প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৪ পিএম আপডেট: ২১.০১.২০২১ ৪:০৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
পেটে ছুরিকাঘাতের পর ভোট কেন্দ্রেই লুটিয়ে পড়েছিলেন বিজয়ী কাউন্সিলর তরিকুল। মাটিতে রক্ত লেগে থাকা মলিন ওই ধুলোর মতোই অনেকটা হতাশা গ্রাস করেছে তার পরিবারকে। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন কেউই। দ্বিতীয় দফার পৌর নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের শহীদগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর পরই পরাজিত প্রার্থীর ছুরিকাঘাতে খুন হন বিজয়ী প্রার্থী তরিকুল ইসলাম খান। অভিশপ্ত ওই রক্তমাখা প্রাণনাশের বিজয়ই যেন তাদের পরিবারের গলায় পরাজয়ের মালা পরিয়েছে। এখন হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশায় প্রহর গুণছে পরিবারটি। অপরদিকে, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সুবিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি টিএম মোজাহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ ও পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম (বিপিএম)।
এদিকে, ১৭ জানুয়ারি রোববার নিহত তরিকুল ইসলাম খানের ছেলে একরামুল হাসান হৃদয় বাদি হয়ে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাহেদনগর ব্যাপারীপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ও ৬নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন বুদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ৩২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার রাতেই মামলার ২৭নং আসামি স্বপন ব্যাপারীকে শহরের একটি বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়।
এলাকার সচেতন মহল বলছেন, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের বিষয়ে প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাসের উপর আস্থা রেখে কোন কর্মসূচিতে যায়নি এলাকাবাসী। অথচ হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অধরা রয়েছেন মামলার প্রধান আসামি ৬নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন বুদ্দিনসহ অন্য আসামিরা। এতে দিন দিন হতাশা বাড়ছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডসহ শহরবাসীর মধ্যে। যতদ্রুত সম্ভব দোষীদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নিহত তরিকুলের বাড়িতে বুধবার সন্ধ্যার পর গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী হাসি খাতুনের কান্না যেন থামছেই না। বাকরুদ্ধ ছেলে একরামুল হাসান হৃদয় ও মেয়ে তাহিদা জাহান তিজা। শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন স্বজনরা। এসময় খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে হাসি খাতুন বলেন, আমার স্বামীর উপার্জনেই সংসার চলতো। ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছে। ব্যাংক থেকে লোন করে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এসব দেখবে কে?
নতুন ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা ও জেলা আ.লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল বলেন, শাহাদৎ হোসেন বুদ্দিন গত তিনটি পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হলেও প্রতিবারই নতুন ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তিনি কোনবারই জনগণের রায় মেনে নিতে পারেননি। ২০১৬ সালের পৌর নির্বাচনে বুদ্দিন নতুন ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার শাহাদৎ হোসেনের কাছে হেরে যান। পরদিন বুদ্দিনের নেতৃত্বে আমার উপর হামলা করা হয়। তারা আমাকে কুপিয়ে শরীরে ২২টি স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি করে। এর আগের নির্বাচনে আমাদের মহল্লারই আরেক প্রার্থী রাশেদুল হাসান ফসির কাছে হেরে গিয়ে হামলা করে এবারের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ও নিহত তরিকুলের উপর। এসব হামলায় তখন আমরা প্রাণে বেঁচে গেলেও এবার তরিকুলকে ছুরিকাঘাত করে মেরেই ফেলা হলো।
পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক দানিউল হক মোল্লা জানান, নিহত তরিকুলের জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে পৌর আ.লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন অভিযুক্ত ৬নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন বুদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। এটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আ.লীগে কোন অপরাধীর স্থান নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, তরিকুল হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। আমরা আশা করবো এ হত্যাকা-ের সাথে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন তারা। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তরিকুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে। দ্রুতই ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। পুলিশ সুপার মো. হাসিবুল আলম (বিপিএম) বলেন, পুলিশের ৩/৪টি টিম কাজ করছে। আশা করি ২/১ দিনের মধ্যে ভালো কোন খবর দিতে পারবো।