প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ২:১৭ এএম আপডেট: ১৯.০১.২০২১ ১:০২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
আগামীকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার কথা। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাড়ছে উত্তেজনা। এরই মধ্যে সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থকরা দেশটির রাজ্যপরিষদগুলোর কাছে বিক্ষোভ করেছে। ফলে শান্তিপূর্ণভাবে বাইডেনের শপথনুষ্ঠান নিয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও দেশটির নিরাপত্তা বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে যেকোন ধরনের অরাজকতা বন্ধে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এরপরেও বিশ্লেষক মহল চলমান অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে এই আশঙ্কা অনেকটাই স্পষ্ট বলে তারা মনে করেন।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটলে সৃষ্ট দাঙ্গায় পাঁচ জন নিহত হওয়ার পর গত রোববার রাজ্যপরিষদগুলো ঘিরে সশস্ত্র প্রতিবাদের ডাক দেয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা, এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এদিন টেক্সাস, ওরেগন, মিশিগান, ওহাইও ও অন্যান্য স্থানে রাজ্য ক্যাপিটল ভবন বা আইনপরিষদগুলোর সামনে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আইনপরিষদগুলো ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করায় অন্য অনেক রাজ্যের পরিস্থিতি শান্ত ছিল বিদেশি গণমাধ্যম জানিয়েছে। তাবে আগামীকাল বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান কতটা নির্বিঘœ করা যাবে সে সন্দেহ রয়ে গেছে। এই সন্দেহের পালে বাতাস দিয়েছে গত রোববার দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে। যদিও এফবিআই আগেই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছিল।
সতর্কতার কারণে সহিংস প্রতিবাদের আশঙ্কায় বহু নগর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল, সড়কগুলোতে অবরোধ বসিয়ে হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করেছিল। অনলাইনে ট্রাম্পপন্থি ও কট্টর ডানপন্থি নেটওয়ার্কগুলোর করা পোস্টে ১৭ জানুয়ারি (রোববার) সশস্ত্র বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু এসব কর্মসূচির ডাক পুলিশের ফাঁদ হতে পারে এবং কঠোর নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী অনুসারীদের এগুলোতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলে। শেষ পর্যন্ত অল্পসংখ্যক প্রতিবাদকারী যাদের সংখ্যা কয়েক ডজন হবে কয়েকটি শহরে জড়ো হয়, ফলে বহু রাজ্যপরিষদের চারপাশের সড়কগুলোর অধিকাংশই ফাঁকা ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওহাইওর কলম্বাস শহরে রাজ্যপরিষদের সামনে ব্যাপক অস্ত্র সজ্জিত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বুগালু বোয়িস মুভমেন্টের প্রায় ২৫ জন সদস্য ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে উৎখাত করতে চাওয়া শিথিলভাবে সংগঠিত এই গোষ্ঠীটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করা ‘বন্দুক রাখার অধিকার’ বিষয়ক সমাবেশে যোগ দিতে এখানে এসেছেন। এদিকে মিশিগানে প্রায় দুই ডজন লোক, যাদের কয়েকজন রাইফেল বহন করছিলেন, লান্সিংয়ে রাজ্যপরিষদের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে; এ সময় পুলিশ তাদের ওপর সতর্ক নজর রেখেছে। এখানে এক প্রতিবাদকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি এখানে সহিংসতা করতে আসিনি আর কেউ সহিংসতা দেখাবে না বলে আশা করছি।’ অস্টিনে টেক্সাসের ক্যাপিটল ভবনের সামনেও প্রায় এক ডজনের মতো প্রতিবাদকারী দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের কয়েকজনের কাছে রাইফেল ছিল। হারিসবার্গে পেনসিলভেইনিয়ার ক্যাপিটলের সামনে ট্রাম্পের একজন সমর্থক স্বল্প উপস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে কিছুই হচ্ছে না।’ বাইডেনের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের দিনটিতে আরও প্রতিবাদ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিন ট্রাম্পের স্থলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বাইডেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক সামনে রেখে ওয়াশিংটন ডিসির অধিকাংশ এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। রাজধানীতে প্রচুর ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সিক্রেট সার্ভিসের অনুরোধে ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মল বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাইডেনের টিম যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে রাজধানীতে না আসার আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়রসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা জনগণকে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান দূর থেকে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। এসব নির্বাহী আদেশ দিতে অভিষেকের দিনই ব্যস্ত সময় কাটবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের।