জাতীয় সংসদে নিজের নামে পদ্মা সেতুর নামকরণের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার দলীয় দুজন সংসদ সদস্য পদ্মা সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা সেতু’ করার প্রস্তাব দেন। তবে এতে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রথমে গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ প্রধানমন্ত্রীর নামে পদ্মা সেতুর নামকরণ করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হওয়াই উচিত। এ ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। প্রথমে তিনি হাত নেড়ে এবং পরে মাথা নেড়ে ‘না’ ‘না’ করেন। সংসদ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত অধিবেশন থেকে সেই দৃশ্য দেখা যায়।
এরপর আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথও প্রধানমন্ত্রীর নামে পদ্মা সেতুর নামকরণের প্রস্তাব দেন।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন বলেন, আমি জানি মাননীয় নেত্রী আপনি উদার। আপনি মহানুভবতার মূর্তপ্রতীক। প্রেরণা কোনো দিন প্রকাশ্যে আসে না, প্রেরণা ভেতরে লালন করে। আর অক্সিজেন নিজেকে জড়িয়ে অপরকে আলোকিত করে। আপনি নিজের নামেই পদ্মা সেতু করবেন। ইতিমধ্যে আপনি না করেছেন; কিন্তু আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদের ৩৫০ সংসদ সদস্যকে যদি জিজ্ঞেস করেন, সবাই সমস্বরে বলবেন– আপনার নামে পদ্মা সেতু করার। মাননীয় নেত্রী আপনি বড় হবেন না, আমাদের বড় হওয়ার সুযোগ দেন। আমরাও কৃতজ্ঞতা চিত্তে আপনার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের দায়বদ্ধতা পূরণ করি। এই কারণে যে, আপনি সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা ও কারিগর।
মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনের এ বক্তব্যে বারবার প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে অসম্মতি জানান।
পরে এ বিষয়ে প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মাকে শাসন করে বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এই সেতু নির্মাণ করা। আমি আবারও দাবি জানাই, এই সেতুর নাম হবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বিনয় দিয়ে হয়তো বারবার বলবেন, 'না' আমরা এই প্রজন্মের যারা মানুষ, তারা অকৃতজ্ঞ নই।
তিনি বলেন, যখন বিশ্বব্যাংক ফান্ড প্রত্যাহার করে নিল, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন অন্তরায় সৃষ্টি হলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা সাহস করে বললেন, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাব এবং তিনি এটি সম্ভব করেছেন মাত্র ১২ বছরে। পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ বাস্তবতা। টানা ২০০ বছর দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছয় কোটি মানুষ পাবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বারবার মাথা নেড়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান।