি, বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, টিকা প্রয়োগের বিষয়টি সুুষ্ঠুভাবে করে যাবেন। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। টিকা নিয়ে কোনো ধরনে গোলমাল ঘটনা না ঘটে তার জন্য সরকার সচেতন আছে বলে আমরা মনে করি। এবং আমরাও বলতে চাই টিকা নিয়ে কোনো নৈরাজ্য দেখা না দেয় তা সবার কাম্য।

গতকাল গণহারে টিকা প্রয়োগের ব্যাপারে বলেছেন, ‘সারা দেশে টিকা বিতরণ করতে সময় লাগবে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সেরাম থেকে কেনা তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ চলে আসবে। এরপর এই ৭০ লাখ ডোজ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দেওয়া হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ভ্যাকসিন রাখার ওয়ারহাউজ করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দলও চলে যাচ্ছে, তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। আমরা মোটামুটি প্রস্তুত, এখন কেবল সময়ের বিষয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসক ও নার্সসহ সব শ্রেণি-পেশার মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিক সবাইকে নিয়ে এই ট্রায়াল করা হবে। তবে যেহেতু ভ্যাকসিন চলে এসেছে, আমাদের চেষ্টা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ট্রায়াল করে ফেলার পর তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করা।

পরিশেষে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে করোনা টিকা চলে আসায় এটি একটি ভীষণ আনন্দের খবর। দেশে টিকা আনার যে গৌরব তা বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু অনুতাপের বিষয় হলো টিকা প্রয়োগের আগেই কিছু মানুষ একে বিদ্রুপবানে আঘাত করতে চাইছে। তাদের এ মনোবৃত্তি ত্যাগ করা উচিত। ভারত আমাদের পরম বন্ধু রাষ্ট্র। করোনার এই বিপদকালীন টিকা দিয়ে যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ থাকবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]