অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্রে বিরল জোড়া আত্মঘাতী হামলায় । আহত হয়েছে আরও ৭৩ জন। বৃহস্পতিবার দেশটির সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। বলা হয়, গত কয়েক মাস ধরে চলা তুলনামূলক শান্তিপূর্ব পরিবেশের মধ্যেই হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে।
বাগদাদ অপারেশন কমান্ডের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাজেম আল আজজাওয়াই ইরাকি বার্তা সংস্থা আইএনএকে বলেন, তায়ারান স্কয়ারের কাছে জনাকীর্ণ বাব আল সারজি মার্কেটে জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ভয়াবহ এ হামলার পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহহিয়া রাসুল বলেন, সন্দেহ হওয়ায় দুই আত্মঘাতীকে অনুসরণ করছিল নিরাপত্তা বাহিনী। এরমধ্যে বিস্ফোরণ ঘটায় হামলাকারীরা।
আলজাজিরার আবদেলফাত্তাহ ফায়াদ জানান, প্রতিরক্ষা বিভাগ পুরো এলাকা পরিষ্কার করেছে। পানি দিয়ে রক্ত মুছে ফেলেছে। সরিয়ে ফেলেছে ধ্বংসস্তূপ।
তিনি বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৭৩ জন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, অনেক মানুষ আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহতও রয়েছে। তাই মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
ফায়াদ আরও বলেন, দুর্ঘটনার শিকার এলাকায় এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। মার্কেটে মানুষের যাতায়াত শুরু হয়েছে। ব্যস্ত এলাকায় গাড়িও চলছে বিরামহীন।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন শুরুর পর বেশ কয়েক বছর ভয়াবহ সংঘাত চলে দেশটিতে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী বাগদাদে কমে আসে আত্মঘাতী হামলা। সবশেষে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে। নিহত হয় অনেকে।
বিশেষ করে ইরাকের গ্রিন জোনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসহ দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করে নিয়মিত রকেট এবং গোলা হামলা চালিয়ে আসছিল মিলিশিয়ারা। অক্টোবরে ইরান সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠীর অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির পর হামলার পরিমাণ কমে আসে।
বৃহস্পতিবার হামলার দায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ স্বীকার করেনি। সাধারণত এ ধরনের হামলা চালিয়ে থাকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসএস।
তিন বছর ভয়াবহ অভিযানের পর ২০১৭ সালে আইএসকে পরাজিত ঘোষণা করে ইরাক। তবে জঙ্গিগোষ্ঠীটির স্লিপার সেল মরুভূমি-পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের ফেলো এবং ইরাক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাইদ সাজাদ বলেন, ইরাকের জনবহুল এলাকায় আগে বহুবার আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে আইএস। বৃহস্পতিবারের হামলাও তারাই চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাইদ বলেন, এসব হামলা সরকারি বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা প্রমাণ করে। এটা অবশ্যই সতর্ক বার্তা যে আইএস এখনো সক্রিয়। সরকারি স্থাপনা এবং গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের হামলা করছে আইএস।
তিনি আরও বলেন, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি এবং মহামারির কারণে সরকারের প্রতি ইরাকের আস্থা সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় এ হামলা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি আরও প্রকট হবে।