সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত হোক
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৫০ এএম আপডেট: ২১.০১.২০২১ ৩:২২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শরণার্থী রয়েছে। মিয়ানমারে এদের প্রত্যাবাসনে একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মাথার ওপর বোঝা হয়ে থাকা এইসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসনের কাজ যতদ্রুত সম্পন্ন করা যায়, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক। মিয়ানমারের অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ক-বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এই ঢল বাংলাদেশ সরকার খুব সহজেই থামিয়ে দিতে পারতো, কিন্তু মানবিক কারণে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা করেননি। তিনি মানবিকতা দেখিয়ে অসহায়, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেন। এ জন্যে বিশ্বসম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদার মানবিক পরিচয় পেয়ে অভিনন্দন জানান। মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা বাস্তুছাড়া শরণার্থীদের সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় দিলেও মিয়ানমারকে তার নিজ দেশের এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়াটা একান্ত আবশ্যক।

এ নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা এবং ছলনার আশ্রয় নেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে না। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বিশ্বসম্প্রদায়কে বলে আসছিল যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসনে রাজি করিয়ে এ ব্যাপারে দৃঢ়পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু মিয়ানমার  রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যথাযথভাবে এগিয়ে আসেনি। তারা বারংবার টালবাহানার পথ খুঁজে নেয়। এতে বাংলাদেশ ক্রমশ হতাশ হতে থাকে। বাংলাদেশের হতাশ হওয়ার বহুবিধ কারণযুক্ত। ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভরণপোষণ বাংলাদেশকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের নাভিশ্বাস উঠেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। বস্তুত এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আর  অবস্থান করতে দেওয়া মোটেই সম্ভবপর নয়। তবে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সবসময় চেয়েছেন যতদ্রুতগতিতে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, ততই সমস্যার সুরাহা হবে। এতদিন বিশ্ব সম্প্রদায়ের অনেকেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিষয়টি দ্রুত হওয়ার ব্যাপারে একমত থাকলেও মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের কারণে মিয়ানমার এ নিয়ে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে আসছিল তা স্পষ্ট।

অবশেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশে আশার আলো দেখছে। এবার হয়তো মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ায় আর কোনো ছলচাতুরি করবে না। গতকাল দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ বছরের মাঝামাঝি থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে মিয়ানমার চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রত্যাবাসন শুরু করতে মত দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক সম্পর্কে আরও বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বছরের মাঝামাঝিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যেতে পারে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ চাইছে গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক প্রত্যাবাসন।

অন্যদিকে মিয়ানমার বলছে, এখন পর্যন্ত যতজনকে তারা যাচাই-বাছাই করেছে সেটি দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে। বিষয়টি সমাধানের জন্য চীন মিয়ানমারকে প্রভাবিত করে কি না তার ওপর বাংলাদেশ অনেকাংশে নির্ভর করছে। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমার আরও সময় চাচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘এর আগে যেহেতু দুটি ডেট দিয়ে আমরা সফল হতে পারিনি, এখন সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে সফল হওয়া যায় সেই চেষ্টাই থাকবে বাংলাদেশের।’ উল্লেখ্য, ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে গত মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন। চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুও জাওহুইয়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উপমন্ত্রী হাউ দো সুয়ান। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বছরের প্রথম কোয়ার্টারে আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বছরের মাঝামাঝিতে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে তাদের জাতীয় সংসদে সভা থাকার কারণে এই সময় দিয়েছে তারা। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ঠিক কী প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হবে তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে চীনের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে যেসব রোহিঙ্গা যাবে তাদের চীনের পক্ষ থেকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা খুব সিনসিয়ারলি এঙ্গেজড থাকব। কারণ এখন অনেকগুলো বিষয় আছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রত্যাবাসনের কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’ পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কশাসলি অপটিমিস্টিক, আমাদের ডিপ্লোম্যাটিক ভাষায় বলে আমরা চেষ্টা করে যাব, উইথ অল আওয়ার হার্ট অ্যান্ড সউল।’

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যেসব সিদ্ধান্ত হয় তা সঠিকভাবে অনুসৃত হয় তার সবমহলকেই সজাগ থাকতে হবে। তবে আমরা আশা করতে পারি চীনের মধ্যস্ততা এতে থাকায় মিয়ানমার সরকার এবার হয়তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পিছুটান দেবে না। এ ব্যাপারে চীনকেও সজাগ থাকতে হবে। চীনকে এ ব্যাপারে মনে রাখাটা একান্তভাবে জরুরি যে, ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ একটি জটিল পরিস্থিতির আবর্তে পড়েছে। এতে দেশের উন্নয়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গারা। বিস্ফোরণমুখ রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশ প্রচ- হুমকির মুখে পড়েছে। চীন আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র এবং আমাদের উন্নয়নকর্মযজ্ঞের অন্যতম অংশীদার। ক্রমশ বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যে বাণিজ্যিক ও সৌহার্দ্য সম্পর্ক গড়ে উঠছে তা চীন যেমন অস্বীকার করতে পারবে না, বাংলাদেশের পক্ষেও সম্ভব নয়। তাই চীনের কাছে বাংলাদেশের অনেক প্রত্যাশা থাকতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বাস্তুচূত্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের সাহায্য-সহযোগিতা ও  সহায়তা বিশেষ প্রয়োজন এটা বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই আশা করে আসছেন।

শেষ অবধি চীন এ ব্যাপারে এগিয়ে আসায় চীনের প্রতি বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে সব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ঐকান্তিকতার পরিচয় দিয়ে নিজেদের হতগৌরব উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে। নিজ দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাস্তুচূত্য করে মিয়ানমার যে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে তা নিশ্চিতভাবে পুনরুদ্ধার হবে, যতদ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে।




« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]