প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৪ পিএম আপডেট: ২১.০১.২০২১ ৪:১৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরও ৮ জন মারা গেছে। যা গত সাড়ে আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গতকাল বুধবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সর্বশেষ গতবছরের ৮ মে এর চেয়ে কম মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর ৯ মে আটজনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। এই রোগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ৬৫৬ রোগী। এরপর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা দুই অঙ্কের ঘরেই ছিল মৃত্যু।
গতকাল ১৯ জানুয়ারির আগের ২৪ ঘণ্টায় কুড়ি জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে। তার আগে ১৫ জানুয়ারি ছিল সর্বনিম্ন ১৩ জন। তবে জুন মাসের ৩০ তারিখ ছিল সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু। যার সংখ্যা ছিল ৬৪ জন। একদিনে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে কখনোই মারা যায়নি। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ৬৫৬ জনকে নিয়ে দেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৬৮৭ জন রোগী। এদিকে, গত একদিনে মারা যাওয়া ৮ জনসহ দেশে করোনায় সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৫০ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও ২ হাজার ১১৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭২ জন হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম করে যায়। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর এই মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান। শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসের শেষের দিক থেকে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এদিকে, বিশ্ব করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩০তম স্থানে এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে বিভিন্ন ১১৫টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৮টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৫৬টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে, অর্থাৎ সর্বমোট ১৯৯টি ল্যাবে ১৫ হাজার ৪৫৯টি নমুনার এসব পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ওই পরীক্ষাগারে ১৩ হাজার ৬৯৫টি নমুনা পলীক্ষা করা হয়। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬৭টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০টি, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৭ লাখ ৫৩ হাজার ২৪৭টি। তাদের মধ্যে ৮ জনই পুরুষ। মৃতদের মধ্যে ৮ জন হাসপাতালেই মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আর বয়সের হিসেবে ষাটোর্ধ্ব লোকের সংখ্যা বেশি। যেখানে ৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে জানা গেছে। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৭ হাজার ৯৫০ জনের মধ্যে ৬ হাজার ২৬ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৯২৪ জন নারী। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩৮৬ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ২ হাজার জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯১৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৩৯২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৬১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬০ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৬ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম। আর বিভাগী হিসেবে ঢাকা বিভাগে সব চেয়ে বেশি। যেখানে মৃতদের মধ্যে ১২ জন ঢাকা বিভাগের, ৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২ জন খুলনা বিভাগ, ২ জন রংপুর বিভাগ এবং ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের রোগী ছিলেন বলে জানা গেছে। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি পুরুষ মারা গেছে। যেখানে ৪ হাজার ৪১৩ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৪৫৮ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৫৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৪৪ জন খুলনা বিভাগের, ২৪০ জন বরিশাল বিভাগের, ৩০১ জন সিলেট বিভাগের, ৩৫৪ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৮৬ জন ময়মনসিংহ বিভাগের রোগী ছিলেন।