ফরিদপুরে মহাসড়কে বাস উল্টে চারজনসহ পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন মারা গেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে চল্লিশ জনের বেশি। গতকাল বুধবার সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস আইলেনে উল্টে গিয়ে ঘটনাস্থলে দুই মহিলা, এক পুুরুষসহ চার জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া, ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে এক নারী ও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গতকাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কের বগাইল নতুন টোলপ্লাজার নিচে দুরন্ত পরিবহনের একটি বাস আইলেনে উল্টে গিয়ে ঘটনাস্থলে দুই মহিলা, এক পুুরুষসহ তিন জনের মৃত্যু হয়। এসময় ফরিদপুর নেয়ার পথে একজন মহিলার মৃত্যু হয়। এতে মৃতের সংখ্যা ৪ জন এবং নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫ জন যাত্রী। আহতদের মধ্যে সতের জনকে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর ৯ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে- আ. রশিদ মোল্লা (৫৮) বাড়ী চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার পিয়ারাতলা গ্রাম ও নুরজাহান বেগম (৪৫) ঠিকানা জানা যায়নি। এছাড়া বাকি দুইজন মহিলার নাম জানা যায়নি। আহতরা হচ্ছে-সাব্বির (২০), সজিব মালো (২৭), বর্ষা (২০), আজ্ঞাত (২৫), নুরুল আমিন (৪৫), রুপা (৭), আ. ওহিম (১২), আবু হানিফ (৩২), আলেফ সর্দার (৬৫), রফিকুল ইসলাম (৬), জাকির হোসেন (৩১), হোসাইন মোল্লা (৩০), আলআমিন (১৯), মুষ্টি (২৭), ফারুক আলম (৪৬)। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, মোট চারজন মারা গেছে। এছাড়া ৫ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রীবাহী দুরন্ত পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৩১১৪) একটি বাস প্রায় চল্লিশ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে আসেন। ঘটনাস্থলে এসে একাই আইলেন্ডে উঠে গিয়ে উল্টে পড়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সাথে সাথে ভাঙ্গা থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস এর টিম ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার তৎপরতা চালান। সড়কের মাঝখানে গাড়ি থাকায় প্রায় ঘণ্টা খানেক সময়ের মধ্যে সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গাড়িটি সামনের ও ডান পাশের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, গাড়িটি সম্ভবতঃ ঘন কুয়াশায় কারনে না দেখে আইলেন্ডে উঠে গিয়ে গাড়িটি উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুইজনের নাম জানা গেছে। লাশের আত্মীয় না আসা পর্যন্ত হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। এপর্যন্ত ঘটনাস্থলে তিনজন ও ফরিদপুর নেয়ার পথে এক জন নিহত হয়েছে। আত্মীয় স্বজন আসলে মামলা নেযা হবে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় এক নারী নিহত, আহত ৫-ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে এক নারী নিহত ও সিএনজি ড্রাইভারসহ অপর ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ত্রিশাল-বালিপাড়া সড়কের শেখ বাজারের মোড়ে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,শালবন পরিবহণের একটি দ্রুতগতির বাস যাত্রী বোঝাই সিএনজিটিকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিলে সিএনজিটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজি যাত্রী ফাতেমা ( ৫০) মারা যান। সিএনজির ড্রাইভারসহ অপর ৫ জন গুরুতর আহত হন। নিহত ফাতেমা ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার ভাটির চর নওপাড়া গ্রামের উসমত আলীর স্ত্রী। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আশংকাজনক অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উখিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-১-কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর আহত ৫ জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে উখিয়ার হিজোলীয়ার পালং গার্ডেন এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। গুরুতর আহত রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল গ্রামের জাফর আলমের ছেলে এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী তছলিমা আক্তার রোমানার ছোট ভাই এহসানুল হক মিসেল (২৩) কে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে গতকাল বুধবার ভোর রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তছলিমা আক্তার রোমানা। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুটি মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫জন গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা আশংকাজনক দেখে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে মিশেলের অবস্থার খারাপের দিকে গেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মৃত্যু বরণ করেন।
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রাক্টর ও কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর জখম দুইজন-রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রাক্টর ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে সোনিয়া খাতুন (১৭) ও সেলিম (৩২) নামের গুরুতর দুই জন জখম হয়েছে। গুরুতর জখম সোনিয়া খাতুন পুঠিয়া পৌরসভার ঝলমলিয়া এলাকার নয়নের মেয়ে অপর গুরুতর জখম সেলিম উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামের মিছু মিয়ার ছেলে। মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে সাতটার সময় ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের নজরুল প্রফেসারের ডালমিল নামক স্থানে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া ত্রিমোহনী মোড় হতে একটি খালি ট্রাক্টর তেল নেওয়ার জন্য খান ফিলিং স্টেশনে যাওয়ার সময় ঢাক-রাজশাহী মহাসড়কের পুঠিয়া ডাল মিলে পৌঁছানো মাত্রই বিপরীতগামী একটি প্রাইভেট কারের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। এ সময় কারে থাকা সোনিয়া খাতুন গুরুতর জখম হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।এছাড়াও ট্রাক্টরের ড্রাইভার সেলিমের ডান পায়ের পাতা থেঁতলে যায়। খবর পেয়ে পুঠিয়া ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা তাদেরকে উদ্ধার করে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার আশঙ্কা জনক অবস্থায় সোনিয়াকে এবং গুরুতর জখম সেলিমকে রামেক হাসপাতালে প্রেরণ করে।
নবীগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক বসত ঘরে-নবীগঞ্জ উপজেলার আঞ্চলিক সড়কের আক্রমপুর এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসত ঘরে উঠে যাওয়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় মা মেয়েসহ আহত হয়েছে ২ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে টায়। আহতরা হলেন- আক্রমপুর গ্রামের বাসিন্দার নিশু মালাকারের স্ত্রী উজ্জলা মালাকার (৩৫) ও তার মেয়ে প্রমি মালাকার (১৭)। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার ভোরে নবীগঞ্জগামী একটি পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আক্রমপুর এলাকায় এ এল এম মাহবুব চৌধুরী বসত ঘরে ডুকে পড়ে। দুর্ঘটনার পর পরই ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। গাড়ির নাম্বার ঢাকা মেট্রো ট -১৮ ৫৬ ৮৭। নিশু মালাকার জানান, এ এম এল মাহবুব চৌধুরীর বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। সকালে দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে বাড়িতে এসে দেখেন ঘরের প্রায় সব আসবাপত্র ভাঙচুর হয়েগেছে ও তার স্ত্রী সন্তান আহত। তিনি ক্ষতিপূরণসহ অদক্ষ চালক ও হেলপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জনান। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার এসআই অমিতাভ একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।