প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ২:১৭ এএম আপডেট: ১৯.০১.২০২১ ১:০৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরও ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই রোগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৯৭ জন। গতকাল সোমবার বিকালে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ৬৯৭ জনকে নিয়ে দেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩২৯ জন। এদিকে, গত একদিনে মারা যাওয়া ১৬ জনসহ দেশে করোনায় সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯২২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও ৭৩৬ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৩ জন হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম করে। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর এই মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান। শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসের শেষের দিক থেকে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল।
এদিকে, বিশ্ব করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৯তম স্থান দখল এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে বিভিন্ন গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৫টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৮টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৫৬টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে অর্থাৎ সর্বমোট ১৯৯টি ল্যাবে ১২ হাজার ৭০৭টি নমুনার এসব পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ওই পরীক্ষাগারে ১৩ হাজার ৬৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৮টি নমুনা। সেই হিসেবে শনাক্ত রেটে সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুস্থতার হার ভালো দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫ লাখ ২ হাজার ৩৬৬টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮২টি। গত একদিনে যারা মারা গেছেন, পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম হয়েছে। যেখানে ১৪ জন পুরুষ আর নারী ৬ জন।
এদের ১৯ জন হাসপাতালে এবং এক জন বাড়িতে মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিশ্বে শনাক্ত করোনায় রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে সাড়ে ৯ কোটি পেরিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ লাখ ৩১ হাজার। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ লাখ ২৭ হাজার ১১৮টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪২টি। গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ আর নারী ৪ জন। তাদের সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।
মৃতদের মধ্যে ১১ জন ঢাকা বিভাগের, ৩ জন চট্টগাম বিভাগের এবং ১ জন করে মোট ২ জন রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের রোগী ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৭ হাজার ৯২২ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৪ জনই পুরুষ এবং ১ হাজার ৯১৮ জন নারী। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩৬৬ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়াও ১ হাজার ৯৯৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯১৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৩৯১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৬১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬০ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৬ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৯৫ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৪৫১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৫২ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৪৩ জন খুলনা বিভাগের, ২৪০ জন বরিশাল বিভাগের, ৩০১ জন সিলেট বিভাগের, ৩৫৪ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৮৬ জন ময়মনসিংহ বিভাগের রোগী ছিলেন। জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছে, টিকা না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল উপায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা শতভাগ নিশ্চিত করা। সাথে সাথে কিছু সময় পরপর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার বিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মার প্রবণতা যেভাবে চলছে তা খুবই চিন্তার বিষয়। এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।